কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩

কুরবানি অর্থ হলো ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। ইসলামে মুসলিমদের জীবনে প্রতি বছর দুইটা ঈদ পালিত হয়ে থাকে। একটি হলো ঈদুল ফিতর আর দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানে হলো কুরবানির ঈদ। কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এটা থেকে জানা যাবে যে, কোন ব্যক্তির উপর কুরবানি ফরজ বা কোন ব্যক্তির কুরবানি দিতে হবে।

কুরবানি দিলেই কুরবানি কবুল হয়ে যায় না। কুরবানি করারও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। আমরা অনেকেই সঠিক জানি না যে, আসলে কুরবানির সঠিক নিয়ম কি। কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এসব নিয়ে। আশা করা যায়, কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এই আর্টিকেল টি মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে।

সূচিপত্রঃ কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩

কুরবানি কার উপর ফরজ

কুরবানির ফজিলত অপরিসীম। কুরবানীর মাধ্যমে অনেক শিক্ষা পাওয়া যায়। কুরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ করা। আল্লাহর পথে ত্যাগ করাকেই কুরবানি বলা হয়ে। আমরা অনেকেই সঠিকভাবে জানি না যে, কুরবানি কার উপর ফরজ। শুধু টাকা আছে বলেই কুরবানি দিয়ে দিলো তা হবে না। কুরবানির অনেক নিয়ম আছে। কুরবানি বিষয়ে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যাদের নিসাব পরিমাণ ধন,সম্পদ রয়েছে তার ওপরেই কুরবানি ফরজ।

কুরবানি কার উপর ওয়াজিব

কোরবানি ইসলামে শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।কোরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব অপরিসীম।হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হিজরতের পর থেকে প্রতি বছর কুরবানি করেছেন। তিনি কখনো কুরবানি ছাড়েন নি। কুরবানির ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ পাকের জন্য ত্যাগ করাকেই কুরবানি বলা হয়ে থাকে। সবার জন্য কুরবানি ওয়াজিব নয়। যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব। ১০ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১২ জিলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে যেসব সুস্থমস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক মুকিম ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার উপরে কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।

পাগল ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। মুসাফির এর উপরেও কুরবানি ওয়াজিব নয়। নিজ বাড়ি থেকে ৪৮মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হলে তাকে মুসাফির হিসাবে গণ্য করা হয়।প্রত্যেক ব্যাক্তির নিজের পক্ষ থেকে কুরবানি করা ওয়াজিব, তবে তার স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। কোনো ব্যক্তির উপর যদি কুরবানি ওয়াজিব না হয় কিন্তু সেই ব্যাক্তি যদি কুরবানি করার জন্য কোনো পশু কিনে তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। যার ওপর কুরবানি ওয়াজিব সেই ব্যক্তি যদি কোনো কারণবশত কুরবানি করতে না পারে তাহলে পরে কোনো এক সময় একটা বকরির মূল্য দান বা সদকা করা ওয়াজিব।

কুরবানি করার দোয়া

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া সমৃদ্ধ ইবাদত। ঈদুল আজহা মানে হলো কুরবানি ঈদ। আল্লাহর নামে পশু কুরবানি করার মাধ্যমে কুরবানি সম্পন্ন করা হয়। কুরবানির কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।কুরবানি করার জন্য নির্দ্দিষ্ট দোয়া ও রয়েছে। প্রতি বছর মুসলিম জাতির জীবনে দুইটা উৎসবের দিন রয়েছে। একটা হলো ঈদুল ফিতির আর একটা হলো ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নামে গৃহপালিত পশু কুরবানি করা। ঈদুল আজহার দিনে খুব সকালে উঠে গোসল করতে হয় এবং যে পশুকে কুরবানি দেয়া হবে,সেই পশুকেও পরিষ্কার করে গোসল করাতে হবে। কুরবানি করার জন্য যে ছুরি ব্যবহার করা হবে, সেই ছুরি টা যেনো ধারালো হয়। এতে পশুর কষ্ট কম হবে। অনেকেই আছে পশু জবাই করতে পারে না। কুরবানি নিজ হাতে করা ভালো। 

যে ব্যক্তি কুরবানি দিবে, সেই ব্যক্তি যদি নিজে হাতে কুরবানি করে তাহলে ভালো হয়। তবে অন্যের হাতে করলেও কোনো অসুবিধা নেই কুরবানি হয়ে যাবে। পশু কুরবানি করার সময় শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে হয়। অর্থ্যাৎ বিসমিল্লাহ বলে কুরবানির পশুর গলায় ছুরি চালাতে হবে,খেয়াল রাখতে হবে কুরবানি যেনো আল্লাহ পাকের নামেই হয়, অন্য কারো নামে যেনো না হয়। অনেকেই আছেন যারা নিজেদের নামে কুরবানি করে কিন্তু এটা ঠিক নয়। পশু জবেহ করার সময় একটা বিষয় ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে,কুরবানির পশুর খাদ্যনালী,শ্বাস্নালী আর দুই পাশে থাকা দুইটা নালী যেনো ভালোভাবে কাটা হয়। 

এই নালীগুলো সঠিকভাবে কাটা হয়ে গেলেই কুরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।উপরিক্ত নিয়মগুলো মেনে নিজে নিজেই কুরবানি করা যায়।কুরবানির করার দোয়া রয়েছে।কুরবানি করার দোয়াটি হলো-
উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার,আল্লাহুমা মিনকা ও লাকা।

যদি কেউ এই দোয়াটি না পারে তাহলে এই ছোট্ট অংশটুকু পড়বেন-
উচ্চারণঃবিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার,আল্লাহুমা মিনকা ওয়া লাকা।

নিজের পশু নিজে জবেহ করার পর এই দোয়াটি পড়তে হবে-
উচ্চারণঃআল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

অন্য কেউ বা অন্য কারো কুরবানি করলে এই দোয়া পড়তে হবে-
উচ্চারণঃআল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম' তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

কুরবানি সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

কুরবানি সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। কুরবানি অর্থ হলো আল্লাহর পথে বা আল্লাহর নামে ত্যাগ করা। জিলহজ্জ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিনের মধ্যে উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি গৃহপালিত হালাল পশু আল্লাহর নামে কুরবানি করতে হয়। কুরবানি নিয়ে আল্লাহ পাক অনেক আয়াত নাযিল করেছেন।কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ সম্পর্কে লেখা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ত জানতে পারবো।

01. তোমরা আহার করো এবং অভাবগ্রস্থ মানুষদের আহার করাও। আল্লাহ পাক বলেছেন তোমরা হজের জন্য ঘোষণা প্রচার করো এবং চতুষ্পদ জন্তু কুরবানি করো। তোমরা নিজে আহার করো এবং অভাবিদের আহার করাও। (আলহাজঃআয়াতঃ২৭-২৮)
02. উম্মাতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি-আল্লাহ পাক বলেছেন, আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি।যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তারই আজ্ঞাধীন থাকো এবং বিনয়ীগণদের সুসংবাদ দাও।(আলহাজ-আয়াতঃ৩৪)
03. তাদের জবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো- এবং কা'বার জন্যে উৎসগ্রীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম  নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাধা অবস্থায় তাদের জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা ক্যাত হয়ে পড়ে যাবে তখন তার থেকে তোমরা আহার করো এবং তাদের আহার করাও যে কিছু চায় না বা যে চায় তাকে। এমনভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভুত করে দিয়েছি। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (আল হাজ্জ-আয়াতঃ৩৬) 
এরকম আরও অনেক হাদিস রয়েছে কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এই আর্টিকেলে।

কুরবানি সম্পর্কে হাদিস

কুরবানি অন্য সকল ইবাদতের মতই আল্লাহর ইবাদত। কুরবানি করাও আল্লাহর হুকুম। কোনো ব্যক্তির যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপরে কুরবানি করার হুকুম রয়েছে।হযরত ইবরাহীম(রাঃ)এর সময় কুরবানির নিয়ম চালু হয়েছিলো।আল্লাহ পাক হযরত ইবরাহিম(রাঃ)কে তার নিজ পুত্র হযরত ঈসমাইল (রাঃ) কে কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।তখন থেকেই পুরো মুসলিম জাতির ওপরে কুরবানির নির্দেশ এসেছে।কোনো ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে আল্লাহর রাস্তায় গৃহপালিত পশু কুরবানি করতে হবে।

এক হাদিসে বলা হয়েছে-এক ব্যক্তি রাসূল(সাঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।ইয়া রাসূল(সাঃ)!যদি আমার কাছে একটি মাত্র 'মানীহা' থাকে (অর্থ্যাৎ যা আমাকে শুধু দুধ পানের জন্য দেওয়া হয়েছে) আমি কি তা কুরবানি করতে পারি? নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, না।তবে তুমি চুল,নখ,দাড়ি,মোচ বা নাভির নিচের লোম পরিস্কার করবে।এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গণ্য হবে।সুনানে আবু দাউদ;২/৩৮৫।

কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এর শেষ কথা

কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এই আর্টিকেলে কুরবানি সম্পর্কে অনেক জানা অজানা হাদিস বা কুর আনের আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ সম্পর্কে যদি কারো কোনো রকম সন্দেহ থাকে তাহলেকুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ আজকে এই আর্টিকেল টি ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে পড়লে কুরবানি কার উপর ওয়াজিব-কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ২০২৩ এসব বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url