ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম

সারা বিশ্বে প্রতিবছর ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালিত হয় ১৪ নভেম্বর। একটি মাইলফলক হলো ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন আবিষ্কার। এই ইনসুলিন জীবন বাঁচাচ্ছে লাখ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর শত বছর ধরে। ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন এর সম্পর্ক অনেকটা তাপমাত্রা ও তাপ সম্পর্কে মতো।
আমাদের খাবার খাওয়ার পর বেশিভাগ অংশ শর্করা পরিণত হয় এবং সেই শর্করা শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয় ইনসুলিন নামের এ হরমোন। ইনসুলিন ছাড়া আমাদের কোষগুলোতে শর্করা পৌঁছে দেওয়ার কোন উপায় বা পদ্ধতি নাই। বর্তমান সময়ে বাজারে যেসব ইনসুলিন পাওয়া যায় তার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সঠিকভাবে বুঝতে হবে।আজ আমরা ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সম্পর্কে জানব।

সূচিপত্র :ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম

তাহলে আসুন ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেনি।

ইনসুলিনের প্রকারভেদ

বর্তমানে অনেক ধরনের ইনসুলিন ব্যবহার করা হয় ডায়াবেটিস চিকিৎসায়। প্রত্যেকটি ইনসুলিন এর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্য পদ্ধতি অনেকটা ভিন্ন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধরন  রয়েছে ইসমাইনের যেমন - 

  • মিক্সড ইনসুলিন 
  • র‍্যাপিড অ্যাক্টিং ইনসুলিন 
  • শর্ট অ্যাক্টিং ইনসুলিন 
  • ইন্টারমিডিয়েট অ্যাক্টিং ইনসুলিন 
  • আলট্রা লং অ্যাক্টিং ইনসুলিন 
  • লং অ্যাক্টিং ইনসুলিন

মিক্সড ইনসুলিন 

খাওয়ার সময় ইনসুলিন নিতে হয়। এই ধরনের ইনসুলিন ১০ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। এই ইনসুলিন নেওয়ার পাঁচ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পরে কাজ শুরু করে। সকালের নাস্তা ও রাতের খাবারের এ ইনসুলিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট আগে  নেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ইনসুলিন এর পরিচিত ব্র্যান্ড রয়েছে এর মধ্যে ডায়াসুলিন ৩০/৭০, অ্যনসুলিন ৩০/৭০, ম্যাক্সসুলিন ৩০/৭০, ইনসুলেট ৩০/৭০।

র‍্যাপিড অ্যাক্টিং ইনসুলিন 

এই ইনসুলিন খাওয়ার পরে অথবা আগে নিতে হয়। ফাস্ট অ্যাক্টিং ইনসুলিন নামে পরিচিত। অনেক দ্রুত কাজ করে এই ইনসুলিন। চার ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে এ ধরনের ইনসুলিন। আমাদের দেশে এ ইনসুলিন ব্যান্ডরয়েছে এরমধ্যে গ্লাইসেট আর, ইন্সুলেট এএসপি, নভোর‍্যপিড পেনফিল।

শর্ট অ্যাক্টিং ইনসুলিন 

র‍্যাপিড অ্যাক্টিং ইনসুলিনের মতোই এই ইনসুলিন কাজের পদ্ধতি। তবে ইনসুলিন সামান্য ধীরগতিতে কাজ করে। খাবার খাওয়ার ২৫ মিনিট আগে ইনসুলিন নিতে হয়।এই  ইনজেকশন ব্যবহারে ৩০ মিনিট পর রক্তে প্রবাহে পৌঁছে এবং ইনসুলিন তিন থেকে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে। বাংলাদেশে এই ইনসুলিনের কিছু পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাসুলিনার আর, ডায়াসুলিন আর, জেনসুলিন আর , পেনফিল ও ইনসুলেটর আর।

ইন্টারমিডিয়েট অ্যাক্টিং ইনসুলিন 

এই ইনসুলিন কে ব্যাকগ্রাউন্ড ইনসুলিন বলা হয়। এই ইনসুলিন অর্ধেক দিন বা সারারাত করে কাজ করে। ইনসুলিন এক থেকে দুইবার নিতে হয়।এই ইনসুলিন নেওয়ার দুই থেকে চার ঘন্টা পরে এর কাজ শুরু করে। এই ইনসুলিন রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত।আমাদের দেশে ইনসুলিনের কিছু পরিচিত ব্যান্ড হলো অ্যনসুলিন এন, ডায়াসুলিন এন, জেনসুলিন এন, ইনসুলেট এন।

আলট্রা লং অ্যাক্টিং ইনসুলিন 

অনেক সময় ধরে শরীরের প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের যোগান দেয় এই  ইনসুলিন। এই ইনসুলিন নেওয়ার ৬ ঘন্টা পরে কাজ শুরু করে। ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে ইনসুলিন ব্র্যান্ড  গুলোর মধ্যে  ট্রেসিবা।

লং অ্যাক্টিং ইনসুলিন

এ ইনসুলিন ধীর গতিতে কাজ করে। একদিন একই সময়ে একবার করে দিনে নিতে হয়। ইনসুলিন না দুই ঘন্টা পরে কাজ শুরু করে। ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত এই ইনসুলিন কাজ করে। আমাদের দেশে এই ইনসুলিনের ব্র্যান্ডগুলো হলো লারসুলিন, সেমগ্লি, ইনসুলেট জিএন। 

ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম গুলোর মধ্যে ইনসুলিনের প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে  ভালোভাবে জানতে হবে।

ইনসুলিন সংরক্ষণ

ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম মধ্যে ইনসুলিন সংরক্ষণ  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইনসুলিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ডিপ ফ্রিজে রাখলে সরাসরি রোদের স্পর্শে রাখলে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। মুসলিম ডিপ ফ্রিজের সংরক্ষণ করা যাবে না। ২-৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হয় নরমাল ফ্রিজেও রাখা হয়। ইনসুলিন এাকবার ব্যবহার করার পরে সুচ  সহঈদের রাখা যাবেনা।

ইনসুলিন ডায়াবেটিস রোগীদের সঙ্গী। অনেকের মনে অনেক কষ্ট রয়েছে ইনসুলিন সংরক্ষণ নিয়ে।তাহলে চলুন সংরক্ষণের উপায়। 
  • ইনসুলিন সংরক্ষণের তাপমাত্রা হচ্ছে ১৫°-২৫° সেলসিয়াস। শীতকালে যদি বাইরের তাপমাত্রা এমন হয় তাহলে আপনি ঘরে এই তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে পারবেন। আর গরম কালে ফ্রিজের নরমাল তাপমাত্রায় ইনসুলিন সংরক্ষণ করতে পারবেন। 
  • ইনসুলিন নেবার ১৫ মিনিট আগে তাপমাত্রায় স্বাভাবিক করে ইনসুলিম নিতে হবে। 
  • বরফে সাথে ডিপ ফ্রিজে ইনসুলিন রাখা যেবে না। 
  • আগুন অথবা সূর্যের আলো বা ইলেকট্রিক ডিভাইস যা গরম ও উষ্ণতা বিকিরণ করে তার আশেপাশে রাখা যাবেনা। 
  • ইনসুলিন রং পরিবর্তন হওয়া দেখলে সেটি ফেলে দেওয়া ভালো। 
  • ইনসুলিন খোলা আকাশ দিনের মধ্যে ব্যবহার করা ভালো এর বেশিদিন সংরক্ষণ করলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।

ইনসুলিন সিরিঞ্জে টানার নিয়ম

ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম মধ্যে  ইন্সুরেন্স সিরিজ টানার  নিয়ম আমাদের জানতে হবে।
  • প্রথমে ঘোলাটে ইনসুলিন যতটুকু দরকার ততটুকু বাতাস ঘোলাটে ইনসুলিনের বোতলে ঢুকিয়ে টেনে বের করে নিন সিরিঞ্জের সুঁচ।
  • এখন যে পরিমাণে স্বচ্ছ ইনসুলিন দরকার সেই মাপের বাতাসে স্বচ্ছ ইনসুলিন এর বোতলে ঢুকিয়ে পরিমাণে ইনসুলিন সিরিঞ্জের টেনে নিতে হবে। 
  • এবার ইনসুলিন ভর্তি সিরিজ টেনে বের করতে হবে। 
  • এখন সুঁচ সুন্দর বোতলে ঢুকিয়ে বোতল উল্টা করে ধরতে হবে। এবং দেখবেন ইন্সুলিনে সিরিঞ্জ এসেছে এরপরে ইনসুলিন সহ সুঁচ ও সিরিঞ্জ টেনে বের করে ফেলুন। 
  • এরপর তাড়াতাড়ি ইনজেকশন নিয়ে নি বেশি নড়াচড়া না করে।

ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন নিতে হয়। অনেকেই সঠিক পদ্ধতি জানেনা এ কারণে শরীরের ভুল স্থানে ভুল দোজ নিয়ে ফেলে।এর ফলে রক্তের সুগার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এবং চামড়ার শক্ত হয়ে  বিভিন্ন সমস্যা  দেখা দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সঠিকভাবে জানতে হবে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম।
  • ইনসুলিন বা ইনজেকশন দেওয়ার পূর্বে বোতলের গায়ে দেখে নিন মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিনা। খেয়াল করুন প্রতি মিলি মিটারে কত ইউনিট ইন্সুলিন আছে। ৪০ ইউনিট না কি ১০০ ইউনিট। ইনসুলিন সিরিঞ্জ ব্যবহার করুন সেই হিসেবে।
  • ইনজেকশন নেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ  তুলা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দ্রব্য হাতের কাছে রাখতে হবে। 
  • ইনসুলিনের বোতল দুই হাতে তালুর মধ্যে ধরে ভালোভাবে ঘুরাই নিন। জোরে ঝাঁকুনি দিবেন না। 
  • ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন পানীয় সাবান দিয়ে।
  • ইনসুলিন যতটুকু দরকার সে পরিমাণে এর মধ্যে টেনে নিন। ৪০ ইউনিট সিরিঞ্জ ও ১০০ ইউনিট ইনসুলিন এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। 
  • এরপরে সুঁচ বোতলের মুখের যে রাবার রয়েছে তার মাঝখান দিয়ে ভেতরে ঢুকাতে হবে। এবং খেয়াল রাখবেন কোনোভাবেই যেন সুঁচ আপনার হাতে না লাগে।
  • সিরিজের ভেতরে বাতাস বোতলে ঢুকিয়ে দিন। 
  • এরপর সু্ঁচ সহ বোতলটি উল্টা করে ধরুন। খেয়াল করবেন এমনিতেই পরিমাণ মতো ইনসুলিন চলে এসেছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ইনসুলিন সিরিজ হালকা টেলে নিন। 
  • এবার ইনসুলিন সিরিঞ্জ বের করে রোগীকে  ইনজেকশন দিন।
  • ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে স্পিড মাখা তুলা দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। 
  • ইনজেকশন দেবার জায়গায় চামড়া টেনে ধরে ৪০ থেকে ৯০ কোনাকুনি ভাবের সুচ ঢুকিয়ে দিন।
  • খেয়াল রাখতে হবে ইনসুলিন চামড়া ও মাংস পেশির মাঝের ফাঁকা স্থানে যেন পৌঁছায়। 
  • ইনসুলিন দেবার স্থান হলো দুই বাহুর বাইরের দিকে, এবং তলপেটের নিচের দিকে দুই পাশে দিতে পারবেন। 
  • প্রতিদিন একই জায়গায়  ইনজেকশন দেওয়া  উচিত না।পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে যেন একই স্থানে দুইবার ইনজেকশন না পরে এক মাসের মধ্যে।

ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম

আপনারা সকলে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম গুলো। আমরা জেনেছি ইনসুলিনের প্রকারভেদ, ইনসুলিন কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, সিরিজ টানার নিয়ম, আমরা আরো জেনেছি ইন্সুলিন ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম। আমাদের সকলকে ইনসুলিন নেওয়ার সময় যত্ন সহকারে ইনসুলিন নিতে হবে। এবং ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হবে। আমরা উপরোক্ত আলোচনায় ডায়াবেটিকস ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। তবে আপনার ডাক্তার কোন বিশেষ পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরণ করতে বললে সে নিয়ম  বা পদ্ধতি মেনে চলবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url