পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা

পুদিনা পাতা বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। পুদিনা পাতার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয় বিদ্যমান পুদিনা পাতার একটি নিজস্ব ঘ্রাণ আছে, যা আমদের মুহুর্তের মধ্যে সতেজ করে তলে। পুদিনা পাতার ব্যবহার রান্নার কাজে বহুল ভাবে প্রচালিত । রান্নার কাজে পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে রান্নায় স্বাদ এবং সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যায়। শুধু স্বাদ আর ঘ্রাণ বললেই হবে না এটি পুষ্টি গুনেও সেরা।

এছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই পুদিনা পাতা বিভিন্ন ঔষুধ বানানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যা অনেকেই জানে না।  পুদিনা পাতা আমাদের রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার করা যায়। পুদিনা পাতা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা অনেক রয়েছে। তাই পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। পুদিনা পাতার উপকার আমরা সব সময় পেয়ে থাকি। আজ আমরা পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয়ই আছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানানোর চেষ্টা করবো পুদিনা পাতা দিয়ে কি কি হয় বা পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা । 

সূচীপত্র: পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা  

পুদিনা পাতা বাজারে সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। পুদিনা পাতায় আছে স্যালিসিলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন -এ যা আমাদের ত্বকের সিবাম তেলের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে । পুদিনা পাতার এসেন্সিয়াল অয়েল পিত্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বাড়াতে পাচক এনজাইমকে উদ্দীপিত করে। পুদিনা পাতা খাদ্য থেকে উন্নত পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। 

পুদিনা পাতা আমাদের রূপচর্চায় কাজ করে। যেমন- মুখের ব্রণ দূর করে, মুখে জ্বালা থাকলে তা দূর করে ইত্যাদি। এবং চুলের উকুন দূর করে। সর্দি হলে অনেকের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সে সময় যদি পুদিনা পাতার রস খান তবে এই সমস্যা থেকে রেহায় পাবেন। পুদিনা পাতা অ্যাজমা ও কাশির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক । পুদিনা পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। 

পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা 

পুদিনায় থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্টের কারনে মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে হত্যা করতে সাহায্য করে। এবং দাঁতের প্লেক তৈরি করে যা আপনার নিঃশ্বাসকে উন্নত করে। এই কারনে পুদিনা পাতা বিভিন্ন টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পুদিনা পাতা আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে । গ্যাস্ট্রিক , পেট ফুলে থাকা ও বদ হজমের মতো বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে পুদিনা পাতার রস। পুদিনা পাতা শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে। 

আরো পড়ুন: কলমের কালি তোলার উপায়

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক

 পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক হলো, এটি বিভিন্ন ঔষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। এছাড়াও ব্লাড সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়, এলার্জির উদ্রেক হতে পারে এবং বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং মুখে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হতে পারে। পুদিনা পাতা বেশি খাওয়ার ফলে, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখের কারণ হতে পারে। 

পুদিনা পাতার অপকারিতা  

পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয়ই আছে।পুদিনা পাতার অপকারিতা গুল হলো পুদিনা পাতার চা আমাদের শরীরের রক্তের শর্করা কমিয়ে দিতে পারে । আবার ডায়বেটিকস এর ঔষুধের সাথে মিশ্র বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই ডাইবেটিকস রোগীদের উচিত পুদিনা পাতার চা এড়িয়ে চলা, কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া । 

রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার 

প্রয়োজনীয় উপাদান -

প্রয়োজন মতো পুদিনা পাতা ,পানি, লেবুর রস। 

ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি ঃ

প্রথমে পুদিনা পাতা কয়েক ফোঁটা পানি দিয়ে বেটে নিতে হবে এবং ২  চামুচ পুদিনা পাতার রসের সাথে ১ চামুচ লেবুর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেলো ব্রণ কিংবা মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করার ফেসপ্যাক। এটি প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে কিংবা সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করা যাবে।  

পুদিনা পাতার রেসিপি  

খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ানোর জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। পুদিনা পাতা দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি বানানো যায়। যেমন- পুদিনা পাতার জুস, পুদিনা পাতার চা, পুদিনা পাতার ভর্তা ইত্যাদি। 

পুদিনা পাতার জুস-

প্রয়োজনীয় উপাদান ঃ 

১ কাপ পুদিনা পাতা,  হাফ কাপ ঠান্ডা পানি, হাফ চা-চামুচ বিট লবণ, এবং লেবুর রস ২ চা-চামুচ, হাফ চা-চামুচ জিরা গুরা, ৩ টেবিল চামুচ চিনি।

প্রস্তুতপ্রণালী ঃ 

  • প্রথমে ১ কাপ পুদিনা পাতা নিয়ে নিতে হবে, তারপর হাফ কাপ ঠান্ডা পানি , হাফ চা-চামুচ বিট লবণ, এবং লেবুর রস ২ চা-চামুচ, হাফ চা-চামুচ জিরা গুরা, ৩ টেবিল চামুচ চিনি নিয়ে ব্লিন্ডারে ব্লিন্ড করে নিতে হবে। ব্লিন্ডারে না করলে প্রথমে পুদিনা পাতা গুলো বেটে নিতে হবে দিয়ে সকল উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। 
  • ব্লিন্ড করা হয়ে গেলে একটি কাপে বরফের টুকরা দিয়ে কাপের উপর ছাকনি রেখে অবশ্যই ভালোভাবে ছেকে নিতে হবে। 
  • এবং পরিবেশনের জন্য একটি লেবুর গোল পিস কেটে কাপে আটকে দিতে হবে।  
  • এই জুসটি তিন দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে। 

পুদিনা পাতার চা- 

চা বানানোর প্রয়োজনীয় উপাদান ঃ 

  • ১২-১৫ টা পুদিনা পাতা ।
  • এক কাপ পানি। 
  • অল্প একটু চা পাতি। 

আরো পড়ুন: পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায়

চা বানানোর পদ্ধতি ঃ 

  • প্রথমে একটি চায়ের হাড়ি চুলাতে বসাতে হবে। 
  • এরপর এক কাপ পানি দিয়ে দিতে হবে হাড়িতে।
  • তারপর পানি হালকা গরম হয়ে গেলে পুদিনা পাতাগুলো দিয়ে দিতে হবে। 
  • তারপর ভালোভাবে ৩-৪ মিনিট জ্বাল করে নিতে হবে। 
  • এরপর পাতাগুলো নেড়ে দিবো, এবং এর পর অল্প পরিমাণে চা দিয়ে দিবো । 
  • এখন আবারো সব উপকরণগুলো এক সাথে মিশিয়ে নিবো।
  • এবার একটি কাপ এর ওপর ছাকনি দিয়ে চা ছেকে নিবো। 

তৈরি হয়ে গেলো পুদিনা পাতার চা। 

পুদিনা পাতার ভর্তা-

প্রয়োজনীয় উপাদান ঃ 

২ কাপ পুদিনা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, কয়েকটা শুকনো মরিচ, ১ টেবিল চামুচ শরিষার তেল,

১ কাপ পেয়াজ কুচি, ৭-৮ টি রসুনের কুয়া, ২ টেবিল পরিমাণ তেতুল (তেঁতুলের বিচি ফেলে দিতে হবে)। 

প্রস্ততপ্রণালী ঃ 

প্রথমে শুকনো মরিচ ভেজে নিতে হবে। মরিচ ভাজা হয়ে গেলে তা তুলে নিয়ে ওই প্যানে ১ টেবিল চামুচ শরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে । তারপর ১ কাপ পেয়াজ কুঁচি এবং ৭-৮ টা রসুনের কুয়া দিয়ে দিতে হবে । এই গুলো হাল্কা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। এবং একই প্যানে পুদিনা পাতা গুলো দিয়ে দিতে হবে,এই গুলা নেড়ে চেড়ে কিছুক্ষন ভেজে নিতে হবে, তেল লাগলে দেয়া লাগবে। ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। এবং ২ টেবিল চামুচ তেঁতুল নিবো। সব গুলো উপকরণ ব্লিন্ডারে নিয়ে নিবো। এবং দিয়ে দিতে হবে স্বাদ মতো লবণ। সব গুল একসাথে ব্লিন্ড করা লাগবে। অথবা শীল পাটা তে বেটে নিতে হবে। হয়ে গেল পুদিনা পাতার ভর্তা। 

আরো পড়ুন: মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা 

পুদিনা গাছের পাতা গরম পানির সাথে মিশিয়ে কুল্কুচি করলে উপকার পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা সম্পর্কে ঃ 

  • পুদিনা পাতার জুস খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং খিঁচুনি প্রতিরোধ করে। 
  •  পেট ব্যথা দূর করার জন্য এই জুস অনেক উপকারি এবং পিরিয়োডের ব্যথা থেকে মুক্তি করে এই জুস।  
  • এই জুসটি বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার ও ফুস্ফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেক উপকারি। 
  • পুদিনা পাতার জুস এলার্জি থেকে মুক্তি দেয় ।
  • পুদিনার জুস ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণ দূর করে । 
  • পুদিনার জুস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পুদিনার জুস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 
  • পুদিনায় ভিটামিন "বি" "ই" "সি" ও "ডি" থাকে বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডা ও কাশিতেও পুদিনার জুস অনেক ভালো কাজ করে । 
  • পুদিনা পাতার জুস ত্বককে শীতল করে এবং শরীরকে সতেজ করে ইত্যাদি । 

পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা 

পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয়ই আছে। পুদিনা পাতা দিয়ে চা বানানো যায় এবং খেতেও অনেকে পছন্দ করে । পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা গুলো হলো-  অনেকে নিঃশ্বাসের দূর্গন্ধ জনিত কারনে ভুগছেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পুদিনা পাতার চা খান। পুদিনা পাতার চা খাওয়ার কারনে শরীর থাকবে সুস্থ এবং বিভিন্ন ধরণের জিবাণু থেকে মুক্তি পাবেন । এই চা টি প্রতিদিন সকালে খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচা যায়। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক পুদিনা পাতার চা কিভাবে  বানাতে হয় ঃ

চা বানানোর প্রয়োজনীয় উপাদান ঃ 

  • ১২-১৫ টা পুদিনা পাতা ।
  • এক কাপ পানি। 
  • অল্প একটু চা পাতি। 

চা বানানোর পদ্ধতি ঃ 

  • প্রথমে একটি চায়ের হাড়ি চুলাতে বসাতে হবে। 
  • এরপর এক কাপ পানি দিয়ে দিতে হবে হাড়িতে।
  • তারপর পানি হালকা গরম হয়ে গেলে পুদিনা পাতাগুলো দিয়ে দিতে হবে। 
  • তারপর ভালোভাবে ৩-৪ মিনিট জ্বাল করে নিতে হবে। 
  • এরপর পাতাগুলো নেড়ে দিবো, এবং এর পর অল্প পরিমাণে চা দিয়ে দিবো । 
  • এখন আবারো সব উপকরণগুলো এক সাথে মিশিয়ে নিবো।
  • এবার একটি কাপ এর ওপর ছাকনি দিয়ে চা ছেকে নিবো। 

তৈরি হয়ে গেলো পুদিনা পাতার চা। 

পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা এর শেষকথা

পুদিনা পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ  উপাদান  যা আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগে । আমরা পুদিনা পাতার বিভিন্ন রেসিপি বানিয়ে খেতে পারি। আবার বিভিন্ন ঔষুধ বানানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এই জন্য বলা যায় পুদিনা পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url