কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি উপায়

  কিডনিতে পাথর এখন একটি পরিচিত সমস্যা। প্রথম থেকে কিডনি পাথরের চিকিৎসা না করলে বা পাথর দূর করার চেষ্টা না করলে পরবর্তীতে মারাত্মক রূপ নেয়।কিডনিতে পাথর হয় কারণ মিনারেল জমে স্ফটিকের মতো কিছু পদার্থ তৈরি করে কিডনির ভিতরে একে কিডনি পাথর বলা হয়। অক্সালেটারও ডিপোজিশন ক্যালসিয়া এই রোগ সৃষ্টি হয়। স্ফাটিক গুলো আস্তে আস্তে জমে পাথরের আকারের রূপ নাই। পাথরগুলো যখন অনেক বড় হয়ে যায় এবং সরু মূত্রনালীর দিয়ে যায় তখন মূত্রনালী ভিতরে আটকে যায়।এর ফলে প্রসাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় বা প্রসবের গতি কমে য়ায, কারণে অনেক ব্যথা সৃষ্টি হয়। পাথর তৈরি হয় মূলত শরীরের পানির অভাব হলে।আমাদের শরীরে পানি কমে গেলে লবনে মিনারেল সহ প্রস্রাবে অন্যান্য উপাদান কমে যায় বা শুকিয়ে যাই।

অনেকেই ভাবেন কিডনিতে পাথর হলে যে অপারেশন করতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। ছোটখাটো কিছু পরীক্ষা করে কিডনিতে পাথরের আকার  নির্ধারণ করে আপনি  কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায় এ রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। অনেক সহজ কিছু উপায় দূর করতে পারেন কিডনিতে সৃষ্টি হওয়া পাথর।কিডনিতে পাথর হওয়ার অনেক কারণ থাকে। সবচেয়ে  সাধারণ কারণ হচ্ছে এটি ডহাইড্রেশন। আমাদের নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে কিডনিতে পাথর হওয়া ঝুকি  কমাতে সারাদিনে কম করে হলেও ৪ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। কিডনির পাথরে হওয়া  ব্যথা সাধারণত ২০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।

সূচিপত্র :  কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায়

 কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায় এ কিভাবে আপনি পাথর হওয়ার সমস্যা দূর করবেন তা আমরা বিস্তারিত ধাপে ধাপে আলোচনা করব। যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এই  উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে  কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বেশি বেশি পানি খেতে হবে

আমাদের শরীরে কিডনিতে পাথর হবার প্রবণতা বাড়ে শরীরে পানি কমে গেলে। আমি প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানি পান করার ফলে কিডনিতে পাথর দূর করতে সাহায্য করে। পাথরের আকার যদি ছোট হয় তাহলে পরিমাণ মতো পানির মাধ্যমে কিডনিতে পাথর দূর করা সম্ভব।পানি নিউট্রেশন ও মিনারেলস গুলিয়ে দিতে সাহায্য করে কিডনিকে। শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়া কাজেও অপরিহার্য ভূমিকা রাখে পানি। যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তারা প্রচুর পানি খাবেন। কিডনি কে ভালো রাখতে কিডনিকে সুস্থ  রাখতে   সারাদিনে সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।

ধনে পাতা খেতে হবে

দিনের পর দিন বছরের পর বছর কিডনি আমাদের শরীরের ছাঁকনির কাজ করে চলেছে। ধনিয়া পাতা জাদুর মত কাজ করে কিডনি  ভালো রাখতে। হাজারগুণ সম্পন্ন ধনিয়া পাতা। ধনিয়া পাতা বমি বমি ভাব কমায়, পিটের গন্ডগোল কমায়, আলসারসর সরায়,একজিমা সরাই, সতেজ থাকে শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হজমের ও সাহায্য করে। কিডনি ভালো রাখতে এতদিন ধনেপাতা শরবত খাওয়া উচিত। 

কিডনিতে জমে থাকা ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও লবন প্রসবের মাধ্যমে বের করে দেয়  ধনেপাতায়  থাকা উপাদান। এর ফলে কিডনিকে ভালো রাখে।ধনেপাতা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি উপাদান। ধনেপাতায় রয়েছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, থায়ামিন, পটাসিয়াম, ক্যারোটিন, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, কার্বনহাইড্রেট,ক্ষণিক পদার্থ। ধনেপাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি যা খেলে শরীরে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ থাকে ফলে কিডনি সুস্থ  ও ভালো থাকে।

তুলসি পাতার রস খেতে হবে

এক সময় মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে তাদের অসুখ চিকিৎসা নিতো। বিভিন্ন লতা পাতা গাছপালা রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন মানুষ আধুনিক হয়েছে ফলে এইসব পরিত্যাগ করছে। ঔষধিগাছ  একটি গাছের মধ্যে আমাদের সবার পরিচিত তুলসীগাছ। তুলসির পাতা বিভিন্ন রোগের উপকারিতা রয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পটে  তুলসির পাতা খেলে প্রাকৃতিকভাবে পাথর দূর করে।

শরীরে  ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না তুলসী পাতায় থাকা ডিটাক্সিফাইং এজেন্ট। এর ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তুলসী পাতার রস, সারাদিনে এক গ্লাস পান করলে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। কিডনিতে পাথর হলে ৬ মাস টানা তুলসী  রস পান করলে প্রস্রাবের সঙ্গে পাথর বলে বেরিয়ে আসে। তুলসীপাতা  বিভিন্নভাবে খেতে পারেন, তুলসীপাতা জুস, চা, সরবত, রস ইত্যাদি। তুলসীর রস বিভিন্ন রোগের উপকারিতা হিসেবে কাজ করে।

শিমের খোসা ও বিচি খেতে হবে

বিশেষজ্ঞরা বলে কিডনিতে পাথর দূর হওয়া শীমের বিচি অনেক উপকারী। শীমের বিচি  সারারাত একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর পানিতে বা প্রেসার কুকারে  সিদ্ধ করতে হবে। পরে একটি মুসলিম কাপড় বা একটু সুতি কাপড় এর মাধ্যমে বিচিগুলো থেকে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এমন অবস্থায় সব থেকে আট ঘন্টা রেখে দিতে হবে। শীমের বিচি যে পানি ঝরবে পানি পান করুন। এভাবে প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এইভাবে শিমের খোসা ও বিচি খেলে কিডনি তে পাথর দূর কারা সম্ভব।

ডালিম খেতে হবে

ডালিমের রস বহুশতাব্দী থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে কিডনির কার্যকারিতা উন্নতির জন্য। কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে  অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যুক্ত ডালিম।  পটাশিয়াম রয়েছে ডালিমের রসে। কিডনিতে  পাথর গুলোকে বড় হতে দেয় না পটাশিয়াম খনিজ। কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।আ্যসিডিটির মাত্রা কমিয়ে আনে প্রস্রাবে।আমাদের শরীরে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস সাথে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডালিমের রস।আমাদের কিডনি অনেক সময় দুর্বল হয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। 
কিন্তু ডালিম  অনেক বেশি উপকারী আমাদের কিডনির জন্য। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষেরই কিডনি নষ্ট বা কিডনিতে  পাথরের ভুগছে। আপনি যদি আপনার কিডনি ভালো রাখতে চান তাহলে শহীদ ডালিম খাবেন। আপনি এক মাসে ৪ টা থেকে ৫ টা ডালিম খেতে পারেন। আপনি যদি প্রতিমাসে চারটা থেকে পাঁচটা ডালিম খান তাহলে আপনি অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। কিডনিতে পাথর সহ কিডনির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ সাহায্য করে ডালিম। তাই  কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায় এর মধ্যে ডালিমের রসের উপকারিতা অনেক।

 লেবু খেতে হবে

বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে লেবুর রস  পান করা উচিত কিডনিতে পাথরের জন্য।  সাইট্রেট এসিড থাকে লেবুতে যা মূত্রনালীতে ক্যালসিয়াম দূর করে ফেলে। ফলে পাথর তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে। এবং পাথরগুলো ভেঙে বের করে দেয়। আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিন গ্লাস লেবুর পানি পান করতে হবে তাহলে প্রসাবের পরিমাণ বাড়বে। প্রতিদিন লেবুর রস পান করলে প্রাকৃতিক উপায়ে পাথর বের হয়ে আসবে। লেবুর রসে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

বেশ যন্ত্রণাদায়ক কিডনিতে পাথর হওয়া। ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের জীবন দশায় কিডনি পাথরের ৮.৮%সম্মুখীন হবে। ২০২২ সালে একটি ক্লিনিকাল  ট্রায়লে দেখা গেছে, সারাদিনে আধা কাপ লেবুর রস কিডনিতে পাথর রোগীদের সমস্যা কমানো গেছে।

তাই কিডনিতে পাথর অপসারণ এর জন্য অনেক কার্যকারিতা হচ্ছে লেবুর রস।  কিডনির পাথর থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে খান। কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি  উপায় মধ্যে লেবুর রস খেতে হবে। এমনিতে পাথর দূর করতে অনেক সাহায্য করে।

আপেল সিডেল ভিনেগার খেতে হবে

আপনারা অনেকেই জানেন আপেল সিডেল ভিনেগার পেটের জন্য অনেক উপকারী। শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে এর অনেক ভূমিকা রয়েছে।  অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে আপেল  সিডেল ভিনেগার।ভিটামিন বি এবং সির  মতো প্রয়োজনীয়  পুষ্টির উপাদান রয়েছে অ্যাপেল সিডেল ভিনেগারে।কিডনিতে পাথর নরম হয়ে গলাতে সাহায্য করে অ্যাপেল সিডেল ভিনেগার। ব্যথা কমাতে  এটি অনেক  সাহায্য করে।

কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে একটি সুস্থ ব্যক্তি ক্ষেত্রে। ৯০০০ মানুষের ওপর ২০১৯ সালে গবেষণা করে পাওয়া গেছে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভব না অনেক কম যারা নিয়মিত আপেল সিডর ও ভিনেগার আর অভ্যাস রয়েছে। কিডনি ভালো রাখতে আপেল সিডেল ভিনেগার পূর্ণ ভূমিকা পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
আপেল সিডেল  ভিনেগার এর সাথে প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে পান করুন।তবে খেয়াল রাখবেন একদিনে ১৬ চামচ এর বেশি না খাও। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে বা আপনি ইনসুলিন নিন তাহলে কি খারাপ আপনার কোন প্রয়োজন নাই।কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি উপায় মধ্যে  আপেল সিডেল ভিনেগার খেতে হবে।

কালো জিরা খেতে হবে

স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী উপাদান হলো কালোজিরা। কালোজিরার শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো দূর করে।  কালো জিরা কিডনিতে ক্যালসিয়াম  অক্সালেট যা কি কডনিতে পাথর দূর করতে সাহায্য করে।হালকা গরম পানিতে কালিজিরা ও একটু মধু মিশিয়ে যদি নিয়মিত পান করা হয় তাহলে কিডনিতে পাথর দূর করার জন্য  অনেক উপকারে আসবে। কিন্তু পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। কালিজিরা কিডনি কে ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা করে।

কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি উপায় এর শেষ কথা

আজ আমরা জেনেছি কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি উপায় সম্পর্কে। কিডনি পাথর হলে আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। অনেকে আছি ভয় পেয়ে যায়। চিন্তিত ও ভয় না পেয়ে আপনারা কিডনিতে পাথর দূর করার ঘরোয়া ৮ টি উপায়আপনারা মেনে চললে দেখবেন কিডনিতে পাথর দূর করা সম্ভব। উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানা থাকলে আমরা অল্পতেই সচেতন হয়ে নিজেরাই ঘরোয়া ভাবে কিডনি পাথর দূর করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url