ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন
ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন পুরো পৃথিবী অনেক মানুষ। ২৬ লাখ মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা পুরো শরীরের মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের সব অঙ্গ পতঙ্গের কাজ করার ক্ষমতা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন করতে হবে।
মুখে এবং দাঁতে ডায়াবেটিস রোগের কিছু উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া যায়। যেমন : মাড়ির রোগ, ডেন্টাল ক্যারিজ,মুখের বিভিন্ন ধরনের ঘা, ইত্যাদি রোগ গুলো দেখা দিতে পারে।ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন না করলে এ সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই আজ আমরা ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
সূচিপত্র :ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন
- ডায়াবেটিস রোগের দাঁতের যত্ন
- ডায়াবেটিস রোগের মাড়ির যত্ন
- দাঁত ও মাড়ির যত্নের করনীয়
- দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নিলে যে সব সমস্যা দেখা দিবে
- ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন শেষ কথা।
তাহলে ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন এর বিষয়ে ভালোভাবে ও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডায়াবেটিস রোগের দাঁতের যত্ন
ডায়াবেটিস রোগটি মুখসহ পুরো শরীরের ক্ষতি করতে পারে। মুখের স্বাস্থ্য সমস্যা ঝুঁকিতে ভুগেন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা।মুখের স্বাস্থ্য অবস্থায় ঝুঁকি বাড়ায় কিভাবে এবং ঝুঁকিগুলো হ্রাস করতে কি করতে হবে তা অবশ্যই জানতে হবে। আপনি যদি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। মাড়ির সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের।
মুখ শুকনো হয় উচ্চ রক্ত সরবরাহের কারনে যার ফলে পানি দুর্বল হয়ে যায়। মাড়িতে রক্ত সরবরাহ হ্রাস করতে পারে ডায়াবেটিস। মাড়িতে ইনফেকশন হতে পারে,মাঝে মাঝে রোগীর মুখ গহব্বরে জ্বালাপোড়া করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীর সমস্যা রয়েছে যেমন: দাঁত নড়াচড়া করা বা পেরিওডোন্টাইটিস।আপনি যদি দাঁতের মাড়ি ক্ষয় হওয়ার রোধ করতে চান তাহলে এবং ডায়াবেটিসের যত্ন নিন।
আপনার ডেন্টিস্ট কে জানাতে হবে আপনার ডায়াবেটিস আছে তাহলে ডেন্টিস আপনাকে সেভাবে চিকিৎসা দিবে। প্রতিদিন নিয়মিত ব্রাশ করা অতি সচেতন হন। মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা করাতে হবে প্রতি ছয় মাস পর পর। প্রতিদিন দুইবার করে ব্রাশ করতে হবে সকালে এবং রাতে। দাঁতের মাঝখানে খাবার আটকে গেলে তাহলে এক ধরনের সুতা ব্যবহার করতে হবে।
দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয় তবে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।পানি ছাড়া যে কোন খাবার খেলে কুলি করতে হবে। জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ বেশি হয় ডায়াবেটিস রোগীদের। আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহের কাজ হচ্ছে অন্যান্য উপকরণ ও কোষে অক্সিজেন বহন করা এবং বাজে অবশিষ্ট অংশ বের করে ফেলা। রক্তনালী গুলো সরু হতে থাকে ডায়াবেটিসের কারণে।
ডায়াবেটিস কারণে শরীরে রক্ত প্রবাহ অতি ব্যাহত হয় অক্সিজেন অন্যান্য উপকরণ রক্তনালীতে সব জায়গায় পৌঁছাতে পারেনা। এর ফলে মাড়ি ও দাঁতের স্বাভাবিক রক্তের গতি ও পরিমাণ বাঁধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাড়ি ফুলে ওঠে। তাছাড়া মাটিতে আগের কোন সমস্যা থাকলে তা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে হবে।নিয়মিত ব্রাশের পাশাপাশি ফ্ল্যাশিং করতে হবে।ফাঁকে যেন খাবার না আটকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগের মাড়ির যত্ন
মাড়ির প্রদাহ ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি হওয়ার কারণ হলো - মুখের মধ্যে খাদ্য কণা জমে থাকে যে আমারও সৃষ্টি হয় তাকে ডেন্টাল প্লাক বলে।মাড়ি যত্ন না নিলে মাড়িতে ঘা হয়। আস্তে আস্তে মাড়ি থেকে দাঁত আলাদা হয়ে যায় পরের দাগটি পড়ে যায় এই রোগ কে বলা হয় মাড়ির রোগ। ডায়াবেটিসের বেশি থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মাড়িতে এই ঘা দেখা যায় ফলের দাঁত দিয়ে খাবার চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
মুক অপরিষ্কার এর কারনে এ ধরনের ঘা হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে অসুবিধা হয়, মাড়ির ঘা থাকলে। বেশিরভাগ সময়ে মাড়ির প্রতিরোধ শক্তি ও ধারণশক্তি কমে যায় ফলে খাবার খাওয়ার সময় ব্যথা অনুভব হয়। এর ফলে চিবিয়ে খাবার খেতে পারে না। সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় নিবাস সরকার জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
খাবার খাওয়ার পরে কুলি ও মুখ পরিষ্কার করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগে মাড়ির যত্ন করণ রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগী নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ থেকে যদি কোন ভাবে মাড়িতে ঘা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন নাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
দাঁত ও মাড়ির যত্নের করনীয়
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মতো ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। খুব যন্ত্রণাদায়ক দাঁতের ব্যথা। ব্যয়বহুল চিকিৎসাও দাঁতের। একটি কথা প্রচলিত আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম কেউ বোঝে না। আমাদের শরীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে দাঁত। দাঁত হারাতে শুরু করলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের স্বাস্থ্য ও দেহের জন্য কতটা উপকারী। কিন্তু তা বুঝে ওঠার আগেই বেশ দেরি হয়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। ছোট বড় সকলকে দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত। দাঁত ও মাড়ির যত্নে করণীয় হলো-
- প্রতিদিন নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানো যাওয়ার আগে দাঁত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ হচ্ছে দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করার উপযুক্ত মাধ্যম।তবে দাঁত ও দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান থেকে খাদ্য কনা গুলো বের করা বা পরিষ্কার করার জন্য নিমের ডাল কেও ব্রাসের মতো করে কেটে নিয়ে ব্যবহার করা যায়।
- এক মিনিট আঙ্গুলের সাহায্যে মাড়ি মালিশ করা প্রয়োজন দাঁত ব্রাশ করার পরে,তাহলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মাড়ি মজবুত ও শক্ত হয়।
- দাঁতে কালো দাগ বা কখনো গর্ত দেখা দিলে ভাই একটু আঘাতে মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে অবহেলার না করে ডেন্টাল পরামর্শ নিন।
- ব্রাশ দিয়ে যেসব জায়গা পরিষ্কার করা সম্ভব না, সেইখানে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে পারবেন। এবং জিহ্বায় পরিষ্কার করে নিবেন মাড়ি সুরক্ষায়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিয়মিত নিলে এ সকল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অতি ছয় মাস পরপর দাঁত ও মুখের পরীক্ষা করালে প্রাথমিক অবস্থাতে রোগ ধরা পড়তে পারে ফলে চিকিৎসা করে রোগ নিরাময় করা যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পান, সুপারি, চুন,সেই সাথে জর্দা মাড়িতে আরও বেশি ক্ষতি করে ফেলে তাই এই সকল অভ্যাস থাকলে অবশ্যই ছেড়ে দাও উচিত।
- খুব ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করে নিতে হবে বিশেষ কিছু খাবার খাওয়ার পরে যেমন - বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, আইসক্রিম, চকলেট ইত্যাদি। সকল খাবার খাওয়ার পরে দাঁত পরিষ্কার না করলে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ২-৩ মাস পরপর টুথপেস্টের ব্র্যান্ড বদল করে নাও ভালো। বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে বিভিন্ন পেস্টে।ক্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট যাদের জন্য অনেক উপকারী।
- গুল, কয়লা, ছাই,মাটি, টুট পাউডার, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। এতে দাঁতের মাড়ি ও দাঁতের ক্ষতি করে।
- তামাক জাতীয় খাবার দাঁত ক্ষয় করে বেশ দ্রুত। তাই ধুমপান করা থেকে বিরতি থাকুন। ধূমপানের কারণে মুখ ও দাঁতের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- হা করে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে অভ্যাস দূর করুন। তানহা করে ঘুমানোর ফলে দাঁত ও মুখের রোগ বেড়ে যায়।
- আশ- যুক্ত খাবার যেমন- পেয়ারা, আমরা, গাজর , আখ, আনারস,নারিকেল, নাশপাতি, আপেল, এ সকল খাবার মারি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- দাঁত ও মাড়ির জন্য অত্যন্ত উপকারী হচ্ছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন - আমলকি, টমেটো, কমলা, লেবু, ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি অনেক পরিমানে ভিটামিন সি অন্যান্য ভিটামিন থাকে। ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন এবং সুস্থ রাখতে খাদ্য তালিকায় এই সকল খাবার রাখুন।
- অনেকে আছে কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ পছন্দ করেনা। কিন্তু কাঁচা পেঁয়া তাতো মানিক জন্য অনেক উপকারী। মুখের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর হয় নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে।
- দাঁতের কোণায় খাবার কণা আটকে থাকলে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে পারে তাই খাওয়ার পরে অনেক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পরিমাণের পানি পান করলে আটকে থাকা খাবারের কোন দূর হয়ে যায়।
দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নিলে যে সব সমস্যা দেখা দিবে
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানা ধরনের জটিল রোগ হতে পারে মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে। ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নিলে যে সকল সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে তার নিচে উল্লেখ করা হলো :
- শ্বাসকষ্ট :ফুসফুসের মধ্যে পাওয়া গেছে মাড়ির আক্রমণকারী জীবাণু গুলো।যা ফুসফুস কে ধীরে ধীরে এসব করে তুলে এবং শ্বাসে সমস্যা হয়।
- হৃদরোগ : দন্তমল জমে মাড়িতে।এ থেকে সৃষ্টি হওয়া মাড়ির রোগ যে প্রদাহ ও সংক্রমণ হয়। তা হৃদপিণ্ডে পৌঁছে যেতে পারে রক্তের মাধ্যমে।
- গর্ভকালীন জটিলতা : গর্ভকালীন সময় যাদের মাড়ির বা দাঁতের সমস্যা থাকে। তাদের গর্ভের সন্তান নির্ধারিত সময় পূর্বের জন্ম নিতে পারে ওজনের হয়। এবং মামা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন শেষ কথা
আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে দাঁতের ও মাড়ির সমস্যা দেখা দিলে ডেন্টাল এর কাছে গিয়ে চিকিৎসা ভালোভাবে গ্রহণ করতে হবে । ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে হবে। আমরা সকলেই নিশ্চিত বুঝতে পেরেছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে ডায়াবেটিস রোগের দাঁত ও মাড়ির যত্ন কিভাবে নিব। ডায়াবেটিস রোগের মাড়ির যত্ন কিভাবে নিতে হবে। দাঁত ও নারীর যত্নের করণীয়,দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নিলে যে সকল সমস্যা দেখা দিবে। আমরা সকলেই সচেতন হই এবং অন্য কেউ সচেতন করি। আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা একটি মূল্যবান দাঁত ফেলে দেওয়ার আগে। তাই বলা যেতে পারে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url