ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয়
ফুসফুস হচ্ছে আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। ফুসফুস আমাদের শ্বাস নিতে কাজ করে।ক্যান্সার হচ্ছে আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গটির সবচেয়ে ভয়াবহ সংক্রমণ। বিশ্ব সংস্থার মতে বর্তমান গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছে ফুসফুসের ক্যান্সার। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ফুসফুস ক্যান্সার কি এর লক্ষণ করনীয় চিকিৎসা সম্পর্কে জানেনা। তাই ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয়গুলো জানতে হবে। কার্বন ডাই অক্সাইড পরিএান এবং অক্সিজেন গ্রহণ ফুসফুসের প্রধান কাজ।
আজকে আমরা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় সম্পর্কে জানব।প্রথম থেকে যদি ফুসফুসে ক্যান্সার চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় জানা অনেক জরুরি।
সূচিপত্র :ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয়
- ফুসফুস ক্যান্সার কী
- ফুসফুস ক্যান্সারের ধরন
- ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ
- ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা
- ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় এর শেষ কথা
তাহলে চলুন বিস্তারিত যেনে নাওয়া যাক ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় সম্পর্কে।
ফুসফুস ক্যান্সার কী
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় আপনাকে ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে হবে। ফুসফুসের টিস্যুতে শুরু হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। বায়ু পথের সাথে যুক্ত থাকে কোষগুলো। শরীরের কোষের অত্যাধিক বৃদ্ধি এড়াতে প্রোগ্রাম করে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের শেষ করার। ওভাররাইড করে ক্যান্সার এই নির্দেশকে এবং কোষ গুলো অনেক বৃদ্ধি পেতে থাকে যার শরীরের জন্য সমস্যা জানক।কোষগুলোর অধিক বৃদ্ধি ক্যান্সার, টিউমার বিকাশ এর ক্ষতিকর প্রভাবের দিক।
অতিবৃদ্ধির প্যাটার্ন দেখা দেয় ফুসফুসের ক্যান্সারে ফুসফুসে কোষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শ্বাস এবং গ্যাস বিনিময়ের জন্য।স্বাভাবিক কোষ থেকে ভিন্ন ক্যান্সার কোষ স্বাভাবিক এবং খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। টিউমার তৈরি করে এই কোষগুলো একসাথে এবং ফুসফুসের চারপাশে টিস্যুকে ধ্বংস করে। এই কারো ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে, সিগারেট ধূমপান। বিষাক্ত পদার্থের বা রাসায়নিক থাকলে আপনার ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এ ধরনের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এবং মৃত্যুর হারও বেশি।
ফুসফুস ক্যান্সারের ধরন
ফুসফুসের ক্যান্সার একটি জটিল রোগ। বিভিন্ন কারণ এবং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এ রোগ। ফুসফুসের ক্যান্সারের সাধারণ প্রকারভেদগুলো হলো :
স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সার (এসসিএলসি) : ফুসফুস ক্যান্সারে এটি কম সাধারণ কিন্তু অনেক আক্রমনাত্মক ধরনের। প্রায় ১৫% ফুসফুসের ক্যান্সারের সমস্ত কেসে এর জন্য দায়ী। এসসিএলসি সাধারণ ফুসফুসের কেন্দ্রের অংশে পাওয়া যায় এবং ধূমপানের সাথে যুক্ত। দ্রুত বৃদ্ধি পায় এ ধরনের ফুসফুস ক্যান্সার।অনেক তাড়াতাড়ি শরীরের অন্য অংশ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নন- স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার (এনএসসিএলসি):এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার ফুসফুস ক্যান্সারের এ ক্যান্সারের জন্য দায়ী ৮৫%। আরও তিনটি উপপ্রকারে শ্রেনিবদ্ধ করা হয়েছে এনএসসিএলসি এর মধ্যে রয়েছে :
- স্কোয়েমাস সেল কার্সিনোমা: এটি বিকাশ করে শ্বাসনালীগুলির রেখাযুক্ত কোষ গুলিতে। ফুসফুসের কেন্দ্রীয় অংশ পাওয়া যায়।
- অ্যাডেনোকার্সিনোমা:এর সবচেয়ে সাধারণ উপকার এনএসসিএলসি প্রায় ৪০% সমস্ত কেসে জন্য দায়ী। শ্লেষ্মা তৈরি করে এবং কোষ গুলো বিকাশিত হয় এখানে ফুসফুস ক্যান্সারে।
- বড় কোষের কার্সিনোমা : একটি কম সাধারণ উপকার এনএসসিএলসি এর।ফুসফুসের যে কোন অংশে ঘটতে পারে। সাধারণ কোষের চেয়ে ক্যান্সারের কোষগুলো বড় হয় তাই এটিকে বড় কোষ বলা হয়।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় গুলো জানার পাশাপাশি ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারভেদ গুলো জানতে হবে।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার২৫% মৃত্যু এই ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আমাদের মধ্যে এখনো অনেকে আছেন যারা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো জানেন না অবহেলা করে। ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ের নাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু এ ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন কত তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা করা সম্ভব।তাই আমাদের ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় গুলো জানতে হবে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় গুলোর মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ গুলো -
অনেক দিন থেকে কাশি: আমরা অনেকেই অবহেলা করি অনেক দিন থেকে কাশি এই সমস্যা কে। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে অনেকদিন থেকে কাশি এটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। সর্দি, এলার্জি, ঠান্ডা সাধন কিছু রোগের কারণে কাশি হয়ে থাকে।তাই কাশি হলে খুব একটা চিন্তিত হয় নাও হতে পারে সবাই।কিন্তু কাশি যদি দুই মাসের বেশি থাকে ঔষধ খাওয়ার পরেও ভালো না হয় তাহলে এটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে কাশি একটি। অনেক ভয়ংকর রূপ নাই এই কাশি। ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ কাশির সাধারণ লক্ষণ হিসেবে থাকে ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে।
বুকে ব্যাথা: আরো একটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যথা। অবসাদ, গ্যাস্ট্রিসাইটিস, স্ট্রোক, রক্তশূন্যতার সহ বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়, হাসলে ও কাশি দিলে বুকের ভিতর চরম ব্যথা হলে এটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।
শ্বাসকষ্ট : শ্বাসকষ্ট খুব সাধারণ একটি উপসর্গ ফুসফুস ক্যান্সার রোগী দের। ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। Dyspnea বলা হয় ডাক্তারের ভাষায়। হাটাহাটি, ব্যায়াম, ফ্রি বয়ে উঠা ইত্যাদি করার সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিভিন্ন রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কাশির সঙ্গে রক্ত : অনেক সময় দেখা যায় কাশি হলে মরিচা -বর্ণের কফ বা রক্ত ওঠে যা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষন। এমনটা দেখা দিলে দূরত্ব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গলার কণ্ঠ পরিবর্তন : গলার কন্ঠ ফেঁসফেঁসে বা কর্কশ শোনায় স্বাভাবিকভাবে কথা বলার সময় তাহলে এটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।ফুসফুস ক্যান্সার কোষ গুলো জন্ম নাওয়ার পরে তা শ্বসন প্রক্রিয়া বিভিন্ন অংশসহ স্বরতন্ত্রীক বা ভোকাল কর্ড আক্রমণ করে। এর ফলে গলার কন্ঠ বা স্বর বদলে যায়।
ওজন কমে যাওয়া : ওজন কমে যাওয়া কে অ্যানোরিক্সিয়া বলা হয় ডাক্তারের ভাষায়। অইচ্ছাকৃত পুষ্টির কারণেই ওজোন কমে যাওয়া কে ক্যাচেক্সিয়া বলা হয়। এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যান্সার অ্যানোরেক্সিয়া - ক্যাচেক্সিয়া সিন্ড্রোম বা CACS এ পরিনিত হয়।৬০% ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের রোগ নির্ণয় করার সময় ওজন কমে যাওয়া দেখা যায়।
ক্লান্তি অনুভব করা: শরীর এর রক্তকণিকা গুলো নষ্ট করে ফেলে ফুসফুসে ক্যান্সার হলে এর ফলে রক্ত অক্সিজেন কমে যায়। আপনার সব সময় ক্রান্তিবোধ দেখা দিতে পারে। কোন কাজ না করে আপনার ক্লান্তি অনুভব হবে। এটি ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম একটি অন্যতম লক্ষণ।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা : ফুসফুসের সংযোগ রয়েছে মস্তিষ্কের কিছু অংশের সঙ্গে। সংযোগ স্থাপিত হয় মস্তিষ্কের শিরা উপশিরা গুলোর মধ্যেমে। তাই মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে ফুসফুস ক্যান্সার হলে। বসে থেকে উঠতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা হয় বা মাংস কাধের মাংস বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি লক্ষণগুলো ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় গুলোর মধ্যে ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণ আপনার মাঝে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা
প্রথমে রোগটি শনাক্ত করতে হবে ফুসফুস ক্যান্সার নির্মূলে।প্রথম পর্যায়ে এই ক্যান্সারের কোন উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। এই রোগটি যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাই তখন উপসর্গ গুলো দেখা দেয় যেমন: থেকে কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট,গলার স্বর পরিবর্তন, ওজন কমে, যাওয়া ক্লান্তি অনুভব করা,স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা। ডাক্তাররা বলেছেন, এই সকল উপসর্গ গুলো দেখা দিলে প্রথমে সিটি স্ক্যান, ও একটি বুকের এক্সরে করতে হবে।
যদি এই সকল পরীক্ষার ফলাফলে ফুসফুস ক্যান্সারের নির্দেশ করে তাহলে চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য বায়োস্কপি গাইডেড টুকাট বায়োপাসি ও পিইটি- সিটি স্ক্যান করতে হবে। রোগীদের রোগটি ভালোভাবে নির্ণয়ের পর চিকিৎসা ব্যবস্থা যেতে হবে।চারটি পর্যায়ে থাকে সাধারণত ক্যান্সারের। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ। ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়ে থাকে চারটি পদ্ধতিতে। সার্জারি, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সার্জারি করার সুযোগ রয়েছে রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী। টিউমারটি যদি ছোট থাকে তাহলে সার্জারি করাই ভালো। ইমু থেরাপি দেয়া হয় যদি সার্জারি না করা গেলে। অনেক অগ্রসর হয়ে যায় তৃতীয় ধাপে।এর ফলে রেডিও থেরাপি বা কেমোথেরাপি অথবা টার্গেটথেরাপি মাধ্যমিক চিকিৎসা করা হয়। কেমোথেরাপি বা অন্যান্য থেরাপি দিতে হয় রোগীর দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগ বা বয়স বেশি হলে। কেমো, টার্গেট বা রেডিও থেরাপি চিকিৎসা দিতে হয় যদি চতুর্থ পর্যায়ে গিয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীর জন্য।ডাক্তারদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে হবে ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলে।যদিও শনাক্তকরণের সুবিধা নেই দেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে। যে সকল এলাকায় ধূমপানের প্রবণতা অনেক বেশি সেই সকল এলাকার মানুষদের ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করা উচিত।কারণ ফুসফুস ক্যান্সার রোগটি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নির্ময় ও মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় এর শেষ কথা
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় গুলো আমাদের জানতে হবে। উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জেনেছি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ ও করনীয় সম্পর্ক। আমরা আরও জেনেছি ফুসফুস ক্যান্সার কি, ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ, ফুসফুস ক্যান্সারের ধরন ও ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা। ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক অংশে এড়ানো যায় সতর্কতার সাথে নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে। আমরা নিজেরা সচেতন হয় এবং আমাদের আশেপাশের সকলকে ফুসফুস ক্যান্সার ভয়াবহতা ও ফুসফুস ক্যান্সার লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে জানাই এবং সতর্ক করে তুলি। একটু সতর্ক হলেই সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবন উপহার দেওয়া সম্ভব।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url