কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয়

একটি ভয়াবহ অসুখ হলো কিডনিতে পাথর। কিডনিতে পাথর হলে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। তাই কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় তা নিয়ে আজ আলোচনা করব। কিডনিতে পাথর হলে এমন খাবার খেতে হবে যা শরীরকে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারে। কিডনি আমাদের শরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। কিডনি যখন সে ক্ষতিকর পদার্থগুলো বের করতে পারে না তখন কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়।

কিডনিতে বেশিরভাগ সময় ইউরিক অ্যাসিড কিছু খনিজ জমে থাকে। কিডনিতে রোগ থাকলে আমাদের সচেতন হতে হবে। আর আমাদের অবশ্যই জেনে নিতে হবে কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ গুলো। এখনো অনেক মানুষ মনে করে অপারেশন করতে হবে কিন্তু সব ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন নেই পাথর যদি ছোট আকার হয় তাহলে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা বের করা যেতে পারে। আপনি আপনার খাদ্যঅভ্যাস ও লাইফস্টাইল নজর রাখলে আপনি আপনার শরীর ও কিডনিকে ভালো রাখতে পারবেন। কিডনিতে পাথর যদি বড় হয় তাহলে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এইজন্য নিজেকে বদলাতে হবে।

সূচিপত্র :কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয়

আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয়।

পরিমাণ মত পানি খেতে হবে

কিডনির পাথর দূর করতে হলে অবশ্যই পানি পান করতে হবে। আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি হলে প্রস্রাব বেশি হয় না। এইজন্য আমাদের দেহের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিডনিতে জমতে পারে নানা খনিজ পদার্থ প্রস্রাব কম হলে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। 

পর্যাপ্ত পানি পান করলে কি পাথর সৃষ্টি হতে পারে না। কিডনি কে সাহায্য করে পানির নিউটেশন ও মিনারেল গুলো। আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পানি। কিডনিতে পাথরের সমস্যা থাকলে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত ১২ গ্লাস পানি পান করুন। তাহলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় তার মধ্যে পরিমাণ মতো পানি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি।

সোডিয়াম যুক্ত খাবার কম খেতে হবে

অতিরিক্ত সোডিয়াম জাতীয় খাবার শরীরের ক্ষতি করে।কিডনিতে পাথর তৈরি করে। যেমন লবনে সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। লবন আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় গেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। সোডিয়াম এর পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে পানি জমতে শুরু করে।কিডনিতে পাথর থাকলে শরীর থেকে বাড়তি লবণ ও সোডিয়াম জাতীয় জিনিস বের হতে পারে না ফলে মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি হয়।

অক্সালেট যুক্ত খাবার কম খেতে হবে

অ্যান্টি- নিউট্রিয়েন্ট হলো অক্সালেট বা অক্সালেক অ্যাসিড যা উদ্ভিদ জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ফল, শাক,সবজি ইত্যাদিতে। অক্সলেট নিজেই উৎপাদন করে আমাদের শরীর অনেকটাই। প্রস্রবে অক্সালেট নির্গমন বৃদ্ধি পায় যখন শরীরের অক্সালেটের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রবণতা বাড়ায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্ফটিক গঠনে।বিভিন্ন খনিজ ও অক্সালেট ক্যালসিয়াম একসঙ্গে হয়ে কিডনিতে পাথর জমতে সাহায্য করে। 

তাই কিডনিতে পাথর ধরা পড়লে অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে বলে। শরীরে অক্সালেট বাড়তে পারে ক্যালসিয়াম কমে গেলে। কিডনিতে পাথর তৈরি করা অন্যতম কারণ অক্সালেট। তাই খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। তাই অক্সালেট যুক্ত খাবার কম খেতে হবে। কিডনি পাথর দূর করতে কি খেতে হয় তার মধ্যে অক্সালেট যুক্ত খাবার কম খাওয়া ভালো।

প্রাণিজ আমিষ কম খেতে হবে

প্রাণী ও আমিষ যেমন দুগ্ধজাত খাবার মাছ মাংস বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। প্রোটিন ও প্রাণিজ খাওয়ার ফলে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় এবং সাইট্রেটর এসিড কমতে থাকে। পিউরিন এর সমৃদ্ধ পশুর প্রোটিনের উৎসগুলো। এর ফলে ইউরিক এসিড ভেঙে যায় ফলে ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর তৈরি করে। উদ্ভিদ জাত খাদ্যে প্রাণিজ ও আমি পদার্থ কম থাকে।এ কারণে কিডনিতে পাথর জন্য প্রাণিজ আমি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। তাহলে কিডনি সুস্থ থাকবে শরীর ভালো থাকবে।

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে

ক্যালসিয়াম কিডনির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিডনি তে পাথর হয় না যদি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে শরীরে। আমাদের অনেকের একটি ভুল ধারণা আছে যে কোন ক্যালসিয়াম খেলে হয়তো বা কিডনির পাথর হবার আশঙ্কা কমে যায়। তাই অনেকে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খায় না। এটি একেবারে ভুল ধারণা। একজন মানুষের প্রতিদিন তিনকাপের মত দুধ ও দগ্ধজাত খাবার খাওয়া উচিত ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে ও কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি কমাতে। 

অনেকে আছে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না খেয়ে সাপ্লিমেন্ট খায় কিন্তু তা শরীরের ক্ষতি করে। তাই দই, চিজ, দুধ খেতে হবে। তাছাড়া টোফু, ডাল সবুজ রঙের শাক ও ক্যালসিয়াম থাকে। ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দৈনিক চাহিদা হলো একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে। ৫০- ৭০ বয়স তাদের জন্য ১২০০মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই আমাদের দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেতে হবে

পাথর দূর করতে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কিডনির জন্য অনেক প্রয়োজন ক্যালসিয়াম তেমনি প্রয়োজন ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার। শরীর যদি ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার বা ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে তখন কিডনিতে পাথর হয়। আমাদের সবাইকে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন স্যালমন, মাশরুম,চিজ,মাছের তেল ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হল সূর্য। তা ছাড়া আমরা এ ধরনের বিভিন্ন খাবারের ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি। আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের এর ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে কিডনিতে পাথর শহর বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ভিটামিন ডি এর ঘারতি পূরন করার জন্য আমাদের সকলকে নিয়মিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেন আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে কিডনি সুস্থ থাকে। কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় তার মধ্যে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে।

আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে

কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় এর মধ্যে আঁশ জাতীয় খাবার আমাদের খেতে হবে। আশঁ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত আজ জাতীয় খাবার গ্রহণে স্বাস্থ্যর জন্য অনেক ভালো। অনেক কয়টি রোগের প্রতিশোধক হিসেবে আশঁ জাতীয় খাবার কাজ করে।
আশঁ জাতীয় খাবারের মধ্যে হলো : ডাল, বাদাম,শুকনা নাবিকেল, খেজুর, মিষ্টি আলু, ছোলা, টমেটো, মটরশুটি, ব্রকলি, ওটস ইত্যাদি জাতীয় আশঁ খাবার আমাদের খেতে হবে কিডনির পাথর দূর করার জন্য এবং শরীরকে ভালো রাখার জন্য।
আপনার শরীরে আশঁযুক্ত খাবার বাড়াবেন যেভাবে -
  • সারাদিনে কম করে হলেও পাঁচ ধরনের ফল বা সবজি খেতে হবে.।
  • যেকোনো ফল জুস করে খাওয়া থেকে বিচি সহ আস্তো ফল খান। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আশঁ থাকে।
  • মাংস খাওয়া কমায় দিতে হবে, এবং বাদাম শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে।
বাদামি চালের ভাত খেতে হবে সাদা চালের পরিবর্তে। আমাদের সকলকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে আজ যুক্ত খাবার খেলে প্রচুর পানি খেতে হয়। তাই আজ যুক্ত খাবার খাওয়ার পরে আমাদের পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় এর শেষ কথা

কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। আমরা আরো আলোচনা করেছি কিডনির পাথর দূর করতে কি খেতে হয় না। উপরোক্ত বিষয়গুলো আমাদের ভালোভাবে পড়তে হবে ও বুঝতে হবে এগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা থাকলে খুব সহজে আমরা কিডনিতে পাথর দূর করতে পারবো। তাই কিডনিতে পাথর করতে হলে আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে হবে খাওয়া দাওয়ার পরিবর্তন করতে হবে। তবে আমরা এ মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url