কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায়
আমাদের দেহে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি অঙ্গের মধ্যে কিডনি একটি। আমাদের শরীরে
দুইটি কিডনি থাকে। কিডনি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিডনি আমাদের শরীরের পানির
ভারসাম্য বজায় রাখে। কিডনি শরীরের দূষিত বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে ছেকে ফেলে।
মানবদেহের এই অঙ্গটির সমস্যা হলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
নীরব ঘাতক বলা হয় কিডনি রোগকে। প্রথম অবস্থায় কিডনি রোগ ধরা পড়ে না। অনেক বেশি
সমস্যা হওয়ার পরে এই রোগটি ধরা পড়ে। চিকিৎসা ও বেশ ব্যয়বহুল কিডনি রোগের। কি
করলে কিডনি ভালো থাকবে তা জানা উচিত। আজ আমরা জানবো কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায়।
সূচিপত্র : কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায়
- প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
- স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- মদপান ও ধূমপান ত্যাগ করুন
- ব্যথার ওষুধ কম খান
- পোটিন বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে হবে
- নিয়মিত ডাক্তরের পরামর্শ নিতে হবে
- পরিমাণ মত ভিটামিন সি খেতে হবে
- কোমল পানীয় পান করা যাবে না
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- লবণ কম খেতে হবে
- রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে
- পযার্প্ত ঘুমাতে হবে
- কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর শেষ কথা
পযাপ্ত ঘুমাতে হবে চলুন কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেই।
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
কিডনি ভালো ও সুস্থ রাখার জন্য আমাদের প্রধান কাজ শরীরে পর্যাপ্ত তরল বা
হাইড্রেটেড রাখা। কিডনিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে সাহায্য করে পানি। প্রস্রাবের
মাধ্যমে শরীর থেকে দূষিত বজ্র বের করে দেয়। আমাদের সকলকে পর্যাপ্ত পানি পান করতে
হবে কিডনি ভালো রাখতে। ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত কিডনি ভালো রাখার জন্য।
পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া উচিত। আমাদের শরীরে অতিরিক্ত
ঘাম ঝরলে পানির চাহিদা আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। কিডনিতে পাথর হয় না পর্যাপ্ত
পরিমাণে পানি পান করলে। কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: কিডনি ব্যথা দূর করার ঘরোয়া ৫ টি উপায়
স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে
কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার ফলে। খাবারের প্রতি সচেতন
থাকতে হবে তা না হলে কিডনিতে জমতে পারে টক্সিন। পটাশিয়ামের মাত্রা যদি রক্তে
বেশি থাকে তাহলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার সাধারণত
শরীর সুস্থতা বজায় রাখে। স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের তরল, পুষ্টি উপাদান সমূহ,
পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি যোগায়। স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগব্যাধি
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন খাবারের
তালিকা প্রচুর পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি ডাল জাতীয় প্রোটিন ও মাছ রাখতে হবে।
আমরা প্রতিদিন শরীরের যতটুকু ক্যালরি খরচ করি, ঠিক তার কাছাকাছি ক্যালোরি খাদ্য
আমাদের গ্রহণ করতে হবে এতে শরীর ঠিক থাকবে। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে আমাদের
প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফল খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার শরীরের
কিডনিসহ আরো অঙ্গের ভালো প্রভাব ফেলে। আপনি অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত
চর্বিযুক্ত খাবার, ইত্যাদি খেলে কিডনির ক্ষতি করতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে
হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর খাবার কিডনির জন্য খুবই ভালো।
যেমন-
- সবজির মধ্যে যেসব খাবেন- শশা, লাউ, ডাটা, পটল, কুমড়া, ঝিঙ্গা ইত্যাদি।
- ফলের মধ্যে যেসব খাবেন -পিয়ারা, আপেল, পাঁকা পেঁপে, আনারস, বেল ইত্যাদি।
- শাক মধ্যে যেসব খাবেন -ডাটা শাক, লাউ শাক, কলমি শাক, লাল শাক ইত্যাদ।
এই সকল স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার জরুরী।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যায়াম। আপনার শরীরের কিডনি
রোগের ঝুঁকি, রক্তচাপ, পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। মনে রাখবেন -
অতিরিক্ত ব্যায়াম এর ফলে কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে। নিয়মিত শরীরকে
হাইড্রেটেড রেখে ব্যায়াম করতে হবে।
আরো পড়ুন: কিডনি রোগের ১০ টি উপসর্গ
মদপান ও ধূমপান ত্যাগ করুন
আমরা সবাই জানি ধূমপান হাটের ক্ষতি করে। কিন্তু আমরা জানি না যে ধূমপান কিডনিরও
অনেক ক্ষতি করে। কিডনি রোগ রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে।
ক্ষমতা কমে যায়। ধূমপান ও মদ্যপান বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
আর কিডনিতে যখন এই রক্ত পৌঁছায় তাদের কাজকর্ম ক্ষমতা কমে যেতে পারে। প্রায় ৫০
শতাংশ ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে কিডনি ক্যান্সারের।ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ
করতে হবে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশিভাগ প্রায় অনেক ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথার ওষুধ
খাওয়ার কারণে প্রভাব পড়ে হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। ডাক্তারের পরামর্শ না
নিয়ে নিজে নিজে ব্যথার ওষুধ কিনে খেলে নিজের অজান্তে কিডনি বড় ক্ষতি হয়ে যেতে
পারে। ব্যাথার ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দিতে হবে।
পোটিন বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না
অতিরিক্ত প্রানিজ আমিষ ও গরুর মাংস জাতীয় খাবার খেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে।
ফাস্টফুড, চিপস, লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কিডনি জন্য ক্ষতিকর।
কিডনির কোষ গুলো দুর্বল করে অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার। তাই খাবারে বেশি
পরিমাণে প্রোটিন খাবার এড়িয়ে ডাল জাতীয় প্রোটিন খাবার খেতে হবে । কিডনি ভালো
রাখার ১৫ টি উপায় এর মধ্যে এটি একটি।
আরো পড়ুন: কিডনি ব্যথা দূর করার ঘরোয়া ৫ টি উপায়
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে হবে
রক্তে উচ্চ শর্করা পরিমাণ মোটেও ভালো না কিডনির জন্য। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে
গেয়ে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। বিশেষ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে
ডায়াবিটিসের পরিমাণ বেড়ে যাবে। যা কিডনি ইফেক্ট ফেলবে। তাই আমাদের শরীরে কোনো
ভাবেই রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়ারো যাবে না । যদি কখন বুঝতে পারেন আপনার শরীরে
রক্তে শর্ককার মাত্রা বেড়ে গছে তখনি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান নিয়মিত এবং
ডাক্তারের পরামর্শ ওষুধ খান শর্কারা মাত্রা ঠিক রাখতো।
নিয়মিত ডাক্তরের পরামর্শ নিতে হবে
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা, থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার
সম্ভাবনা অনেক থাকে। যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছেন বা কিডনি রোগে আক্রান্ত তারা
নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।নিয়মিত ডাক্তারের
পরামর্শ না নিলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহ ক্ষতি হতে পারে। মারাত্মক
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায়-এর মধ্যে নিয়মিত
ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পরিমাণ মত ভিটামিন সি খেতে হবে
ভিটামিন সি খাবারের মধ্যে লেবুর রসে অনেক সাইট্রিক এসিড থাকে। রক্তকে ফিল্টার করে
সেখান থেকে দূষিত পদার্থ করে আনতে লেবুর রস সাহায্য করে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
খেতে হবে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের ক্যালসিয়াম অক্সালেট দ্রবীভূত হয়।কিডনি
ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর মধ্যে আপনি ভালো রাখতে পরিমাণ মতো ভিটামিন সি খেতে
হবে। ৫০০ মিলিগ্রাম এর কম মাত্রায় ভিটামিন সি খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত ভিটামিন
সি খাবার খেলে কডনি তে পাথর হতে পারে।
কোমল পানীয় পান করা যাবে না
আমরা অনেক সময় কোমল পানীয় পান করে থাকি।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা কোনো ভালো খাররের
পরে কোমল পানীয় পান করে থাকি। অনেকে কোমল পানি খেয়ে থাকে পানির বদলে।এই কোমল
পানীয় পানের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় । সেজন্য আমাদের এই কোমল
পনীয় পান করা যাবে না । বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংক বা কোমল পানি কিডনির জন্য
ক্ষতিকর। এইজন্য কোমল পানি এড়িয়ে চলতে হবে। যদি তৃষ্ণা পাই পানি খেয়ে নিন।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
আমাদের দেশের অধিকাংশ কিডনি রোগীরা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। ডায়াবেটিস কিডনি
রোগের অন্যতম কারণ। ডায়াবেটি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে রক্তের শর্করার পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। তাহলে কিডনি জটিলতা এড়াতে পারবে। আমাদের যাদের ডায়াবেটিস
রোগ রয়েছে তাদের জেনে রাখা উচিত কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন
কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। ছয় মাস পর পর প্রস্রাবে আমিষ
এর পরিমান পরীক্ষা করতে হবে। কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর মধ্যে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ অন্যতম একটি উপায়। তাই নিয়মিত ডায়াবেটিক পরীক্ষা করতে হবে
লবণ কম খেতে হবে
কিডনির জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে লবণ। আমাদের প্রতিদিন এক চামচ লবনের চাহিদা থাকে।
অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের না কিডনি। ফলে অতিরিক্ত সোডিয়াম টুকু রয়ে যায়
কিডনিতে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে কিডনি সুস্থ রাখতে।
রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে
আপনার কিডনি রোগ হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের কারণে। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ইত্যাদি
থেকেও কিডনির সমস্যা শুরু হয়। কিডনি তো সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় রক্তচাপ
১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে। সবসময় রক্তচাপ ১০৩/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করতে হবে
আপনি ভালো রাখতে। লবণ কম খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
রাখে।রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুন: কিডনির ব্যথা কোথায় হয়-কিডনি রোগের ঔষধ কি
ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে
কিডনি উপর বাড়তি চাপ পড়ে ওজন বৃদ্ধি পেলে। উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায়
রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরচর্চা স্বাস্থ্যকর খাবার এর মাধ্যমে ওজন ঠিক
রাখতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর
মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পযার্প্ত ঘুমাতে হবে
ভালোভাবে ঘুম না হলে বিভিন্ন সমস্যা হয়,অনেকেই জানেন এই কথাটা। অপর্যাপ্ত ঘুম
কিডনির উপর প্রভাব পরে। এইজন্য অল্প ঘুম কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিডনি ভালো রাখার
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো রাতে ঘুৃম। একটু পর পর ঘুম ভাঙ্গা কিডনি
রোগের অন্য একটি কারণ। পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমাতে হবে।যাতে আপনার শরীর সুস্থ থাকে
এবং কিডনিও সুস্থ থাকে।
কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায় এর শেষ কথা
কিডনি রোগের সাধারণ লক্ষণ ও কিডনি ভালো রাখার উপায় বিষয়গুলো সম্পর্কে
প্রত্যেককে জানতে হবে। এই বিষয়গুলো সম্পকে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই জানে না।
এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার আগ্রহ কম থাকে সাধারণ মানুষের। আমাদের সকলকে
সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এমন কি কিডনি ভালো রাখার ১৫ টি উপায়
সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের সুস্থতার জন্য যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url