ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সব রোগের নাম শুনি তার মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াবেটিস। ৪০ বছর মানুষের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই ডায়াবেটিস। এখন ত্রিশ বছরের নারী পুরুষ থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরী, গর্ভবতী নারী,বাচ্চাদের কেউ ছাড় দিচ্ছে না এই ডায়াবেটিস রোগটি।পরিবেশের অভাব ও বংশগত কারণে ডায়াবেটিস রোগটি হয়। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ মধ্যে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরও ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা।
প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। ডায়াবেটিস রোগের কারণে মানুষ স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক ও করতে পারে। বর্তমানে ৪৭ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস একটি সংক্রমণ ও ছোঁয়াচে রোগ। আজকে আমরা ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো।
সূচিপত্র : ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ
- ডায়াবেটিকসের প্রকার ভেদ
- ডায়াবেটিকস এর লক্ষণ
- ডায়াবেটিকস মহিলাদের জন্য জ্ঞাতব্য
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস থেকে বিপদ
- ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ এর শেষ কথা
তাহলে ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেনি।
ডায়াবেটিকসের প্রকারভেদ
আমাদের অনেকের কাছে ডায়াবেটিসের কারণগুলো স্পষ্ট ছিল না। অনেক দেশের বড় বড় বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে খুঁজে বের করেছে ডায়াবেটিস রোগের কারণ। নতুন প্রকারভেদ অনুমোদন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ গুলোর মধ্যে ডায়াবেটিসকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- টাইপ ১
- টাইপ ২
- গর্ভকালীন ডায়বেটিস
- প্রিডিয়াটিস ডায়াবেটিস
টাইপ ১: এই ধরনের রোগে একেবারেই তৈরি হয় না শরীরে ইনসুলিন। ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগ বলা হয় এই শ্রেণীকে। ইনসুলিন পাম্প বা ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য এইসব রোগীকে। এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায় সাধারণত ১০- ৩০ বছর বয়সের মধ্যে। রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে গিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যেই রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যু মুখে পরিনিত হয়। এর জন্য দায়ী হলো HLADRA4 এবংHLADR3 নামক দুটি জিন।
টাইপ ২: এই রোগীর বয়স সাধারণত ৩০ বছরের উপরে থাকে। বর্তমান সময়ে ৩০ বছরের নিচেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেখা দিচ্ছে এবং তার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এ ধরনের রোগীর শরীরে কিছু ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু সেটা প্রয়োজনে তুলনায় অনেক কম এবং রোগীর শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় সে ব্যবহার করতে পারে না। এই দুই ধরনের কারণ এক সময় দেখা দিতে পারে। টাইপ ২ রোগের ঝুঁকি বাড়ায় মিষ্টি জাতীয় খাবার। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটি কারণ শারীরিক পরিশ্রম না করা। নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্য ভাসের পরিবর্তন একে প্রথমে মোকাবেলা করা হয়। অনেক সময়ে মুখে ওষুধ খাওয়া ও ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস :অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভবতী নারী ডায়াবেটিস দেখা যায়, কিন্তু প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এরকম জটিলতাকেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়।গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস দেখা দিলে গর্ভবতী নারী, প্রসূতি শিশু দুই জনার জন্য বিপদ হতে পারে। এই বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভবতী নারীকে এভাবে নিয়ন্ত্রণ অপ্রয়োজনীয় ইনসুলিন দরকার হতে পারে।গর্ভকালীন সময়ে নারীদের যাদের ঝুঁকি আছে যেমন- বেশি বয়স্ক, বংশ প্রভাব কি ধরনের নারীদের ডায়াবেটিস আছে কিনা সব পরীক্ষা করতে হবে। গর্ভকালীন অবস্থায় গর্ভবতী নারীর শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ ইনসুলিন দরকার হয়।রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য। এই ইনসুলিন তৈরিতে শরীর হলে গর্ভবতী মায়ের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন গর্ভকালীন এ ডায়াবেটি।
প্রিডিয়াটিস ডাইবেটিস : রক্তে গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করার জন্য এটি পর্যাপ্ত পরিমাণের নয়।তখন ব্যক্তির প্রিডিয়াটি ডায়াবেটিস হয়।
ডায়াবেটিকস এর লক্ষণ
ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ গুলো মধ্যে ডায়াবেটিস হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ উপসর্গ গুলো দেখা যায় তা হলো:
- বেশি বেশি পানি পিপাসা লাগেবে
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- বেশি বেশি ক্ষুধা পাবে
- দুর্বলতা ও শরীরে ক্লান্তি অনুভূত হবে
- ওজন কমতে থাকবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার সত্ত্বেও
- স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগবে যেকোনো ধরনের ক্ষত শুকাতে
- দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে চোখে কম দেখা
- বিভিন্ন রকমের চর্ম রোগ যেমন : খোশ পাঁচড়া,পুরা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে
- বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া বা বারে বারে প্রসব সমস্যা হওয়া
এই সকল লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ লক্ষণগুলো অন্যতম।
ডায়াবেটিকস মহিলাদের জন্য জ্ঞাতব্য
ডায়াবেটিস মহিলা সন্তান ধারণ করতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে।ইনসুলিন নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। খাওয়ার বরি বাদ দিতে হবে তিন থেকে পাঁচ মাস আগে। চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষে গর্ভধারণে আসতে পারেন HbA1c ৬.৫% এর কাছাকাছি হলে।গর্ভকালীন অবস্থায় খাবারের পরে ৭.০ মিলিমোল/ লিটার ও চিনির মাএা অবস্থায় ৫.০ m.mol/L এর নিচে রাখতে হবে ইন্সুলিনের সাহায্য। এছাড়া ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের কারণ এবং এটি সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা।
রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন ডায়াবেটিস থেকে স্বাস্থ্যের জটিলতা এড়াতে মহিলাদের। এবং তার প্রথম উপায় হলো সুষম খাদ্য সেবন করা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য একটি। আমরা সকলেই জানি ডায়াবেটিস একটি ব্যাধি। ক্রমবর্ধমানভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন অল্প বয়সে মহিলারা আজকাল তাদের মা হওয়ার বয়স গুলোতে এবং অলং জীবন যাত্রার কারণে। মহিলাদের ফ্যালোপিয়ান কিউবের মতো প্রজনন অঙ্গে ক্ষতির প্রবণতা বেশি। অনেক বেশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা থাকলে গর্ভপাত হওয়ার কারণ হতে পারে।ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ গুলো মধ্যে ডায়াবেটিকস মহিলাদের জন্য জ্ঞাতব্য অন্যতম।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস থেকে বিপদ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিছু সমস্যাগুলো হয়ে থাকে যার স্বল্প মেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদী। পদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলো।কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে।ট্রাইগ্লিসারিন নামক একটি উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের এমনিতেই বেশি থাকে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা ও মস্তিষ্কে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণ মানুষের থেকে অনেক গুণ বেশি স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ডায়াবেটিস রোগীদের। কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারো প্রস্তাবের সাথে প্রচুর সরকারা বের হয়ে যায়।
অনেক বিপদ হতে পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে।মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না থাকে। যেসব উপসর্গ জটিলতা দেখা দিতে পারে আমাদের জেনে রাখা ভালো। যেমন : যক্ষা,হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, মূত্রশায়ের ইনফেকশন, পাতলা পায়খানা, চুলকানি, পাঁড়রা,ফোরা,পায়ের পচনশীল ক্ষত,চক্ষু রোগ, চোখের ভিতরে রক্তক্ষনের জন্য অন্ধ ইত্যাদি। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রাকারভেদ গুলোর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে এ সকল বিপদ হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা আপনি বুঝবেন যেভাবে তা হলো রক্তের শর্করা গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা।একজন সুস্থ মানুষের পেটে রক্ত গ্লুকোজ মাত্রা পরীক্ষা করলে তা ৩.৫ থেকে ৫.৫ মিলি মোল/ লিটার হবে। রক্তের শর্করা গ্লুকোজের মাত্রা ৫.৫ মিলি মোল / লিটার থাকে।খাওয়ার দুই ঘন্টা পর পর ৭.৮ মিলি মোল / লিটার পর্যন্ত হয়।তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে করতে হবে।রক্তের শর্করা গ্লুকোজের মাত্রা ১১.০ মিলি মোল/ লিটার এর বেশি হলে বুঝে নিতে হবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ডায়াবেটিস যেন অনিয়ন্ত্রণ না হয়ে যায়। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রণ হয়ে গেলে বিভিন্ন বিপদের মুখে পড়তে হবে। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ এর মধ্যে তাই আমাদেরকে ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ এর শেষ কথা
ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা সকলেই বুঝতে পেরেছেন যে ডায়াবেটিস কতটা ক্ষতি করা আমাদের দেহের জন্য। ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো আমরা জেনেছি ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো আপনার মাঝে দেখা দিলে আপনি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন এবং অন্য কেউ জানতে সাহায্য করুন। অনিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস থেকে আমাদের কি কি বিপদ হতে পারে তা আমরা জেনেছি। ডায়াবেটিকসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে পড়ে আপনি নিজের সচেতন হন ও অন্য কেউ সচেতন করুন।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url