ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন

ডায়াবেটিকস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। আমাদের চারপাশে ডায়াবেটিকস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। খুব আস্তে আস্তে আক্রমণ করে ডায়াবেটিকস রোগটি। ডায়াবেটিকস রোগের তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। তাই আমরা আজকে ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন। বাংলাদেশে প্রায় ডায়াবেটিস রোগী আছে ৫.২%। এদের মধ্যে অনেকেই জানেনা তারা ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিকস রোগে না জানার রুগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

কারণ ডায়াবেটিকস ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীরের অন্য কোন রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।যেমন: প্যারালাইসিস, বা স্টোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। ২৫ গুণ বেশি চোখের সমস্যা দেখা দেয়। ২-৩ গুণ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা রয়েছে। কিডনি ড্যামেজ ও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। তা আমাদের সকলকে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ২৪ ঘন্টা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। তাই আমাদের সকলকে ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানতে হবে। ডায়াবেটিকস রোগটা কি এই বিষয়ে জানতে হবে। সপ্তাহে একদিন কমপক্ষে চারবেলা সকালে ও রাতে খাবার আগে ও পরে ডায়াবেটিকস বা রক্তের সুগার পরীক্ষা করা উচিত।

সূচিপত্র :  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন

তাহলে বিস্তারিত  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

ডায়াবেটিকস কী

ডায়াবেটিকস শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা যা আমাদের শরীর যখন নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা শরীরে তৈরি হওয়া ইনসুলিন কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। এর কারণে রক্তে গ্লুকোজের ও শর্কারার মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। ডায়াবেটিকস রোগটি রক্ত গ্লুকোজ ও চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। 

ডায়াবেটিকস সম্পর্কে বোঝার আগে ইনসুলিনের গুরুত্ব বুঝতে হবে। সাধারণত ইনসুলিন হলো একটি হরমোন। ফ্যাট - কার্বোহাইড্রেট গুলো নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন। গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে না ইনসুলিন ছাড়া। আমাদের শরীরে যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়ার পরে সেই খাবার শর্করাকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ বা চিনিতে পরিণত করে।

ইনসুলিন শরীলের কোষগুলোকে চিনি গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়। শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে এই চিনি গুলো কাজ করে। ইনসুলিন যখন তৈরি হতে পারে না সঠিকভাবে কাজ করে না তখনই ডায়াবেটিকস হয়। ডায়াবেটিকস রোগের প্রথম থেকে চিকিৎসা না করলে ডায়াবেটিকস অনেক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তাই  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

ডায়াবেটিকস রোগের লক্ষণ কী

ডায়াবেটিকসের সাধারণত দুইটির রূপ রয়েছে টাইপ ১ ও টাইপ ২। তাছাড়া আরও অনেক ধরনের ডায়াবেটিকস হতে পারে যেমন : নিওনাটল ডায়াবেটিকস,গর্ভকালীন ডায়াবেটিকস, জেসটেসানাল ডায়াবেটিকস ইত্যাদ।
টাইপ ১ এ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো-
  • অতিরিক্ত প্রসাবের প্রবণতা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • দুর্বলতা বা ক্লান্তি
  • তীব্র তৃষ্ণা
  • প্রচন্ড ক্ষুধা
  • স্বাভাবিক বিরক্তি
  • বমি বমি ভাব
  • চুলকানি
  • ঝাপঝা দৃষ্টি
  • পেট ব্যথা
ডায়াবেটিকসের খুব সাধারন রূপকে কে টাইপ ২ ডায়াবেটিকস বলা হয়। প্রায় ৯০% লোকের টাইপ ২ ডায়াবেটিকস হয়ে থাকে। নিজস্ব ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম টাইপ ২ ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। টাইপ ২ লক্ষণগুলো টাইপ ১ ডায়াবেটিকসের মতো।
টাইপ ২ এর ডায়াবেটিকসের লক্ষণ গুলো হলো -
  • মাথা ঘোরা
  • বগল এবং ঘাড়ের কাছে ছাপ
  • মাথা ব্যথা
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • মেজাজ পরিবর্তন
  • মূত্রনালী সংক্রমণ
  • হাতে এবং পায়ে ঝিনঝিন
  • চুলকানি
  • দ্রুত ওজন কমা
  • তীব্র তৃষ্ণা
  • অতিরিক্ত প্রসাবের প্রবণতা
  • ধীর গতিতে ক্ষতস্থান ঠিক হওয়া
টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিকসের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এরকম লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

ডায়াবেটিকস কাদের হতে পারে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ ধরনের ডায়াবেটিকস দেখা দিতে পারে। বৃদ্ধ ব্যক্তিরা বা মধ্যবয়সী ব্যাক্তিরা সাধারণের টাইপ ২ ডায়াবেটিকস আক্রান্ত হয়। যারা বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করে তাদের ডায়াবেটিকস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অনেক এলাকার লোকেরাও এই ডায়াবেটিকসের ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া। গবেষণায় দেখা গেছে ৬-১৬ শতাংশ গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিকস। অনেকে আছে অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খান, তাদের শরীরে ক্যালোরি ও ফ্যাট বেড়ে যায়। 

এ কারণে ইনসুলিন ও চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। জিনগত কিছু কারণে ডায়াবেটিকস হতে পারে। আমরা অনেকে আছি সকালে নাস্তা করি না। কিন্তু সকালে নাস্তা না খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিকস হতে পারে। সকালের নাস্তা সারাদিনের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা সকালে নাস্তা করা হয় না তাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিকস সৃষ্টি হয়। নিচে কিছু নিম্নলিখিত কিছু ঝুঁকির জন্য ডায়াবেটিকস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যেমন-
  • শরীরে মেদ বেশি
  • যারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না
  • যারা রাতে বেশি খাই
  • শরীরে পরিশ্রম কম করেন
  • যাদের বংশ বাবা-মা রক্তসম্পর্কিত ডায়াবেটিকস আছে
  • নারীদের গর্ভকালীন
  • উচ্চ রক্তচাপ রক্তে কোলেস্টেরল
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন যারা
  • ধূমপান করা
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করা
  • বেশি চা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া
  • যাদের হৃদরোগ রয়েছে
ইত্যাদি মানুষের ডায়াবেটিকস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি তাই  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

যে অবস্থায় ডায়াবেটিক প্রকাশ পায়

শারীরিক পরিশ্রম, পরিমাণ মতো খাবার, ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন রক্তের শনাক্ত করা। অনেকের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিকস রক্তে প্রকাশ পেতে অনেক দেরি হয়। এর ফলে ডায়াবেটিকস শরীরের অনেক ক্ষতি করে ফেলে। অনেকে জানে না ডায়াবেটিকস রোগের প্রকাশ পাওয়ার লক্ষণগুলো। আবার ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত রোগীরাও জানে না ডায়াবেটিকস সম্পর্কে তাই প্রথমে  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

কিন্তু কি করে জানবেন সেটা? ডায়াবেটিকস কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন -ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত ক্ষুধা, শরীরের ওজন কমে যাওয়া। এই লক্ষণগুলো ছাড়াও ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ প্রকাশ পায়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্ক খুব একটা সচেতন নয়। তারা ছোটখাটো সমস্যা গুলোকে পাত্তাই দেয় না। তারা এটা জানে না এই ছোট ছোট সমস্যাগুলো এটা ডায়াবেটিকসের প্রাথমিক লক্ষণ ও ডায়াবেটিকস প্রকাশ পাওয়ার লক্ষন।

এই ছোটখাটো লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে আপনি সচেতন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লক্ষণগুলো প্রকাশ না পেলেও আপনি নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করুন এবং গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা জেনে নিন।শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে গেলে রক্তের সুগার বেড়ে গেলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তখন বুঝে নিতে হবে আপনার ডায়াবেটিকস হয়েছে। তাই  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন।

রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে কেন

আমাদের শরীর একটু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গ্লুকোজ। শরীরের প্রতিটি কোষর এর কাজ করার শক্তি যোগায় গ্লুকোজ। রক্তের মাধ্যমে গ্লুকোজ কোষগুলোতে পৌছায়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার খাবারের সময়ও খাদ্যভ্যাস এর ওপর। কোন কারনে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরের অনেক জটিলতা দেখা দেয়। স্বাভাবিক গ্লুকোজ এর মাত্রা ৬০-১৪০ মিলিগ্রাম। গ্লুকোজের মাত্র বেশি হলে তা ডায়াবেটিকসের লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। 

গ্লুকোজ বেড়ে গেলে রক্তনালী শরীরে স্নায়ু,অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিপদজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক সময় রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকলে কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না। যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিকস রোগীদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন জানেই না তা ডায়াবেটিকস আছে। রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়াকে ডায়বেটিকস বলে। খাদ্যের শর্করা পাকস্থলী ভেঙ্গে গ্লুকোজ বা চিনিতে পরিণত হয়। ফলে রক্ত গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। অগ্নাশয়কে ইনসুলিন নিঃসরণে সংক্ষেপ প্রদান করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে। 

ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন স্কুল ওকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে সাহায্য করে। আর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিকস রোগ ধরা পড়ে। ডায়াবেটিকস রোগের শরীরের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণে স্বাভাবিক তুলনায় অনেক বেশি থাকে। ইনসুলিন এর কাজ কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন টিস্যু গুলো ও কোষ প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পায় না। প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য দেহের মাংস পেশী ও চর্বি ব্যবহৃত হয়। রক্তে অতিরিক্ত চর্বি থাকার জন্য রক্তের আয়তন অনেক বেড়ে যায় ফলে প্রসাবের সাথে গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়। 

রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, ক্ষুধা লাগা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া আরো অনেক কিছু লক্ষণ দেখা যায় ডায়াবেটিকসের লক্ষণ। ডাক্তারের মতে রক্তে গ্লুকোজ বা সরকারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় ডায়াবেটিকস রোগে। তাই ভালো উপায় হচ্ছে আপনার ডায়াবেটিকসের লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করুন ও  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন। 

ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন এর শেষ কথা

আশা করি আপনি ডায়াবেটিকস কি, ডায়াবেটিকস রোগের লক্ষণ কি, ডায়াবেটিকস কাদের হতে পারে, যে অবস্থায় ডায়াবেটিকস প্রকাশ পায়, ও রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে কেন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা হলো ডায়াবেটিকস। ডায়াবেটিকস প্রতিকার করতে হলে নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে তাছাড়া এ রোগ থেকে বাঁচার কোন উপায় নাই।

তাই  ডায়াবেটিকস কি-ডায়াবেটিকস সর্ম্পকে জানুন। আপনি নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ও ডায়াবেটিকস পরীক্ষা করুন। আপনার শরীরের যদি ডায়াবেটিকসের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিকস ও গ্লুকোজের মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অবশ্যই লোকটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিকস কি ডায়াবেটিকস সম্পর্কে জানুন ও অপরকেও জানতে সাহায্য করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url