কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

 কিডনি মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রক্তের দূষিত পদার্থ গুলো পরিষ্কার করে মূত্র তৈরি করে এবং সেগুলো মানব দেহ থেকে বের করে দেয়। কিডনি রোগটি খুব আস্তে আস্তে ও নিরবে ক্ষতি করে শরীরের।মানবজাতি যেসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বা প্রাণঘাতী রোগ তার মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। কিডনি রোগে ঘন্টায় পাঁচ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যানে তথ্যে জানা গেছে কোন না কোন ভাবে  কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে দুই কোটিরও বেশি মানুষ। শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত  কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় না। তাই কিডনি রোগের লক্ষণ  ও প্রতিকার গুলো আগে থেকে জেনে রাখা জরুরী।কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্র :কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

সুস্থ কিডনির লক্ষণ

কিডনি সুস্থ বা ভালো আছে কিনা খালি চোখে দেখে বোঝার কোন উপায় নাই। তাছাড়া  প্রাথমিক পর্যায়ের কোন  লক্ষণ প্রকাশ পায় না কিডনি রোগে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরে  লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায়। কিডনি রোগে যাদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেশি রয়েছে, যেমন -ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, উচ্চ রক্তচাপ, পরিবারে যাদের কিডনি রোগ রয়েছে, যাদের বয়স বেশি ৬০ বছর  বেশি তাদের  প্রতিবছরে  দুইবার পরীক্ষা করানো। আপনার কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা জানতেও বুঝতে জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন GFR (রক্তের পরীক্ষা) ও ACR(প্রস্রাবের পরীক্ষা)  সাধারণত  এই পরীক্ষা দুটি করার পরামর্শ দেয়। 
কিছু সময়ে অন্যান্য পরীক্ষা কিডনির রোগের কিডনি সুস্থ আছে কিনা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি। সুস্থ কিডনির লক্ষণ বা কিডনি ভালো আছে কিনা  জানার জন্য এই সকল পরীক্ষাগুলো   করা যেতে পারে। আগেই বলেছি কিডনি সুস্থ ভালো আছে কিনা   খালি চোখে দেখে বোঝার কোন উপায় নাই  তাই মূলত সুস্থ কিডনির লক্ষণ ও কিডনি ভালো আছে কিনা বুঝার উপায়। 

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

কিডনি রোগ হলো এক ধরনের মূএনালী সংক্রান্ত রোগ। শরীরের মূত্রনালী থেকে  সংক্রমণ হয়।পাইলোনেফ্রাইটিস বলা হয় কিডনি সংক্রমণকে।ভালোভাবে  চিকিৎসা না হলে ইনফেকশন আরো ছড়িয়ে পড়ে অনেক কিডনিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। জীবাণু  রক্তে ছড়িয়ে পড়লে বিপদজনক হতে পারে। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে। কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
  1. ঘনঘন প্রস্রাব।
  2. ঠান্ডা।
  3. পেট ব্যথা ।
  4. জ্বর ।
  5. প্রস্রাব ঘোলাটে বা দুর্গন্ধ।
  6. বমি বমি ভাব  এবং বমি। 
  7. প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা বা ব্যথা করা। 
  8.  প্রস্তাবের রক্ত বা পুঁজ ।
  9.  কুঁচকিতে বা  পিঠের পাশে ব্যথা।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এর মধ্যে  কিডনিতে ইনফেকশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিডনি ব্যাথার লক্ষণ

বাংলাদেশের বেশিভাগ রোগীরাই কোমরে ব্যথা হলে ভাবেন কিডনি সমস্যা হয়েছে। কিন্তু কিডনিতে  খারাপ কোন ধরনের বা পাথর না হলে কিডনিতে ব্যথা হয় না।সাধারণত কিডনির সমস্যা  গুলো দেরিতে দেখা দেয়। তাই যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ,পরিবারের কিডনি অসুখ আছে, তাদের কে সচেতন থাকতে হবে। কোমরে ব্যথা,  রক্তশূন্যতা, অরুচি, বমি ভাব, দুর্বলতা, ইত্যাদি  সাধারণত থাকে না।

ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে ভালো হয়  আবার বন্ধ করলে ব্যথা ফিরে আসে। তখন বুঝতে হবে একটা সাধারন ব্যথা নয়।সাধারণত মেরুদন্ড থেকে একটু বামপাশে বা ডান পাশে কিডনি জনিত ব্যথা হয়। পেছনের  পাজরে নিচের অংশে ব্যথা হয়। এই ব্যথা কোমরের দুই পাশে যেতে পারে কারণ কিডনিজনিত ব্যথা নড়াচড়া করে।  কিডনিজনিত ব্যথা কোন কিছুতেই আরাম মেলেনা। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কিডনি ব্যাথা প্রধান কারণ নয়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে এ ব্যথার সাথে জ্বর হয়।

কিডনি পাথরের লক্ষণ

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভোগেন। কিডনি তে পাথর জমলে  অনেক বেদনাদায়ক, কিডনিতে পাথর মূত্র নালীতে আটকে গেলে মূত্রত্যাগের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। পেটের উপরে অথবা নিচে পেটের ডানে বা বাঁয়ে মৃদু ব্যথা হলে   বুঝতে হবে কিডনির পাথরের জন্য  ব্যথা হচ্ছে। জ্বর, বমি, পিঠে ব্যথাকিন্তু পাথর হওয়ার লক্ষণ। কিডনিতে পাথর হওয়া লক্ষণ রয়েছে। কিডনি  রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার চলুন জেনে নি  কিডনিতে পাথর হওয়ার কিছু লক্ষণ -
  1. ঘোলাটে এবং দুর্গন্ধযুক্ত প্রসাব। 
  2. বমি বমি ভাব বমি হওয়া ও ব্যথা অনুভব করা।
  3. কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।
  4. ছোট ছোট পাথর যেতে পারি মাঝে মধ্যে প্রস্রাবের সঙ্গে।
  5. রক্তের মতন লাল প্রস্রাব, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা থাকতে পারে।
এই সকল লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত  তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।   পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত ফোন যে আপনার কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা।

কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ

আপনার কিডনি যখন আপনার শরীরের   রক্ত থেকে বজ্র পদার্থ ফিল্টার করতে পারে না বা অক্ষম হয়ে যায় তখন তাকে কিডনির ফেইলিওর বলে।এমন অবস্থায় কিডনিফিল্টার করতে পারে না বা ফিল্টার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন আপনার শরীরে  ক্ষতিকর মাত্রায় বজ্র পদার্থ জমতে পারে, ফলে আপনার রক্তে রাসায়নিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে । কিডনি রোগের লক্ষণ ও  প্রতিকার কিডনির ফেইলিওর এর লক্ষণ গুলো চলুন জেনে নি -
  1. শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। 
  2. বমি বমি ভাব। 
  3.  অনিয়মিত  হৃদস্পন্দন। 
  4. বুকের চাপ বা ব্যথা অনুভব করা। 
  5. ক্লান্তি। 
  6. ঘুম ঘুম ভাব। 
  7. শরীরে পানি জমে ফুলে যায়, আপনার গোড়ালি, পা ফোলা সৃষ্টি করে। 
  8. গুরুতর ক্ষেত্রে খিচুনি।
  9. রোগী কমাও চলে যেতে পারে
কোন কোন ক্ষেত্রে  কিডনি  ফাইলরের কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না,  ল্যাবে পরীক্ষার সময়  কিডনি ফেইলর  ধরা পরে। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারে উপরের  কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণগুলো  দেখা গেলে দ্রুত  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।একটু সতর্কতায় রক্ষা পাওয়া যেতে পারে  কিডনি ফেইলর থেকে।

কিডনি রোগের  প্রতিকার

প্রথমে কিডনি রোগের প্রতিকারের জন্য একজন  ভালো  নেফ্রোলজি  বিশেষজ্ঞের  মতে চিকিৎসা গ্রহণ ও ঔষধ সেবন করতে হবে।  নিয়মিত  ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে  ওষুধ সেবন জীবনযাপন  সুস্থ করে  তুলবে আপনাকে। যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস রয়েছে তাদের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার। এই তিনটি কারণে নষ্ট হয়ে থাকে বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের কিডনি।
এই  তিনটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে  কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব শতকরা ৮০ভাগ। এছাড়া যাদের পাথর জনিত রোগ আছে যাদের ঘন ঘন কিডনিত ইনফেকশন হয় তাদের  সহজেই  নিরাময় করা সম্ভব চিকিৎসার মাধ্যমে। নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। আপনার যদি জটিল কিডনির সমস্যা না থাকে  তাহলে ডাক্তারদের পরামর্শে সপ্তাহে ৪-৫ দিন এক্সারসাইজ  করতে পারবেন। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার  এর মধ্যে  কিডনি রোগের প্রতিকারগুলো জেনে নিন-
  1. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন 
  2. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাখুন।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  4. কলেজস্টরেল কমাতে হবে।
  5. ধূমপান পরিহার করতে হবে।
  6. পরিমিত পানি পান করতে হবে।

শেষ কথা :কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে এখন পর্যন্ত যে আলোচনা করা হলো তা থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে কিডনি রোগ অনেক মারাত্মক মরণব্যাধি একটি রোগ। কিডনি রোগ অবহেলার না করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি ভালোভাবে জীবন  ব্যবস্থার মাঝে নিজেকে পরিচালিত করতে হবে। এতে করে এই রোগ থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url