অভিকর্ষঃ বিশ্বের প্রতিটি বস্তুকে পৃথিবী তার আপন কেন্দ্রের দিকে
    আকর্ষণ করেছে । একখন্ড পাখরকে যদি উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে দেখা যায় যে,
    পাথর খন্ডটি পৃথিবীর দিকে ছুটে যায় অর্থাৎ পাথর খন্ডটির উপর পৃথিবীর আকর্ষণ কাজ
    করে। তাহলে বলা যায়, কোনো বস্তুর উপর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বলে।
  
  
    মহাকর্ষঃ ভূপৃষ্ঠে কোনো বস্তু উপর হতে ছেড়ে দিলে তা আপনা আপনি
    ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে । এ ঘটনা প্রথম দিকে বস্তুর সহজাত গুণ হিসাবে গণ্য হতো।
    নভোমণ্ডলীয় বস্তুর গতি বিষয়ক সূত্রগুলোকে পার্থিব বস্তুর গতির সূত্র হতে
    সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে পরিগণিত হতো। তাহলে বলা যায়, বিশ্বে যে কোনো দুটি বন্তুকণার
    মধ্যকার আকষর্ণ বলকে মহকর্ষ বলে।
  
  
 
  সূত্রপত্র: অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ         
    
৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ
  অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
০১. কোন বস্তুর ওজন কোথায় সবচেয়ে বেশি হয়?
০২. মুক্তি বেগের সংজ্ঞা দাও।
০৩. অভিকর্ষ বল বলতে কী বুঝায়?
০৪. মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
০৫. এস আই পদ্ধতিতে G এর মান কত? 
০৬. মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান G=6.673×10-11 Nm2kg-2 এই উক্তিটির অর্থ কী?
০৭. মহাকর্ষ সূত্রের গাণিতিক রূপ কী?
০৮. মহাকর্ষীয়  ধ্রুবকের মান এর মাত্রা সমীকরণ কী?
০৯. অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১০. কেপলার এর সূত্রগুলো লেখ।
১১.  নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রটি কি ব্যাখ্যা কর।
১২. মহাকর্ষীয় ধ্রুবক কাকে বলে?
১৩. অভিকর্ষয় ত্বরণ কাকে বলে?
১৪. ভর ও ওজনের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১৫. মুক্তিবেগের রাশিমালা বের কর। 
  ৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ এর প্রশ্নোত্তর
  অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
  ০১. কোন বস্তুর ওজন কোথায় সবচেয়ে বেশি হয়?
  উত্তরঃ মেরু অঞ্চলে R-এর মান কম, ফলে 'g' এর মান বেশি। অর্থাৎ, মেরু
  অঞ্চলে যে-কোনো বস্তুর ওজন বেশি।
০২. মুক্তি বেগের সংজ্ঞা দাও।
  উত্তরঃ কমপক্ষে যে বেগে কোনো বস্তুকে উপরের দিকে নিক্ষেপ করলে তা আর
  পৃথিবীতে ফিরে আসে না,সে বেগকে মুক্তিবেগ বলে।
০৩. অভিকর্ষ বল বলতে কী বুঝায়?
  উত্তরঃ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল্কে অভিকর্ষ বল বলে।
০৪. মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
  উত্তরঃ বিশ্বে যে-কোনো দুটি বস্তুকণার মধ্যকার আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ
  বলে।
০৫. এস আই পদ্ধতিতে G এর মান কত?
  উত্তরঃ M.K.S. পদ্ধতিতে G এর মান 6.673 × 10-11 m3/kg-sec2.
  ০৬. মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান  G=6.673×10-11 N-m2kg-2 এই উক্তিটির অর্থ কী?
  উত্তরঃ G=6.673×10-11 N-m2kg-2 বলতে বুঝায় যে, 1kg ভরের দুটি বস্তু 1m দূরে স্থাপন করলে এদের আকর্ষণ বলের
  মান 6.673×10-11 N ।
  ০৭. মহাকর্ষ সূত্রের গাণিতিক রূপ কী?
  উত্তরঃ মহাকর্ষ সূত্রের গাণিতিক রূপ, F = G. m1m2/d2
  যেখানে, F, G, m1, m2ও d প্রচলিত অর্থ বহন
  করে।
০৮. মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের একক লেখ ।
  উত্তরঃ MKS বা SI পদ্ধতিতে G-এর মাত্রা সমীকরণ, [G] = [ L3 T-2 M-1]
০৯. অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে?
  উত্তরঃ অভিকর্ষ বলের ক্রিয়ার ফলে পড়ন্ত কোনো বেগ যে হারে পরিবর্তন
  হয়, সেই বেগ পরিবর্তনের হারকে অভিকর্ষ ত্বিরণ বলা হয়। একে g দ্বারা প্রকাশ করা
  হয়।
  সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ
১০. কেপলার এর সূত্রগুলো লেখ।
  উত্তরঃ জোহান কেপলার তার পূর্বসূরি জ্যেতির্বিদদের পর্যবেক্ষণ
  সংক্রান্ত তথ্যাবলি বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে দেখতে পান যে, সূর্যকে আবর্তনরত
  গ্রহগুলোর গতিতে একটি নিয়মানুবর্তিতা বর্তমান। এসব নিয়মানুবর্তিতাই গ্রহের গতি
  সম্পর্কিত কেপলারের তিনটি সূত্র নামে পরিচিত ।
কেপলারের সূত্রঃ
  প্রথম সূত্র বা কক্ষের সূত্রঃ প্রতি গ্রহই সূর্য একটি গোকাসে (focus) রেখে
    উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে।
  ব্যাখ্যাঃ চিত্রে ABCD একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথ। F ও F’ এই উপবৃত্তের
  ফোকাস। কেপলারের প্রথম সূত্রানুসারে সূর্য এই ফোকাস দুটির যে-কোনো কোনো একটিতে
  থাকবে এবং গ্রহ উপবৃত্তাকার পথে ঘুরবে।
চিত্রঃ
  দ্বিতীয় সূত্র বা ক্ষেত্রফলের সূত্রঃ গ্রহ এবং সূর্যের সংযোজক রেখা
  সমান সময়ে সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।
  ব্যাখ্যাঃ ধরা যাক, চিত্রে F ফোকাসে সুত্র অবস্থিত। কোনো গ্রহ এ
  কক্ষপথের A অবস্থান থেকে B অবস্থানে আসতে t সময় নেয় এবং C অবস্থানে আসতেও সেই একই
  সময় t নেয়। কেপলারের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে AFB ক্ষেত্রফল ও CFD ক্ষেত্রফল সমান
  হবে।
  তৃতীয় সূত্র বা আবর্তনকালের সূত্রঃ সূর্যের চারদিকে প্রতিটি গ্রহের
  আবর্তনকালের বর্গ সূর্য থেকে এ গ্রহের গড় দূরত্বের ঘনফলের সমানুপাতিক।
  ব্যাখ্যাঃ গ্রহগুলো উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সুতরাং
  বিভিন্ন সময় সূর্য থেকে যে-কোনো গ্রহের দূরত্ব বিভিন্ন হয়। ধরা যাক, যে-কোনো
  গ্রহের সূর্য থেকে গড় দূরত্ব R এবং ঐ গ্রহের সূর্যকে একবার প্রদক্ষিত করতে T সময়
  লাগে। কেপলারের তৃতীয় সূত্র অনুসারে T2 ∞ R3 হবে।
  অর্থাৎ, সূর্য থেকে R1, R2, R3 ……………… গড় দূরত্বে অবস্থিত গ্রহের প্রদক্ষিণকাল যথাক্রমে T1, T2, T3………… হলে,
  T12/ R13 = T22/ R23 = T32/
    R33 ................ = ধ্রুব হবে।
১২. মহাকর্ষীয় ধ্রুবক কাকে বলে?
  উত্তরঃ নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রানুসারে,
আমরা জানি, 
  F = G. m1 m2 / d2 
এখানে, G একটি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক । 
  যদি m1 =
  m2 = 1 এবং d = 1 হয় 
  তবে, F = G. 1 × 1 / 1 = G 
  সুতরাং একক ভরবিশিষ্ট দুটি বস্তু একক দূরত্বে থেকে পরস্পর যে বল দ্বারা আকর্ষণ
  করে, সে বলকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে।
১৩. অভিকর্ষ কাকে বলে?
  উত্তরঃ বিশ্বের প্রতিটি বস্তুকে পৃথিবী তার আপন কেন্দ্রের দিকে
  আকর্ষণ করেছে। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ বা
  মাধ্যাকর্ষণ বলে।
  উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একখন্ড পাথর উপরের দিকে নিক্ষিপ্ত করলেও মাধ্যাকর্ষণ বলের
  কারণেই তা আবার পৃথিবীর পৃষ্ঠের দিকে ছুটে আসে।
  ১৪. বস্তুর ভর ও ওজনের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
  উত্তরঃ ভর ও ওজনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেয়া হলোঃ
  
    
      
        | 
            ভর
           | 
            ওজন
           | 
      
        | 
            মোট পদার্থের পরিমাণ হলো কোনো বস্তুর ভর।
           | 
            পৃথিবীর আকর্ষণ বলই হলো কোনো বস্তুর ওজন।
           | 
      
        | 
            ভরের এককসমূহ হল kg, gm, Ꙇb
           | 
            ওজনের এককসমূহঃ পরম একক N, dyne, poundal; অভিকর্ষীয় একক kg-wt, gm-wt, lb-wt. 
           | 
      
        | 
            বস্তুর ভরের কোনো পরিবর্তন হয় না।
           | 
            বস্তুর ওজনের স্থানভেদে পরিবর্তন ঘটে।
           | 
      
        | 
            ভর একটি স্কেলার রাশি।
           | 
            ওজন একটি ভেক্টর রাশি।
           | 
      
        | 
            যে-কোনো নিক্তির সাহায্যে কোনো বস্তুর ভর নির্ণয় করা হয়।
           | 
            সাধারণত স্প্রিং নিক্তির সাহায্যে কোনো বস্তুর ওজন নির্ণয় করা হয়।
           | 
      
        | 
            কোনো বস্তুর ওজনকে ‘g’ দ্বারা ভাগ করলে ঐ বস্তুর ভর পাওয়া যায়।
           | 
            কোনো বস্তুর ভরকে ‘g’দ্বারা গুণ করলে ঐ বস্তুর ওজন পাওয়া যায়।
           | 
    
  
 
  রচনামূলক প্রশ্নউত্তরঃ
১৫. মুক্তিবেগের রাশিমালা বের কর।
  উত্তরঃ মুক্তিবেগের রাশিমালাঃ 
  মনে করি, M এবং m ভরের দুটি বস্তু r দূরত্বে অবস্থিত হলে নিউটনের মহাকর্ষ
  সূত্রানুসারে,
  F = GMm / r2 -----------------(i)
  বস্তুটিকে dr দূরত্বে সরাতে কৃত কাজ, dW = F.dr
  dW = GMm / r2 . dr
  ؞ কোনো বস্তুকে পৃথিবীর ব্যাসার্থ হতে অসীমে পৌঁছাতে মোট কাজ,
  wʃ0 dW = ∞ʃR GMm /
    r2 . dr
  [ W ]w0 =
    GMm ∞ʃR r-2 dr
  [W – 0] = GMm [ r -2+1 / -2+1 ]∞R
  W = GMm [ r -1 / - 1 ]∞R
  W = GMm [ 1/r]∞R
W = GMm [1/∞ - 1/R ]
W = GMm [ 0-1/R]
W = GMm/R …………………..(ii)
কিন্তু কৃতকাজটি গতিশক্তিজনিত হলে,
  W = ½.mv2 ----------(iii)
   (ii) ও (iii) নং সমীকরণ হতে,
  ½ mv2 = GMm/R
  v2 = 2GM/R
  v = √2GM/R = √2.GM/R2 .R 
v = √2gR (﮹g = GM/R2)
এটাই মুক্তিবেগের রাশিমালা ।
  তাই, v = √2gR                 
                       
            এখানে,
              = √2×9.8×64×103                   
                         
               g = 9.8 ms-2
              = 11 20 m/sec.     
                       
                     R = 6400
  km
              = 1.12 km/sec.     
                       
                        =
  6400 ×103 m
এটাই মুক্তিবেগের মান ।
 
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url