তরঙ্গ (wave)

 তরঙ্গঃ যে আন্দোলন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের কণাগুলোর পর্যাবৃত কম্পনের সাহায্যে এক স্থান হতে অন্যস্থানে শক্তির প্রবাহ ঘটায় কিন্তু কণাগুলোর স্থানান্তর ঘটায় না ,তাকে তরঙ্গ বলা হয়।

তরঙ্গ গতিঃ যে পদ্ধতিতে কোনো তরঙ্গ একক সময়ে অবস্থান পরিবর্তন করে তাকে তরঙ্গ গতি বলা হয়। 

সূচীপত্র : তরঙ্গ 

১২ তম অধ্যায়ঃ তরঙ্গ 
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
০১. তরঙ্গ কী?
০২. তরঙ্গগতি কী?
০৩. তরঙ্গদৈর্ঘ্য কী?
০৪. দোলন কাল কী?
০৫. অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ লেখ।
০৬. বিট কী?
০৭. “ প্রতি সেকেন্ড ৫টি বিট তৈরী হয়”-এটি বলতে কী বুঝ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
০৮. অনুপ্রস্থদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কী ব্যাখ্যা কর। 
০৯. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কী ব্যাখ্যা কর।
১০. অগ্রগামী তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য লেখ।
১১. আড় তরঙ্গ ও লম্বিক তরঙ্গের মাঝে পার্থক্য লেখ।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১২. অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ বের কর। 
১২ তম অধ্যায়ঃ তরঙ্গ ও শব্দ এর প্রশ্নোত্তর
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
০১. তরঙ্গ কী?
উত্তরঃ কোনো স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে কণাসমূহ স্থানান্তরিত না হয়ে যদি শুধুমাত্র শক্তি স্থানান্তর করে, তবে তাকে তরঙ্গ বলে।

০২. তরঙ্গগতি কী?
উত্তরঃ তরঙ্গ একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে তরঙ্গগতি বলে।

০৩. তরঙ্গদৈর্ঘ্য কী?
উত্তরঃ পর্যায়কালে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে।

০৪. দোলন কাল কী?
উত্তরঃ পূর্ণকম্পন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে, তাকে দোলনকাল বা পর্যায়কাল বলে।

০৫. অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ লেখ।
উত্তরঃ y = a sin 2ꯚ/𑃝 (vt ± x)

০৬. বিট কী?
উত্তরঃ প্রায় সমান কম্পাঙ্ক ও তীব্রতার দুটি শব্দ তরঙ্গ একই দিকে গতিশীল হলে শব্দের পর্যায়ক্রমিক তীব্রতার হ্রাস- বৃদ্ধিকে বিট বলে।

০৭. “ প্রতি সেকেন্ড ৫টি বিট তৈরী হয়”-এটি বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ প্রতি সেকেন্ডে ৫টি অর্থাৎ উৎসদ্বয়ের মাঝে ৫টি কম্পাঙ্ক সৃষ্টি হয়।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
০৮. অনুপ্রস্থদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কী ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গ গতির অভিমুখে সমকোণে কম্পিত হলে সেই তরঙ্গকে আড় তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে।
ব্যাখ্যাঃ চিত্রে একটি অনুপ্রস্থ তরঙ্গ দেখানো হয়েছে তরঙ্গের উপরে ছোট ছোট তীর চিহ্ন দ্বারা কণার কম্পনের অভিমুখ দেখানো হয়েছে। চিত্রে A ও E বিন্দু দুটি হল তরঙ্গশীর্ষ বা তরঙ্গচূড়া (Crest)। C বিন্দু হলো তরঙ্গপাদ বা তরঙ্গখাজ (Trough)।                                               চিত্রঃ পেজ- ২২৪
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ

০৯. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ কী ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গ গতির অভিমুখে সমকোণে কম্পিত হতে থাকলে, সেই তরঙ্গকে লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে।
ব্যাখ্যাঃ নিম্নের চিত্রে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গপ্রবাহ দেখানো হয়েছে। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গএর ক্ষেত্রে মাধ্যমের কণাগুলো সাম্যাবস্থস্নের উভয় পার্শ্বে তরঙ্গের গতিপথের সমান্তরালে কম্পিত হয়, ফলে তরঙ্গশীর্ষ সৃষ্টি হয় না। এক্ষেত্রে কম্পনের সময় কিছু কিছু স্তানে কণাগুলো কাছাকাছি চলে আসে আবার কোথাও দূরে সরে যায়। ফলে মাধ্যমের সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গপ্রবাহ
এভাবে মাধ্যমের কণাগুলোর সংকোচ ও প্রসারণের মধ্য দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য বা লম্বিক তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়। পাশাপাশি একটি সংকোচ ও প্রসারণ নিয়ে একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য গঠিত হয়।

১০. অগ্রগামী তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ অগ্রগামী তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যঃ
  1. কোনো মাধ্যমের একই প্রকার কম্পনের ফলে এটির উৎপত্তি হয়।
  2. মাধ্যমের কণাগুলো পর্যায়বৃত্ত গতি লাভ করে।
  3. কণাসমূহ স্থির থাকে না।
  4. সুষম বেগে কণাসমূহ সামনে অগ্রসর হয়।
  5. শক্তি এক কণা হতে অন্য কণায় স্থানান্তরিত হয়।
  6. তরঙ্গবেগ মাধ্যমের ঘনত্ব ও স্থিতিস্থাপকতার উপর নির্ভর করে।
  7. প্রতিটি বিন্দুর চাপ ও ঘনত্ব ও পরিবর্তনশীল।
  8. তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ উৎপন্ন করে সঞ্চালিত হয়।
১১. আড় তরঙ্গ ও লম্বিক তরঙ্গের মাঝে পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ আড় তরঙ্গ ও লম্বিক তরঙ্গের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য পরিলিক্ষিত হয়ঃ  

        অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বা আড় তরঙ্গ 

          অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বা লম্বিক তরঙ্গ 

১.যে তরঙ্গের ক্ষেত্রে জড় মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিক তরঙ্গ প্রবাহের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয়তাকে আড় তরঙ্গ বলে।

.যে তরঙ্গের ক্ষেত্রে জড় মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিক তরঙ্গ প্রবাহের দিকের সাথে সমান্তরাল হয়তাকে লম্বিক তরঙ্গ বলে।

২.তরঙ্গপ্রবাহের মাধ্যমে তরঙ্গশীর্ষ এবং তরঙ্গপাদ সৃষ্টি হয়।

২.তরঙ্গপ্রবাহের মাধ্যমে সংকোচন  প্রসারণ সৃষ্টি হয়।

৩.পর পর দুটি তরঙ্গশীর্ষ বা পরপর

৩.পর পর দুটি সংকোচন বা পর পর দুটি প্রসারণের মধ্য

৪.মাধ্যমের সমবর্তন বা পোলারন ঘটে।

৪.মাধ্যমের সমবর্তন বা পোলারন ঘটে না।

৫.প্রবাহীতে পৃষ্ঠটানের দরুন আড় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।

৫.আয়তনের স্থিতিস্থাপক ধর্মসম্পন্ন মাধ্যমে (কঠিনতরল  গ্যাসএই তরঙ্গ উৎপন্ন হয়।


রচনামূলক প্রশ্নউত্তরঃ
১২. অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ বের কর।
উত্তরঃ যে তরঙ্গ সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যায়, তাকে চলমান বা অগ্রগামী তরঙ্গ বলে। চলমান বা অগ্রগামী তরঙ্গ অনুপ্রস্থ বা অনুদৈর্ঘ্য দুই ধরনেই হতে পারে। আবার, দু'টি বিপরীতমুখী তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে অনেক সময় সৃষ্ট তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থাকে, এ ধরনের তরঙ্গকে স্তির তরঙ্গ বলে।
চলমান বা অগ্রগামী তরঙ্গ (Travelling or progressive waves):
সংজ্ঞা (Definition): যখন কোনো মাধ্যমের ভেতর পর্যায়বৃত্ত আন্দোলন এক স্তর থেকে অন্য স্তরে তরঙ্গ আকারে সঞ্চালিত হতে হতে সাম্নের দিকে একটি নির্দিষ্ট বেগে অগ্রসর হয় তখন অগ্রগতি বা চলমান তরঙ্গ বলে। পানিতে ঢিল ফেললে চলমান অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আবার, বক্তা কথা বললে শব্দ উৎপন্ন হয়। শব্দ লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। এই শব্দ বক্তার মুখ হতে বাতাসের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত সাম্নের দিকে অগ্রসর হয়ে শ্রোতার কানে পৌঁছায়। অতএব, শব্দ অগ্রগামী লম্বিক তরঙ্গ।
     মাধ্যমের কণাগুলো সরল ছন্দিত স্পন্দনে আন্দোলিত হলে চলমান তরঙ্গের উদ্ভব হয়। এখন একটি কণা থাকে আন্দোলন পরবর্তী কণাতে পৌঁছাতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, তরঙ্গের অভিমুখ বরাবর কণাগুলোর দশার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তরঙ্গ যদি বাম দিক থেকে ডান দিকে যায়, তবে বাম দিকের কোণে কণা যখন আন্দোলিত হয় তার কিছুক্ষণ পর ডান দিকের কণা আন্দোলিত হবে। ফলে এদের মধ্যে দশার পার্থক্য ঘটবে। ডান দিকের কণার দশাকোণ বামদিকের কণার দশাকোণের চেয়ে কম হবে।
অগ্রগামী বা চলমান তরঙ্গের সমীকরণ প্রতিপাদন (Derivation of progressive or travelling waves equation):  চিত্রঃ ২১৮ 
মনে করি, একটি চলমান তরঙ্গ A থেকে C  বরাবর চলছে । যেহেতু মাধ্যমের কণাগুলো সরল ছন্দিত স্পন্দনে অন্দোলিত হয়, সেহেতু A বিন্দুস্থ কণার সমীকরণ প্রকাশ করা যায়- 
                                      y = a sin ධt ..............................................................(i)

          এখানে, y = t সময়ে ABC খা বা সাম্যাবস্থা থাকে কণাটির সরণ
                       a = কণার বিস্তার
                      ධ = কণার কৌণিক কম্পাঙ্ক
আবার, A বিন্দুস্থ কণাটি যখন সাম্যাবস্থা অতিক্রম করে তখন B বিন্দুস্থ কণাটিও একই দিকে সাম্যাবস্থা অতিক্রম করে।
সুতরাং, এরা সমদশাসম্পন্ন কণা। সমদশাসম্পন্ন পরপর দুটি কণার মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে 𑃝। এখানে 𑃝 = AB । তরঙ্গ A হতে B বিন্দুতে যাওয়ার সময় কণার দশার পরিবর্তন হয় 2ꯚ, সুতরাং তরঙ্গ A বিন্দু হতে x দূরত্বে P বিন্দুতে যাওয়ার সময় কণার দশার
পরিবর্তন, ꯴ = 2ꯚ/𑃝.x
       ؞ P বিন্দুতে অবস্থিত কণার সরণ; y = a sin ( ධt - 2ꯚ/𑃝.x)                   [ ධ = 2ꯚ f = 2r v / 𑃝 ]
                                                      বা, y = a sin ( 2ꯚ/𑃝 vt - 2ꯚ/𑃝. x )
                                                      বা, y = a sin 2ꯚ/𑃝 (vt – x)...................................(ii)
তরঙ্গ ডান দিক হতে বাম দিকে অগ্রসর হলে,
                                                       Y = a sin 2ꯚ/𑃝 (vt +x)………………………….(iii)
সমীকরণ (ii) ও (iii) অগ্রগামী তরঙ্গের সমীকরণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url