জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। অনেকেই জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন আবার অনেকেই জানেন না । জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। তো চলুন জানা যাক জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা । প্রায় প্রতিটি বাঙালি বাড়িতে এই জবা ফুল দেখা যায়। সাধারণত অনেকেই বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এই জবা ফুলের গাছ লাগিয়ে থাকে। এই জবা ফুল শুধু বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এটি মানুষের ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে।
চুলের যত্নেও জবা ফুলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি আমাদের চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। জবা ফুল রক্ত চাপ হ্রাস করতেও সাহায্য করে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা এর বিস্তারিত তথ্য।
সূচিপত্র: জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা
জবা ফুলের উপকারিতা
জবা ফুলের উপকারিতা রয়েছে। জবা ফুলে রয়েছে বিভিন্ন ঔষুধি গুনাগুণ । ফুল, পাপড়ি এবং জবা ফুলের গাছের ছালেও রয়েছে অনেক গুণ । জবা ফুলের উপকারিতা গুলো হলো -
ঋতুস্রাবের সমস্যায় জবা ফুল
অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে ঋতুস্রাবের সময় পঞ্চমুখী জবা ফুলের কুড়ি এবং অল্প পরিমাণে দারুচিনি এক সঙ্গে বেটে এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক টা উপকার পাওয়া যায়। এটি ঋতুস্রাবের সময় ৩/৪ দিন দিনে একবার করে খেতে হবে।
ফাঙ্গাস জনিত সমস্যায় জবা ফুল
ফাঙ্গাস জনিত সমস্যায় চুল উঠে গেলে ওই জায়গায় জবা ফুল বেটে কিছু দিন লাগাতে হবে। এটি যতক্ষন সময় পর্যন্ত লাগিয়ে রাখা যায় ঠিক ততক্ষন পর্যন্তই লাগিয়ে রাখুন। এতে করে নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।
হাতের চামড়া উঠা সমস্যায় জবা ফুল
হাতের চামড়া উঠলে হাতের তালুতে জবা ফুল মাখুন। দিনে দুই থেকে তিন বার মাখতে হবে তবেই উপকার পাবেন।
চুলের সমস্যা দূর করতে জবা ফুল
জবা ফুলে রয়েছে ভিটামিন সি, যা চুলের জন্য অনেক উপকারি। জবা ফুল চুলকে ঝলমলে করে তুলে, খুশকি দূর করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ধরনের জবা ফুল
জবা ফুল অনেক রঙের হয়ে থাকে। তবে সব থেকে জনপ্রিয় লাল রঙের জবা ফুল। বর্তমানে হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনেক রঙের জবার চাষ হয়ে থাকে। যেমন- রক্ত জবা, হলুদ জবা, কমলা পঞ্চমুখী জবা, গাঢ় গোলাপি পঞ্চমুখী জবা, গোলাপি পঞ্চমুখী জবা, সাদা জবা, লাল জবা, ঝুমকো জবা, চন্দন জবা, মাইক জবা, গোলাপি জবা।
জবা ফুলের চা
জবা ফুলে অনেক ঔষুধি গুন রয়েছে। জবা ফুল যে শুধু রুপচর্চার জন্য ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নই। জবা ফুলের চা- তে রয়েছে অনেক ঔষুধি গুন যা আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারি। জবা ফুলের মতো জবা ফুলের চা-তেও রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
জবা ফুলের চা তৈরির পদ্ধতিঃ
প্রথমে ডের কাপ পানি একটি পাত্রে গরম করতে হবে। পানি ফুটে গেলে ১ টুকরা দারুচিনি এবং ২ টি এলাচ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলা বন্ধ করে ধুয়ে রেখে পানি ঝরানো জবা ফুলের পাপরি গুলো দিয়ে দিতে হবে এবং চুলা বন্ধ থাকা অবস্থাতেই ৫ মিনিট ঢেঁকে রাখতে হবে। এর পর এক চির লেবু দিয়ে দিতে হবে। এবার এই চা কাপে ঢেলে নিতে হবে এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। মধু মিশালে মধুর পুষ্টি গুনও যুক্ত হয়। মধু না মিশালেও হবে জবা ফুলের পুষ্টি এমনিতেও অনেক বেশি।
চুলের যত্নে জবা ফুল
জবা ফুলে অনেক পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর অভাবে চুল পড়া শুরু হয়। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে জবা ফুলের ব্যবহার বাড়াতে হবে। জবা ফুলের তেল ব্যবহার করে অনেকটা চুল পড়া কমে এবং চুলকে ঝলমলে করতে সাহায্য করে। জবা ফুলে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের চুলের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের জেল্লা ধরে রাখতে সহায়তা করে। জবা ফুল অনেকটা প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের মতো কাজ করে। জবা ফুল নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে জবা ফুল
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ত্বকের পরিবর্তন ঘটে। যেমন- ত্বকের চামড়া ঢিল হয়ে যাওয়া, ত্বকে কালো দাগ পড়া ইত্যাদি। অনেক সময় রোধের তাপের কারণেও ত্বক কালো হয়ে যায়। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে জবা ফুলের পাপড়ি বেটে ত্বকে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। জবা ফুল ত্বকের মরা কোষগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক জবা ফুলের মাস্ক তৈরি -
কয়েকটি জবা ফুল নিয়ে রোঁধে শুকিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে ১/৪ কাপ ব্রাউন রাইস মিশিয়ে নিতে হবে। এই উপাদান গুলো একটি এয়ার টাইট বয়োমে রেখে দিন । ব্যবহারের সময় কৌটা থেকে দুই চামচ মিশ্রণ গুলো নিন এবং এর সাথে ১ চা চামচ অ্যালোভেরা এবং ১ চা চামচ টক দই মিশিয়ে নিন । তৈরি হয়ে গেলো জবা ফুলের ফেস মাস্ক। এটি ১০-১৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখেন এবং ১০/১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
জবা ফুল খাওয়ার অপকারিতা
জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। যেকোনো জিনিসের উপকারিতা থাকলে অপকারিতাও থাকে। জবা ফুলের খেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। জবা ফুল খেলে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা মানব দেহের অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। জবা ফুল মূলত রোগ নাশক ফুল নামে পরিচিত। জবা ফুলের অনেক গুন রয়েছে তাই অনেকেই এই ফুলটি ব্যবহার করে থাকেন। তবে এর কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও আছে বটে। যেমন-
- যাদের নিম্নচাপ আছে তারা জবা ফুলের রস বা জবা ফুলের চা সেবন করলে অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন। যেমন- মাথা ঘোড়া, বমি বমি ভাব, বুক ধরফর করা ইত্যাদি। এমন সমস্যা দেখা দিলে জবা ফুলের রস বা জবা ফুলের চা সেবন করা বন্ধ করুন।
- জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম। যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম জমা হলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- অনেকের জবা ফুলে এলার্জিও হতে পারে। তাই প্রথম ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হলে পরবর্তীতে আর না ব্যবহার করাই ভালো।
জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা এর শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটি তে জবা ফুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ছেন। জবা ফুল আমাদের চুলের যত্নে, ত্বকের যত্নে, স্বাথ্যের উপকারিতার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url