ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা

ডায়াবেটিস আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা। শরীর যখন নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন কার্যকর ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে গ্লুকোজের মাত্রা ও রক্তের শর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। শরীরের কোষগুলোতে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন। রক্তের মধ্য দিয়ে কোষ গুলোতে প্রবেশ করতে পারে আমাদের খাবার থেকে যে শর্করা বা চিনি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা থাকে যদি তাহলে তার শরীরে রক্তের সর্কানা মাত্রা অনেক কম হয়ে যেতে পারে। পতন করতে পারে এটি তাদের।তখন তাদের চিনি যুক্ত কিছু খাবার দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে হবে। চিনি যুক্ত খাবার ফলে শরীরের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তানিয়া চামড়া আলোচনা করব।

সূচিপত্র : ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা

তাহলে ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা কমে যাওয়া

রক্তের সুগারের পরিমাণ বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসোমিয়া বলে।সংক্ষেপে হাইপো হিসেবে চিনে অনেকে।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যেসব রোগীকে ইনসুলিন নিতে হয় তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া বেশি দেখা যায়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া যেকোনো ধরনের ডায়াবেটিস রোগিদের হতে পারে।হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা বক্তে শর্করা কমে যাওয়া ফলে বুক ধরফড়, মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে  জ্ঞান হারানোর মতো বিপদজনক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

তাই হইপো লক্ষণগুলো দূরত্ব শনাক্ত করতে হবে। বাড়িতে বসে নিজে নিজে চিকিৎসা করা সম্ভব এই রোগে। আপনার যদি অনেকবার সুগার কমে যায় তাহলে আপনি নিজেই লক্ষণগুলো খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আপনার হাইপোগ্লিসমিয়া হচ্ছে কিনা। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম লক্ষণ হতে পারে। ট্যাবলেট বা ইনসুলিন দেওয়া হয় রক্তের সরকারের পরিমাণ কমানোর জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত ইনসুলিন নেওয়া বা ট্যাবলেট খাওয়া হয়ে যায় তাহলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে তাহলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা মধ্যে হাইপোপ্লাসমিয়া বা রক্তের শর্করা কম থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ

হাইপোগ্লাসমিয়া ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে  প্রচলিত শব্দ। টাইপ ১ ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হাইপোগ্লাসমিয়া  হয়ে থাকে। রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা স্বাভাবিক হলে খালি পেটে ৬.১মিলিমোল লিটার ও খাবারের দুই ঘন্টা পরে ৭.৮ মিলিমোল লিটার থাকা দরকার। দেহে ও মনের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে রক্তের শর্করা বারবার কমে গেলে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় খুব বেশি হাইপোগ্লাসমিয়া হলে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ রয়েছে তা হলো- 

  • ক্লান্ত অনুভব করা 
  • অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া 
  • মাথা ঘুরা 
  • শরীলে কাঁপুনি হওয়া 
  • ক্ষুধা লাগ 
  • বুক ধরফর করা

হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের শর্করা কমে গেলে  সময়মতো চিকিৎসার না করলে আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন- 

  • খিচুনি 
  • ঘুম ঘুম লাগা 
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • বিভ্রান্তি 
  • দুর্বলতা 
  • কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয় 
  • বৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া 

ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিক্রিয়ার ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। 
এই সকল লক্ষণ গুলো দেখা দেয় - 
  • বেশি ব্যায়াম ও দৈহিক পরিশ্রম করলে
  • ইনসুলিন নেওয়ার পর খুব দেরি করে খাবার খেলে 
  • প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলে ঔষুধ খেলে
  • বমি বা পাতলা পায়খানার জন্য শর্করা কমে যেতে পারে 
  • খাবার দেরি করে খাওয়াবা কোন বেলা খাবার বাদ দেওয়া 
  • অতিরিক্ত মদপান বা খালি পেটে মদপান করলে

 ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা  মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কি করা উচিত

আপনি যদি বুঝতে পারেন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো,তাহলে দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন।যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে নিন।আপনি এক গ্লাস পানিতে চিনি গুলিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। মিষ্টি, ক্যান্ডি, চকলেট,চিনি মেশানো জুস খেলেও হবে। পরীক্ষা কোন ১৫ মিনিট পর পর। তারপরও যদি কম দেখায় তাহলে আবার গ্রহণ করুন। রক্তের গ্লুকোজ ৬-৭ মিলি মোলের উপরে না ওঠা পর্যন্ত বারবার অ্যাড করতে হবে।

হাইপোগ্লায়সেমিয়া কারণে যদি রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে জোর করে চিনির পানি খাওয়ানো যাবে না। এমনটা হলে দূরত্ব হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে দ্রুত গ্লুকোজ দিতে হবে। সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে ভালোভাবে দেখতে হবে কেন এমনটা হলো।শৃঙ্খলা মধ্যে আনার চেষ্টা করুন ব্যায়াম ও খাদ্যভ্যাস।ভালো খাবার খেতে হবে সঠিক সময়।সারাদিনের ৬ বার খাবার খেতে হবে। ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খাবার খাওয়া উচিত।চিকিৎসকের পরামর্শ নিন আপনার ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা কমাতে হবে কিনা। বছরে একবার অন্তত কিডনি বা যকৃতের টেস্ট করা উচিত।

আপনি এমন খাবার গ্রহণ করুন যা ধীরে ধীরে শরীরে শর্করা তৈরি করবে। যেমন লাল একটা রুটি, সবজি ডাল দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি, লাল চালের ভাত, দই অথবা গরুর দুধ খেতে পারেন।শর্কারাযুক্ত নাস্তা খেতে হবে। নাস্তা  হতে পারে এন প্লাস দুধ, এক পিস পাউরুটি, কয়েকটা বিস্কুট।ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা হলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া এই সকল কাজগুলো করা উচিত।

ডায়াবেটিকস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ কখন বাড়ে

অগ্ন্যাশয় থেকে নামের যে হরমোন তৈরি হয় চিনি গ্রহণের জন্য আমাদের শরীরে কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়।শরীরে শক্তি বা জ্বালানি হিসেবে এই চিনি কাজ করে ।  ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না শরীরে ঠিকভাবে না করে তখন ডাইবেটিস রোগটি হয়। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। 
ডায়াবেটিস রোগের রক্তেগ্লুকোজ বাড়ার কারণ  গুলো হলো-
  • ব্যায়ম বা দৈনিক পরিশ্রম না করলে 
  • পরিমাণে কম ইনসুলিন নিলে 
  • বেশি খাবার খেলে 
  • ট্যাবলেট খেতে ভুলে গেলে বা ইনসুলিন না নিলে 
  • অন্য কোন রোগের চিকিৎসা করার সময় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বন্ধ রাখলে। 
  • কোন সংক্রমণ বা প্রদাহ জনিত রোগ হলে বা মানসিক বিপর্যস্ত দেখা দিলে
ডায়াবেটিস রোগে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে সোনালীকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। রক্ত ঠিকমতো প্রভাবিত না হতে পারলে  তোর প্রয়োজনীয় স্থানের  রক্ত যদি না পৌঁছাতে পারে তাহলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হ ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ফলে ইনফেকশনও হতে পারে।তাই  ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা ডায়াবেটিস রোগের রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

ডায়াবেটিকস কোমা কী

ডায়াবেটিস কোমা হলো মানুষের আর দশটা অসুখের মতো। ডায়াবেটিকস কোমা হয়ে থাকে ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের। রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বিপর্য দেখা দিতে পারে রোগীরা ইনসুলিন না নিলে ও  অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিলে। রক্তে শর্করা শরীরে  কাজে লাগাতে পারে ইনসুলিনের অভাবে। দেহের তাপ শক্তির জন্য সঞ্চয় করার চর্বি ব্যবহৃত হতে থাকে। ইনসুলিনের অভাবে অতিরিক্ত চর্বি হয় হওয়ার ফলে ক্ষতিকর পদার্থ রক্তে বেড়ে যায়।ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। 

এইরকম অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলে।অতিমাত্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়ে ডায়াবেটিক কুমার মানুষের শরীরে। ডায়াবেটিস কোমা সাধারণত অসুস্থ, বৃদ্ধ, চলাফেরায় অক্ষম মানুষের মাঝে দেখা যায়।ডায়াবেটিস কুমার একটি গুরুতর মারাত্মক অবস্থা।  শরীরের রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকলে রক্ত ঘন হয়ে যায় তার শরীর নিতে পারেনা। ফলে ডায়াবেটিস কোমা তৈরি হয়।

ডায়াবেটিক কোমা হলো মানুষের আর দশটার অসুখের মধ্যে একটি। ডায়াবেটিস কমার শিকার হন রক্তগার বেড়ে গেলে বা কমে গেলে। শরীরে  রক্তের সুগার অতিরিক্ত হয়ে গেলে রক্ত ঘন হয়ে যায়। ডায়াবেটিক কোমা গেলে রোগী চারপাশের সব কিছু বুঝতে পারে ও শুনতে পান। এক্ষেত্রে মৃত বললেও কিন্তু রোগীর জীবিত থাকেন।সঠিকভাবে ডাইবেটিস পরিচর্যা  না করলে ডায়াবেটিস কমানোর সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা মধ্যে ডায়াবেটিস কোমা একটি।

ডায়াবেটিকস কোমার লক্ষণ

শরীরে শর্করা অর্থাৎ  গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে রোগী ডায়াবেটিক কোমায় চলে যায়।মৃত্যু হতে পারে।রক্তে  গ্লুকোজের ও শর্করা  পরিমাণ ঠিক রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।ডায়াবেটিস কোমার কিছু লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক -

  • অনেক বেশি পিপাসা লাগা 
  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া 
  • প্রস্রাবের শর্কারা পরিমান খুব বেশি বেড়ে যাওয়া। 
  • অনেক অসুস্থ বোধ করা 
  • দুর্বল বোধা করা 
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • ঝিমানো
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া 
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া 
  • মাথা ধরা 
  • শ্বাসে অ্যাসিটোনের গন্ধ বের হওয়া 

এই লক্ষণগুলো আপনার মাঝে দেখা দিলে তিন থেকে চার চামচ চিনি বা গ্লুকোজ পানিতে মিশিয়ে সাথে সাথে পান করুন। তাছাড়া এক চামচ মধু বা জেলি অথবা হাপ কাপ  ফলের জুস বা পান  করুন।১০ থেকে ১৫ মিনিট পর গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করুন। চার মিলিমোলের কম থাকলে ৫ থেকে ৮ চামচ গ্লুকোজ এক চামচ মধু ও জেলি পান করুন। এতে সমস্যা সমাধান না হলে দ্রুত হাসপাতালে যান। এই কারণে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। নিজের সাথে সব সময় শর্করা  জাতীয় খাবার যেমন চকলেট রাখুন। ডায়াবেটিস কোমা  ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা।

ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা শেষ কথা

আমরা সকলেই নিশ্চিত বুঝতে পেরেছি  ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা কি কি হতে পারে। আমরা জেনেছি হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের শর্করা কমে যাওয়ার কারণ ও এর লক্ষণ এবং হাইপোগ্লিসেমিয়া হলে আমাদের কি করা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ কখন বাড়ি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস কোমা কি এর লক্ষণ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনেছি।এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে  ডায়াবেটিকস রোগের জরুরি অবস্থা  এগুলোর মধ্যে কোন একটি আপনার মাঝে দেখা দিলে আপনি  ব্যবস্থা নিতে পারবেন ও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url