কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার
মানবদেহের রক্ত পরিশোধনে অঙ্গ কিডনি। শরীরের বজ্র পরিশোধন করে কিডনি। আমাদের সকলকে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিত কিডনি ভালো রাখার জন্য। কিডনির অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। কিডনির সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর। আর এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলে যায়। এখন অনেকের মুখে শোনা যায় কিডনি পাথরের সমস্যার কথা। প্রতিবছর, প্রায় অর্ধেক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন।কিডনি পাথরের লক্ষণগুলো নির্ভর করে কিডনিতে পাথর কিভাবে ও কোথায় হয়েছে। আকার আকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিডনিতে পাথর হলে।
কোন ব্যথা বেদনা ছাড়াই অনেকদিন পর্যন্ত শরীরে থাকতে পারে পাথর খুব ছোট হলে। এই কারনে টের পাওয়া যায় না। ডিহাইড্রেশন প্রধান কারণ পাথর তৈরি।অনেকে আছে অনেক গরম আবহাওয়ায় কাজ করে কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করে তাদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে যে পাথর সৃষ্টি হওয়ার ভয় বেশি।মরুভূমিতে, গরম দেশগুলোতে আমাদের এই উপমহাদেশে অনেক স্থানে প্রচুর কিডনি পাথর আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।অনেক সময় প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকেও পাথর হতে পারে। আমাদের শরীরে কিছু খনিজ উপাদান আছে, যা পাথর তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।প্রসাব কম হলে বা কমে গেলে দিতে পাথর হওয়ার ভয় থাকে।কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজ আমরা জানবো।
সূচিপত্র : কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার
তাহলে কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কিডনিকে পাথর হবার কারণ
কিডনি তে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ ডিহাইড্রেশন। প্রস্রাব অনেক ঘন হলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। তখন শরীর থেকে প্রতিনিয়ত পানি কমে যায়। অনেকে আছে পর্যাপ্ত পানি পান করে না তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাছাড়া আরো অনেক কারণে কিডনিতে পাথর জমতে পারে। অনেক বেদনাদায়ক কিডনি তে পাথর জমা। কিডনিতে পাথর যদি মূত্রনালী তে আটকে যায় তাহলে মূত্র ত্যাগে অনেক অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
এমন অবস্থায় হাসপাতালে বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশনের মাধ্যমে বা পাথর গুড়া করে বের করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কিডনিতে পাথর যদি আগে থেকে জানা যায় তাহলে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে না। কারণ পাথর ছোট থাকা অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ওষুধ সেবন ও খাদ্য ভাস পরিবর্তন করলে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যাবে।বেশি ছোট আকৃতির পাথর সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়।
কিডনিতে পাথর হবার অনেক কারণ রয়েছে এগুলোর মধ্যে হলো কম জল পান করা,অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার, ওজন কমানো বা সার্জারি, খুব বেশি বা খুব কম ব্যায়াম, ইত্যাদি।অনেকের ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়া পারিবারিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে অনেকবার কিডনি ইনফেকশন হওয়া এবং এর জন্য যথাযথ চিকিৎসা না করা। অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ পানি বা দুধ খাবার খাওয়া।শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত থাকা।
অধিক পরিমাণে ফুক্টোজ খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হতে পারে।প্রস্রাবে অনেক মাত্রই লবণ, মূএথলিতে দীর্ঘ সময় প্রস্তাব জমে থাকা, গরম আবহাওয়া, প্রস্তাবে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা, কিডনিতে পাথর হওয়ার কিছু কারনকিডনিতে পাথর আবার লক্ষণ ও প্রতিকার গুলোর মধ্যে কডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ অন্যতম।
কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ
অনেকর কিডনিতে পাথরগুলো বালি দানার মতো ছোট। আবার কিছু কিছু নুড়ি পাথরের মত বড়।পাথর যত বড় তুই পাথরের লক্ষণগুলো তত বেশি লক্ষণীয়।জ্বর, বমি বমি ভাব, পিঠে ব্যথা, কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ। কিডনিতে পাথর হওয়া আরো বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে।
- প্রস্রাবে রক্ত
- বমি বমি ভাব
- জ্বর এবং সর্দি
- পেটও পিঠে ব্যথা অনুভব করা
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা
- প্রাস্রাবে রক্ত বের হওয়া
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া
- শরীরে পানি স্বল্পতা হওয়া
- অতিরিক্ত মাত্রার শরীর ঘামা
কিডনি পাথর বাধা সৃষ্টি করলে ব্যথা হতে পারে।কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার গুলোর মধ্যে কিডনিতে পাথর হবার এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
কিডনির ঝুকি এড়াতে করনীয়
কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল তেমন জটিল। কিডনি রোগের কারণগুলো হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইনফেকশন, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদির ফলে কিডনি রোগ হতে পারে। একটু সচেতন থাকলে আমরা এই দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ ঝুকি এরাতে পারবো। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে সময় তাদের সমস্যা না হলে ওষুধ খাবার দরকার নেই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বয়স্করা আছে অনেক সময় ওষুধ খেতে ভুলে যান বেড়ে গেল বুঝতে পারে না। এদিকে তাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। তাই আমাদের থেকে কিডনির যত্ন নিতে হবে।
রাতে করণীয়গুলো হলো :
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে
- লবন কম খেতে হবে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে
- অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরতি থাকতে হবে
- কোমল পানি ত্যাগ করতে হবে
- ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে
- প্রয়োজনে বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবেনা
- ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
কিডনি ঝুঁকি এড়াতে এই সকল করণীয় গুলো মেনে চললে আমাদের কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব। কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকার গুলোর মধ্যে কিডনির ঝুঁকি এডাতে এ সকল করণীয় গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
কিডনিতে পাথর দুর করার ওষধ
কিডনিতে পাথর দূর করার ওষুধ মধ্যে ডাক্তার আপনাকে প্রস্রাবে ও রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমানোর জন্য আলোপিউরিনল।প্রাস্রাবকে ক্ষারীয় রাখার জন্য ওষুধ দিতে পারে।প্রসাবে প্রাস্রাবে খনিজ এবং লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ডাক্তার যে ধরনের ওষুধ দিবেন তা নির্ভর করে আপনার কি নিতে পাথরের আকারের ওপর। নিচে কিছু উদাহরণ দাওয়া হলো:
ইউরিক এসিড পাথর: রক্ত এবং প্রস্রাবে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমতে জাইলোপিন,অ্যালোপ্রিম নামের ওষুধ দিতে পারে ডাক্তার। আপনার প্রস্রাবকে ক্ষারীয় রাখার জন্য এই ওষুধ দেয়।
ক্যালসিয়াম পাথর : থিয়াজাইড মূত্রবর্ধক বা ফসফেটযুক্ত পরামর্শ দিতে পারে ডাক্তার আপনাকে ক্যালসিয়াম পাথর তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
সিস্টাইন পাথর: ডাক্তার আপনাকে প্রোটিন লবণ কম খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। এর পাশাপাশি বেশি তরল পান করতে বলে যাতে করে অনেক বেশি প্রস্রাব তৈরি করে।এটি যদি সাহায্য না করে তবে ডাক্তার একটি ওষুধ লিখে দিতে পারে যা প্রস্রাবে সিস্টিনের বাড়ায়।
স্টারুভাইট পাথর: স্টারুভাইট পাথর প্রতিরোধ করার জন্য ডাক্তার আপনাকে ভালো প্রস্রাব প্রবাহ বজায় রাখতে, প্রস্রাব কে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখতে,এবং ঘনঘন শূন্যতা বজায় রাখার জন্য তরল পান করতে বলবে।
কিডনিতে পাথর হবার লক্ষন ও প্রতিকার এর মধ্যে কিডনি তে পাথর দূর করার ওষুধ গুলো নির্ভর করে কিডনির পাথরের আকারের উপরে। অনুযায়ী ডাক্তার আপনাকে ওষুধ ও চিকিৎসা দিবে।
কিডনির পাথর চিকিৎসা
প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যাওয়ার ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে কিডনি পাথর যদি ৪ মিলিমিটার বা তার থেকে ছোট হয়। এমনটা হলে রোগীদের বেশি বেশি করে পানি পান করতে বলে।দরকার হলে ব্যথার ওষুধও দিয়ে থাকে। এক্সরে বা সিটি স্ক্যান কয়েক সপ্তাহ পরপর করে দেখে পাথর কতটা নিচে নেমেছে বা প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে গেছে কিনা। প্রস্রাবের সঙ্গে জমাট রক্তের মত কিছু একটা বের হচ্ছে কিনা,অনেক সময় পাথরও ধরা যায় ছাঁকনি মধ্যে প্রস্রাব করলে।
এখন যদি মূত্রনালীর কোন অংশ আটকে যায়,তাহলে প্রস্রাবের বাঁধার সৃষ্টি করে। ছোট হলে বের করে প্রস্রাবের বাধা দূর করতে হবে। শরীরের বাইরে থেকে শক ওয়েভ দিয়ে পাথর গুড়া করা সম্ভব, যদি পাথর দশমিক ৫ থেকে ২ সেন্টিমিটার আকারে হলে। পরে সে গুড়া প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। মিনিম্যাল ইনভেসিভ পদ্ধতিতে হলে রেট্রোগ্রেড ইন্ট্ররেনাট সার্জারি। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা প্রাস্রাবের রাস্তা দিয়ে ফেক্সিবিল ইউরেটেরোস্কোপ এর মাধ্যমে কিডনিতে করে বের করে আনা হয়।
কিডনিতে পাথর দূর করার কার্যক্রম পদ্ধতি হলো পিসিএনএল। এই পদ্ধতিতে পিঠের দিকে ছোট্ট একটি ছিদ্রের মাধ্যমে আকারের পাথর ভেঙ্গে বের করে আনা সম্ভব। আগে কিডনিতে পাথর সার্জারি করা হতো পেট পেতে। এখন পেট কাটার কোন প্রয়োজন হয় না। রোগীকে পুরো অজ্ঞান করারও কোন দরকার হয় না। এবং এক দুই দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরে যেতে পারে।
এই পদ্ধতিতে ব্যথা বেদনা তেমন হয় না।কিডনিতে পাথর পেট না কেটে যন্ত্রের সাহায্যে বা প্রসাবের রাস্তা দিয়ে বের করা হয়। তাহলে কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকারের গুলো দেখা দিলে পাথরে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।
কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকারের শেষ কথা
কিডনি পাথরের অনেক রোগী আছে যারা ওষুধ চান মনে করে ওষুধ খেলে পাথর গোলে বের হয়ে যাবে। সত্যি কথা বলতে এমন কোন কার্যকর ওষুধ নেই। পাথর একবার হলে ছোট অবস্থাতেই তার নিজে বের হয়ে যেতে পারে আপনার কিছু সচেতনতাই হবার লক্ষণও প্রতিকারগুলো মেনে চললে।এই পাথর কিডনি ভেতরে থাকলে ক্ষতি করে। কিডনিতে পাথর হবার লক্ষণ ও প্রতিকারের কোন লক্ষণ দেখলে আপনার সাথে সাথে পরামর্শ নিন। এবং দ্রুত কিডনির পাথরের চিকিৎসা করা।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url