ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা

হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ ডায়াবেটিস। গভীর টেনশনের মধ্যে দিয়ে বহু মানুষ দিন কাটাচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ে।রক্তে শর্কারা বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভেষজ উদ্ভিদ ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।ওষুধের মতনই উপকারী ও কার্যকর অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে চমৎকার ভাবে ডায়াবেটিসের মত সমস্যা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ভালো উপায়। ভেষজ উদ্ভিদগুলো শুধু ডায়াবেটিস নয় উচ্চ রক্তচাপ কোলেস্টরেল কেউ নিয়ন্ত্রণ করে।কম মূল্যে এই গাছ গাছালি বা ভেষজ যে  কোন রোগ সারাতে ব্যবহার হতে পারে।এতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা ভূমিকা অনেক। আজকে আমরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

সূচিপত্র :ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা

তাহলে চলুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন

গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপেন,একজন সুস্থ মানুষ  খাবারের আগে রক্তের সুগারের মাত্রা থাকবে ৪-৬ পয়েন্ট এবং খাবার খাবার দু'ঘণ্টা পরে ৮ পয়েন্টের নিচে থাকলে তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার ডায়াবেটিস স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণে আছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ও মানসিক চাপ আপনি যদি ঠিকভাবে কৌশলে আনতে পারেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তার পাশাপাশি  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা অন্যতম একটি মাধ্যম। ভেষজ উদ্ভিদ জাতীয় খাবার আপনার খুব অল্প সময়ে কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে - 

স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস : সুষম খাবার খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব জরুরী। কার্বন-হাইড্রেট শর্করা  জাতীয় খাবার গ্রহণে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল, চরবিহীন মাংস খাওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া উচ্চ চর্বি, মিষ্টি পানিও খাবার এগিয়ে চলতে হবে। 
নিয়মিত শরীর চর্চা : প্রতিদিন শরীরচর্চা, ব্যায়াম,হাটাহাটি, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এগুলো করলে শরীরের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতার নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে রক্তের শর্করা কমে যায় নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজন। 
কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের সতর্কতা : কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। সরাসরি রক্তের সরকারের ওপর প্রভাব ফেলে কার্বোহাইড্রইট।

ইত্যাদি আরও কিছু মাধ্যমে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।সপ্তাহে একবার করে গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা।

ডায়াবেটিক চিকিৎসার টার্গেট তালিকা

ডায়াবেটিস চিকিৎসার টার্গেট তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

পরীক্ষা                                                              টার্গেট

রক্তের শর্করা

খালি পেটে

.-. মিনিমোল / লিটার

আবার দুই ঘন্টা পরে

.- মিলিমোললিটার

হিমোগ্লোবিন এ১ সি

<.%

রক্তের চর্বি

এইচ ডি এল ( HDL )

<৪০ মি গ্রাডেসি লিটার 

এল ডি এল ( LDL )

<১০০ মি গ্রাডেসি লিটার

কোলেস্টরেল

<২০০ মি গ্রা / ডেসি লিটার

ট্রাইগ্লিসারাইড (TG)

<১৫০ মি গ্রাডেসি লিটার

ওজন 

রক্ত চাপ

<১৩০৮০ মিমি মারকারী

বিএম আই ( BMI )

<২৫ কেজি / মিটার 

  

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যে সব ভেষজ খাবার খাবেন

আমাদের শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হতে পারে। ওষুধ, শারীরচর্চা, খাওয়া দাওয়া, কোন বিষয় মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, কিন্তু ডায়াবেটিস পুরোপুরি ভাবে নিরাময়  করা যায় না। সময়ের সাথে সাথে ডায়াবেটিস মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কাজ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জীবনযাত্রা পরিবর্তনের পাশাপাশি রক্তের শর্করা মাত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব ভেষজ খাবার খাবেন তা কিভাবে কাজ করে তাহলে জেনে  নিন-

  • আমলকি: সবচেয়ে শক্তিশালী আয়ুর্বেদিক ঔষধ হচ্ছে আমলকি। টিস্যু পুষ্ট করতে ওর টক্সিন দূর করতে এ আয়ুর্বেদিক ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এই আয়ুর্বেদিক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য উযুক্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হচ্ছে আমলকি। আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণের ফসফরাস,আয়রন,ক্যালসিয়াম,রয়েছে। রক্তের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও শরীরকে ইনসুলিন শ্বশুর সহায়তা করে। 
  • করলা:প্রাকৃতিক উপাদান করলা ডায়াবেটিসের সমস্যায় বেশি উপকারী সবজি হিসেবে পরিচিত। রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে করলা সাহায্য করে।দুইটি বা তিনটি করলা বীজ বের করে নিয়ে রস বের করতে হবে।করলার রসের সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। আপনি চাইলে করলাম শুদ্ধ করে ভাতের সাথে খেতে পারে।
  • অ্যালোভেরা : ফাইটোস্ট্যারলস নামকশক্তিশালী উপাদান থাকে অ্যালোভেরা জেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য অনেক উপকারী কারণ ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে। জলের সঙ্গে মিশিয়ে তেজপাতা, হলুদ ও অ্যালোভেরা দিনে দুইবার পান করা উচিত। 
  • মেথি: মেথি একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কোলেস্টেরল ও ফ্যাট কমাতে মেথি অনেক সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে ও খাবারের সুস্বাদু করার জন্য মেথি অনেক উপকারী। মেথিতে থাকা আশঁ কাজ করে সবচেয়ে বেশি। সারারাত এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন।সকালবেলায় মেথির বীজ সহ পানি পান করুন।মেথিতে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে। স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত করে প্রক্রিয়াকে ধীড় করে। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের  অনেক সাহায্য করে। 
  • দারুচিনি : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা মধ্যে দারুচিনি একটি। ডায়াবেটিস এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও রক্তচাপ কমাতে এটি সাহায্য করে। আপনার ইন্সুলিন এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে ও খাবার পরে রক্তের শর্করা হ্রাস করে। দারুচিনি যাদের টাইপ ২  ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য অনেক উপকারী। রক্তে থাকার সুগারের মাত্রা কমায় দারুচিনি খাবার পরে খেলে।দারুচিনি শুধু ডায়াবেটিসের জন্যই নয় শরীরের কোলেস্ট্রল ও ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
  • গিলয়: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভীষণ উপকারী গিলয় গাছের পাতা। অন্যান্য উপসর্গ সহ সুগারের লেভেল কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা মধ্যে গিলয় গাছের পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • জিনসেং: অ্যান্টি ডায়াবেটিস উপাদান রয়েছে এই ভেষজটি তে। শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণ কমায় ও শুলেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে। এই উপাদানের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের মাত্রা ও কমায়।
  • ত্রিফলা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা ত্রিফলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম শক্তির জন্য অনেক উপকারী। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে সুগার রোগীদের জন্য। রক্তের শর্কার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে  সাহায্য করে এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি।

ডায়াবেটিস রোগে আয়ুর্বেদ যে ভাবে কাজ করে

আমরা বর্তমানে যেভাবে জীবন যাপন করি ডায়াবেটিস হওয়াটা স্বাভাবিক। যত দিন যাচ্ছে এই রোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সময় সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে ডায়াবেটিস। ওষুধের পাশাপাশি বাড়িতেও কিছু নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব । বয়স্করা ও শুধু নয় তরুণরাও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা মধ্যে ডায়াবেটিস রোগী আয়ুর্বেদিক ভালোভাবে কাজ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা  গুলোর মধ্যে আমরা আমলকি, করলা, মেথি, এলোভেরা, দারুচিনি  খাবার খেয়ে থাকি। এগুলো খাওয়ার কিছু নিয়ম  আছে আছে  যেমন:  মেথি আমরা ভিজিয়ে রেখে সকালে মেথি সয় বাণীটি খেয়ে থাকে। আমার করলাম করে আমরা খেতে পারি।  রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডায়াবেটিস চিকিৎসা একটু ভালো উপায় হচ্ছে আয়ুর্বেদি। 

অনেকে আছেন দুধ খেতে পছন্দ করেন না, কিন্তু প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়ার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আয়ুর্বেদিক উপায় দুধের সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিস রোগের জন্য অনেক উপকারী। এখন ডায়াবেটিস আয়ুর্বেদিক  কিভাবে কাজ করে  কয়েকটি উদাহরণ দাওয়া হলো: এন্টি ইনফ্লামেটেরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট  এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে দারুচিনি নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।  

দুধের সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে দুধে ও দারুচিনিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের শর্করা হ্রাস করে। দারুচিনি ও দুধ একসঙ্গে খেলে রক্তে চিনি বাড়বে না। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। দারুচিনি দুধ তৈরি করবেন দুই চামচ দারুচিনির গুড়া দুধের সাথে মিশিয়ে ২০ মিনিটের জন্য ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। পরে দুটি ঠান্ডা করে খেতে পারেন। এভাবে ডায়বেটিস রোগে আয়ুর্বেদিক কাজ করছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা এর শেষ কথা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ডায়াবেটিসের ক্ষতি এড়ানো জন্য ও রক্তের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য এই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবহার করা হয়। আমরা সকলেই উপরোক্তা আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভেষজ চিকিৎসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং কিভাবে আমাদের কাজে আসে। আমরা জেনেছি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা এটা আমরা কিভাবে বুঝবো,ডায়াবেটিস চিকিৎসার টার্গেট তালিকা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব ভেষজ খাবার খেতে হবে,ডায়াবেটিস রোগে আয়ুর্বেদিক যেভাবে কাজ করে। সকল বিষয়গুলো আমরা ভালোভাবে জেনেছি।উপরে উল্লেখিত ভেষজ উপাদান গুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার অনেকটাই সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url