কাজ, ক্ষমতা,শক্তি (work,power and energy)

 কাজঃ কোনো বস্তুর উপর একটি বল ক্রিয়া করায় বস্তুটির যদি সরণ ঘটে ,তাহলে বল এবং বলের দিকে সরণের উপাংশের গুনফল্কে কাজ বলা হয়।

ক্ষমতাঃ কোনো উৎস বা ব্যক্তি একক সময়ে যে পরিমাণ কাজ সম্পাদিত করতে পারে ,তাকে ঐ উৎস বা ব্যক্তির ক্ষমতা বলা হয়।
সংজ্ঞাঃ কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলা হয়। অর্থাৎ একক সময়ে মোট কাজকে ক্ষমতা বলা হয়।

শক্তি ঃ কোনো ব্যক্তি,বস্তু বা পদার্থের কাজ করার সামর্থ্য ক্ষমতাকে এর শক্তি বলে । একটি বস্তু এই শক্তি তার আপেক্ষিক অথবা পারিপাশ্বিক অবস্থা বা অবস্থানের সাপেক্ষে অথবা গতির দরুন অর্জন করতে পারে ।বিশেষ অবস্থায় বস্তু মোট যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে ,তা দ্বারাই শক্তি পরিমাপ করা হয়।যার কাজ করার সামর্থ্য যত বেশি তার শক্তিও তত বেশি।

সূচীপত্র : কাজ, ক্ষমতা,শক্তি

৮ম অধ্যায়ঃ কাজ, ক্ষমতা,শক্তি
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
০১. অশ্বক্ষমতা বলতে কী বুঝায়?
০২. জুল ও আর্গের মধ্যে সর্ম্পক লেখ।
০৩.কাজের সংজ্ঞা দাও। কাজের মাত্রা সমীকরণ কী?
০৪. “কোন ইঞ্জিনের কার্মদকক্ষতা ৭০%”- এর অর্থ কী?
০৫. এস আই পদ্ধতিতে কাজের এককের সংজ্ঞা দাও।
০৬. কর্মদক্ষতার সমীকরণ কী?
০৭. কোন ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা ৩৫% এর  অর্থ কী ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
০৮. গতিশক্তি কাকে বলে? এটার সমীকরণ কী?
০৯.শক্তির নিত্যতা সূত্র বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১০. শক্তির নিত্যতা সূত্র বর্ণনা কর। পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমান কর। 
১১. দেখাও যে, পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যে পরিমাপ স্থিতিশক্তি হারাবে টিক তত পরিমাণ গতিশক্তি উৎপন্ন হবে। 
৮ম অধ্যায়ঃ কাজ, ক্ষমতা,শক্তির প্রশ্নোত্তর
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
০১. অশ্বক্ষমতা বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ প্রতি সেকেন্ডে 550 ফুট-পাউন্ড কাজ করার ক্ষমতাকে এক অশ্বক্ষমতা বলে।

০২. জুল ও আর্গের মধ্যে সর্ম্পক লেখ।
উত্তরঃ 1 জুল = 1 নিউটন × 1 মিটার
                       = 105 ডাইন × 100 সেমি
                       = 105 × 102 × 1 ডাইন × 1 সেমি
                       = 107 আর্গ

০৩.কাজের সংজ্ঞা দাও। কাজের মাত্রা সমীকরণ কী?
উত্তরঃ কোনো বস্তুর উপর একটি বল ক্রিয়া করায় বস্তুটির যদি সরণ ঘটে তবে বল ও বলের দিকে সরণের উপাংশের গুণফলকে কাজ বলে।
[ W ] = [ ML2 T-2 ]

০৪. “কোন ইঞ্জিনের কার্মদকক্ষতা ৭০%”- এর অর্থ কী?
উত্তরঃ কোনো ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা 60% বলতে বুঝায় যে, যদি যন্ত্রে 100 একক শক্তি দেয়া হয়, তাহলে ঐ যন্ত্র হতে লভ্য কার্যকর শক্তি 60 একক হবে।

০৫. এস আই পদ্ধতিতে কাজের এককের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ SI পদ্ধতিতে কাজের একক জুল ।
কোনো বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগ করলে যদি বলের অভিমুখে এক মিটার সরণ ঘটে, তবে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এক জুল বলে।

০৬. কর্মদক্ষতার সমীকরণ কী?
উত্তরঃ কর্মদক্ষতা, n = লভ্য কার্যকর শক্তি/মোট প্রদত্ত শক্তি × 100% 

০৭. কোন ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা ৩৫% এর অর্থ কী ?
উত্তরঃ কোনো ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা 35% বলতে বুঝায় যে, যদি যন্ত্রে 100 একক শক্তি দেয়া হয়, তবে ঐ যন্ত্র হতে লভ্য কার্যকর শক্তি 35 একক হবে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
০৮. গতিশক্তি কাকে বলে? এটার সমীকরণ কী?
উত্তরঃ সংজ্ঞাঃ কোনো গতিশীল বস্তু গতির জন্য যে শক্তি লাভ করে, তাকে তার গতিশক্তি বলে।
ব্যাখ্যাঃ মনে করি , m ভরের একটি বস্তু v গতিতে চলছে।
ধরি, একটি ধ্রুবক বল F-এর গতিতে বাধা সৃষ্টি করায় a মন্দনের জন্য তা s দূতত্বে গিয়ে থেমে যায়। তাহলে গতির সমীকরণ অনুসারে,
(v’)2 = v2 – 2as
বা, 0 = v2 – 2as
বা, as = v2/2 --------------(i)
আমরা জানি, কোনো বস্তু থামার পূর্বপর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে, তাই গতিশক্তি।
؞ গতিশক্তি= বল × দূরত্ব
K.E. = F × s                   [﮹F = ma ]
        = mas
        = m × v2/2 [ (i) নং সমীকরণ থেকে ]
K.E. = ½ mv2
এটাই গতিশক্তির গাণিতিক সমীকরণ।
আবার , K.E ∞ v2
যেহেতু ½m একটি ধ্রুব সংখ্যা, সংখ্যা , সুতরাং নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তুর গতিশক্তি তার বেগের বর্গের সমানুপাতিক।

০৯.শক্তির নিত্যতা সূত্র বর্ণনা কর।
উত্তরঃ প্রকৃতিতে দেখা যায় যে, শক্তিকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায় মাত্র। শক্তি যখন এক রূপ থেকে পরিবর্তন করা হয়, তখন শক্তির কোনো ক্ষয় হয় না। প্রকৃতপক্ষে, আমরা নতুনভাবে কোনো শক্তি উৎপন্ন করতে পারি না অথবা ধ্বংস করতে পারি না। এ বিশ্বের সৃষ্টিলগ্নে মোট শক্তির কোনো পরিবর্তন হয় নি। পদার্থ যেমন অবিনশ্বর তেমনি শক্তি অবিনশ্বর-এটাই শক্তির নিত্যতা সূত্র।

রচনামূলক প্রশ্নউত্তরঃ
১০. শক্তির নিত্যতা সূত্র বর্ণনা কর। পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমান কর।
উত্তরঃ প্রকৃতিতে দেখা যায় যে, শক্তিকে এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায় মাত্র। শক্তি যখন এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করা হয়, তখন শক্তির কোনো ক্ষয় হয় না। প্রকৃতপক্ষে , আমরা নতুনভাবে কোনো শক্তি উৎপন্ন করতে পারি না অথবা ধ্বংসও করতে পারি না। এ বিশ্বের সৃষ্টিলগ্নের মোট শক্তির কোনো পরিবর্তন হয় নি। পদার্থ যেমন অবিনশ্বর তেমনি শক্তিও অবিনশ্বর-এটাই শক্তির নিত্যতা সূত্র।
বিবৃতিঃ শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, শক্তি কেবল এক রূপ হতে এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তন হতে পারে এবং রূপান্তরের আগে ও পরে মোট শক্তির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে।
পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে শক্তির নিত্যতা সূত্রের প্রমাণঃ
মনে করি, m ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে ভূপৃষ্ট হতে h উচ্চতায় A বিন্দুতে উঠানো হলো। A বিন্দুতে বস্তুটি স্থির অবস্থায় রয়েছে। এর সমস্ত শক্তিই স্থিতিশক্তি, যার পরিমাণ = mgh এবং গতিশক্তি = 0 ।
                                           স্থিতিশক্তি = mgh
                                            গতিশক্তি = 0
                                          মোট শক্তি = mgh + 0
                                                            = mgh
অতএব, A বিন্দুতে বস্তুটির মোট শক্তি = mgh + 0 = mgh .............................(i)
মনে করি, বস্তুটি A বিন্দু হতে নিচেই পড়তে লাগল। বস্তুটি যত নিচের দিকে পড়তে থাকবে এর স্থিতিশক্তি, গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।
ধরি, বস্তুটি কোনো একটি নিদিষ্ট মুহূর্তে x দূরত্ব অতিক্রম করে B বিন্দুতে পৌছাল এবং উক্ত বিন্দুতে বস্তুটির বেগ, v ।

؞ v2 = u2 + 2gx
       = 2gx           [﮹u = 0]                                     
؞ B বিন্দুতে বস্তুটির গতিশক্তি = ½ m v2 = ½ m×2gx = mgx
B বিন্দুতে বস্তুটির স্থিতিশক্তি = mg (h-x) = mgh – mgx
B বিন্দুতে বস্তুটির মোট শক্তির পরিমাণ = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
                                                               = mgh – mgx + mgx 
                                                               = mgh. --------------------(ii)
সমীকরণ (i) ও (ii) নং হতে দেখা যায় যে, পড়ন্ত বস্তুর মোট শক্তির পরিমাণ একই রয়েছে।
যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সূত্র (Conservation law of mechanical energy) :
বিবৃতিঃ মোট যান্ত্রিক শক্তির পরিমাণ স্থির। এটি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না শুধুমাত্র রূপান্তর করা যায়।
প্রমাণঃ আমরা জানি,
মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি
তাই,মোট শক্তি =½ m2x2 + ½ m2 (A2 – x2)
                         = ½ m2x2 + ½ m2A2 – ½ m2x2
                         = ½ m2A2
কিন্তু, কণার গতি পথের মধ্যবর্তী স্থানে মোট সরণ না থাকায় x = 0 বলে,
মোট শক্তি = ½ m2x2 + ½ m2 (A2 – X2)
                  = ½ m2x2 + ½ m2A2 – ½ m2x2
                  = 0 + ½ m2A2 – 0
                  = ½ m2A2
আবার, শেষ অবস্থানে কোনো গতিশক্তি থাকবে না বরং সরণ সর্বোচ্চ x = A হবে। তাই,
মোট শক্তি = ½ m2x2 = ½ m2A2
অর্থাৎ, যান্ত্রিক শক্তি সর্বত্রই সমান বা স্থির।

১১. দেখাও যে, পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যে পরিমাপ স্থিতিশক্তি হারাবে টিক তত পরিমাণ গতিশক্তি উৎপন্ন হবে।
উত্তরঃ মনে করি, m ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে ভূমি থেকে অভিকর্ষজ ত্বরণের বিরূদ্ধে খাড়া h উচ্চতায় A বিন্দুতে উঠিয়ে স্থির রাখা হলো। A অবস্থানে বস্তু কর্তৃক মোট স্থিতিশক্তির পরিমাণ
                                                        = বল × উচ্চতা = F × h
                                                         = mgh                   [ ﮹ F = mg ]
এখন বস্তুটিকে A বিন্দু হতে মুক্তভাবে নিচে পড়তে দেয়া হলে গতিশক্তির সৃষ্টি হবে। বস্তুটি যত নিচের দিকে নামতে থাকবে অভিকর্ষ বলের বেগ ততই বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ স্থিতিশক্তি, গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।
                          স্থিতিশক্তি = mgh
                          গতিশক্তি = 0
                         মোট শক্তি = mgh + 0
                                           = mgh
ধরা যাক, বস্তুটি A বিন্দু হতে অভিকর্ষের প্রভাবে x দূরত্বে অতিক্রম করে B বিন্দুতে পৌছাল। B বিন্দুতে বস্তুটির স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তি উভয় থাকবে। বস্তুটি ভূমি থেকে (h - x) উচ্চতায় রয়েছে।
    এখন B বিন্দুতে স্থিতিশক্তি = mg (h -x) = mgh - mgx.
    পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে, V2 = u2 + 2gs
    এখানে আদিবেগ, u = 0; অতিক্রান্ত, s = x  
                                 ؞V2 = 2gx
    ؞ B বিন্দুতে গতিশক্তি = ½ mv2 = ½ m (2gx) = mgx
    ؞ B বিন্দুতে মোট শক্তি = mgh – mgx + mgx
                                        = mgh
অর্থাৎ, A বিন্দু হতে B বিন্দুতে যতটুকু স্থিতিশক্তি হারাল ঠিক ততটুকু গতিশক্তি উৎপন্ন হলো।
অতএব বলা যায়, বস্তু যে পরিমাণ স্থিতিশক্তি হারাল ঠিক সম্পরিমাণ গতিশক্তি উৎপন্ন হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url