ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয়

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ফুসফুসে যাচ্ছে বায়ু নালির মাধ্যমে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার লিটার বাতাস। যা শ্বাস নেয় প্রতি ৩ সেকেন্ডে ও বের করে দেয় ২ সেকেন্ডে। পাতলা প্লুরায়ে ফুসফুস ঢেকে থাকে। পানি জমে এতেই। প্লুরায় ইফিউশন এ রোগের নাম।বিভিন্ন কারণ রয়েছে ফুসফুসে পানি জমার। ফুসফুসে কিছু নিজস্ব কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া, ফুসফুসে টিবি, ইনফেকশন, ক্যান্সার এ ধরনের সমস্যার কারণে পুনরায় পানি জমতে পারে।

রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কাশির সঙ্গে হালকা কফ ও জ্বর, বুকে ব্যথা করে প্লুরাল ইফিউশন হলে। ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় গুলো জানতে হবে। ফুসফুসে পানি কম হলে  সিটি স্ক্যান ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার প্রয়োজন হয় বা বুকের একটি এক্সরে করলে ধারণা পাওয়া যায় ইফিউশন সম্পর্কে। অনেক সময় ফুসফুসে পানি বেশি জমে গেলে সুই দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে পানি বের করা হয়।

সূচিপত্র :ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয়

তাহলে চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয়।

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ

অনেক সময় কর্মব্যস্ত জীবনে সামান্য কাশি, বুকে ব্যথা হলে  আমরা অবহেলা করি। কিন্তু ফুসফুস ক্ষতির প্রধান লক্ষণ  এগুলো হতে পারে।  এই কারণে ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় গুলো সবাইকে জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণগুলো জেনে নিন  :

  • শ্বাসকষ্ট : ফুসফুসের ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে কোন কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব হলে। আপনার যদি প্রতিনিয়ত  শ্বাস নিতে  সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 
  • বুকে ব্যাথা: এক মাসের ও বেশি যদিবুকের ব্যথা হয় বিশেষ করে নিঃশ্বাস বা কাশি নেওয়ার সময়। এটি ফুসফুসে পানি জমার গুরুতর লক্ষন
  • রোগীর হৃদপন্দন স্থান পরিবর্তন করতে পারে বুকের বেশি পানি জমলে
  • রোগীর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে পছন্দ করে ফুসফুসে পানি জমলে
  • বুকে ব্যথা হয় যেই স্থানে সেখানে চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রোগী একটু আরাম বোধ করে
  • ওজন হ্রাস
  • কাশি বা হালকা কফ হয়
  • জ্বর আসতে পারে 
  • বুক ভারি হয়ে গেছে এমন অনুভব হওয়া
  • কে গরগর আওয়াজ হওয়া শরীরকে ঝাঁকালে
ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় এ মধ্যে আপনার মাঝে এ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

ফুসফুসে পানি জমলে কি খাবার খেতে হবে

ফ্রেশ খাবার ও ভালো ডায়েট ফুসফুস ভালো রাখতে। প্রদাহ করবেন যেসব খাবার : 

  • চেরি
  • হলুদ 
  • পেঁপে 
  • শাক
  • বেল পেপার 
  • কালো বিন
  • জলপাই 
  • ব্লু বেবি 
  • মসুরের ডাল 
  • আখরোট 
  • কুমড়া 
  • সালমান 
  • বাদামি আলু
  • বাঁধাকপি 
  • পেয়ারা 

ইত্যাদি ফুসফুসের জন্য ভালো খাবার

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি 

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়া উচিত ঠান্ডা লাগলে। ভিটামিন সি ফুসফুস ইনফেকশনে অনেক বেশি কাজে দেয়।বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে নিউমোনিয়ার প্রতিশোধ ভিটামিন সি। হলুদ, কমলা, পেয়ারা, বেল পেপার ভিটামিন সি এর উৎস হিসেবে যাচাই করতে পারেন। 

ক্যারোটিন 

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে  লিউটেইন ও জিজানথিনের সংমিশ্রণে। পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়ায় সবচেয়ে বেশি বিটা - ত্রিপটোজানথিন রয়েছে। প্রতিদিন খাবারের শাকসবজি রাখুন শরীরে লিউটেইন ও জিজানথিনের যোগান দিতে। 

ফুসফুসে পানি দূর করার ঘরোয়া উপায় 

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় ফুসফুসে পানি দূর করা কয়েকটি ঘরয়া পদ্ধতি জেনে নিন : 

স্টিম থেরাপি 
গরম পানির ভাপ নেওয়া হয় প্রথমে  স্টিম থেরাপিতে।ফুসফুসে শ্বাস এর  মাধ্যমে এ  বাষ্প নেয়া হয়। এর ফলে শ্লেষ্ম বের হয়ে য়ায়। এই থেরাপি নেওয়ার জন্য প্রথম ধোঁয়া ওঠা গরম পানি নিতে হবে পানির পাত্রে। একটি টাওয়েল দিয়ে ঢেকে নিন মাথা। খেয়াল রাখবেন মুখমন্ডলে যেন অসহ্য গরম  না লাগে।  এর পর দুই থেকে পাঁচ মিনিট গরম পানির ভাব নিম চোখ বন্ধ করে।
 
নিয়ন্ত্রিত কাশি
ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা  বের হয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাবে এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। শ্লেষ্মা থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় কাশি প্রাকৃতিক উপায়। এর পদ্ধতি হলো : হাত গুটি ভাজ করে আপনার পেটের উপরে রাখুন, নাক দিয়ে  নিশ্বাস নিন আস্তে আস্তে। সামনের দিকে ঝুঁকে পেটের উপরে দুই হাত চেপে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এরপর দুই থেকে তিনবার কাশির দিন ছাড়ার সময়  মুখ সামান্য খুলে। নিঃশ্বাস নীল নাক দিয়ে আস্তে। 

শ্লেষ্মা বের করার পদ্ধতি 
খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে এটি পড়তে হবে। পস্টুরাল ড্রইনেজ এই পদ্ধতির নাম। শ্লেষ্মা বের করা হয়  বিভিন্ন ভঙ্গি তো শুয়ে গ্র্যাভির্টিস এর সাহায্যে ফুসফুস থেকে। সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ফুসফুস কে এই পদ্ধতি।

ব্যায়াম 
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি লাভ করবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে। হৃদরোগ  ও স্ট্রোকের মতো অনেক রোগের ঝুঁকি কমাবে। মাংসপেশির কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় ব্যায়াম। গতি বৃদ্ধি করে শ্বাস-প্রশ্বাসের। অক্সিজেনের সাপ্লাই বৃদ্ধি পায় মাংসপেশিতে এই কারণে। সারকুলেস উন্নতি লাভ করে ব্যায়াম করলে। কার্যকর ভাবে রোগীর শরীর থেকে বের হয়ে যায়  ব্যায়াম করার সময় উৎপন্ন হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড। ফুসফুস রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যায়াম অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু তারা ব্যায়ামের সুফল পেতে পারে।

ফুসফুসে পানি জমার  চিকিৎসা

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় জানার পাশাপাশি ফুসফুসে পানির জমার  চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হবে।

ফুসফুসে পানি জমার চিকিৎসা গুলো হলো: 

  • প্রথমত সম্পন্ন বিশ্রামে থাকতে হবে রোগী কে। 
  • চিকিৎসার তিন সপ্তাহের মধ্যে পানি কমে যায়  যদি পানির পরিমাণ কম থাকে।
  • স্টেরয়েড  জাতিয় ঔষধ Deflacort 6mg দিনে ২ বার ভরা পেটে খেতে দিতে হবে ফুসফুসে পানি জমা রোগী দের।
  • Naproxen 500 mg  দিনে দুই বার খেতে দিতে হবে গ্যাস্টিকের ঔষধের সাথে। বুকের ব্যথার জন্য। 
  • Monas 10mg. শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে এক বার খেতে দিতে হবে। 
  • Furotil 500mg টেবলেট দিনে ২ বার ১০ দিন খেতে   দিতে হবে জ্বর ও ফুসফুসের ইনফেকশনের জন্য।
  • Amসিরাপ ২ চামচ করে দিনে ৩ বার ১০ দিন খেতে দিতে হবে অতিরিক্ত কাশির জন্য। 
  • Azmasol lnhaler ২ চামচ করে দিনের সর্বোচ্চ ছয় বার খেতে হবে শ্বাসকষ্ট বেশি পরিমাণে হলে। 
  • Lasix 40mg ট্যাবলেট দিনে একবার পাঁচ দিন খেতে হবে ফুসফুসে পানি  কমার জন্য।
  • পানি পরিমাণ বেশি হলে কোনো ভালো ডাক্তার  মাধ্যমে   সিরিজ মাধ্যমে পানি বের করতে হবে। 
  • র্জদা ও ধুমপান অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিতে হবে।
  • আপেল কলা ও এলার্জিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। 
  • ছেড়ে দিতে হবে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া। 
  •  রোগীকে  বেশি পরিমাণে খেতে হবে ভিটামিন ডি ও সি।

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় এর শেষ কথা

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় কি কি করতে হবে তা আমরা উপর উক্ত আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছি। ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয়  গুলো আমাদের অবশ্যই জানতে হবে।ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় গুলো জানা থাকলে আমাদের মাঝে সমস্যাগুলো ভাই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারব।ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় গুলো জানা না থাকলে রোগ আরো বড় হয়ে আমাদের শরীরকে যে করে তুলবে। তাই ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ ও করণীয় গুলো আমরা জানবো এবং অপরকেও জানতে সাহায্য করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url