ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর মূলত মারাত্মক একটি জ্বর।এটি একটি মশাবাহিত জ্বর। বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর টি হলো ভাইরাল জ্বর। বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে মারা যায়। ডেঙ্গু জ্বর অনেক সময় মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বর যাতে না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়।

তাই এডিস মশার বংসবিস্তার ধংস করতে হবে।আজকের এই আর্টিকেল টি ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে লেখা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সচেতন হতে হলে এই আর্টিকেল টি ভালো ভাবে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর কি

ডেঙ্গু জ্বর হলো ভাইরাস জনীত জ্বর।ডেঙ্গু জ্বরকে মশাবাহিত জ্বর ও বলা হয়ে থাকে।এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়।এডিস মশার কামড়ের কারণে ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা যায়।উপসর্গগুলো হলো-জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি, পেশিতে ব্যাথা, গাটে ব্যাথা ও সমস্ত শরীরে ফুসকুড়ি বের হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি

ডেঙ্গু জ্বর একটি প্রাচীন রোগ। এই রোগের প্রথম উল্লেখ পাওয়া গেছে চীনের চিকিসা সংক্রান্ত নথিপত্রে। সেখান থেকেই জানা গেছে চীনে এই রোগ টি ৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে শনাক্ত করা হয়েছিলো। এই জ্বরকে শনাক্ত ও ডেঙ্গু জ্বর বলে নামকরণ করা হয় ১৭৭৯ সালে। এর পরের বছর প্রায় একই সময়ে এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে এর প্রভাব দেখা যায়। এই জ্বর আসলে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়। সে জন্য এই জ্বর কে সেই সময় হাড়ভাঙ্গা জ্বর ও বলা হতো।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষন হলো শরীরে অধিক তাপমাত্রা। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে।ঘন ঘন জ্বর আসে। এছাড়াও শরীর অনেক ব্যাথা হয়।ডেঙ্গু জ্বর তিন ধরণের হয়ে থাকে।

  1. ক্লাসিক্যাল
  2. হেমোরেজিক
  3. ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বর সমূহ
  • ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত শরীরে তীব্র জ্বর ও সমস্ত শরীর প্রচন্ড ব্যথা হয়।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ফারেনহাইট থাকে।
  • পেট ব্যাথা,মাথা ব্যাথা,চোখের পেছনে ব্যাথা হয়।
  • পুরো শরীরে লালচে রঙের ফুসকুরি বের হয়।
  • পাশাপাশি বমি বমি ভাব,এছাড়া বমিও হতে পারে।
ডেঙ্গুর হেমোরেজিক জ্বর সমূহ
রোগীর এই অবস্থাটি সব চেয়ে জটিল।এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহের পাশাপাশি আরোও অনেক সমস্যা দেখা দেয়-
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পরে।যেমন-নাক,মুখ দিয়ে,কফের সাথে,রক্ত বমি,পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বের হয়।এছাড়া নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে ভালো হয় না অনেকদিন পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হতেই থাকে।
  • এই রোগীর অনেক সময় শরীরে পানি ধরে।অনেক সময় লিভারে আক্রান্ত হয়ে লিভার জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।আবার কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক ধরনের রোগের দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম জ্বর সমূহ
এই অবস্থায় রোগীর অবস্থা খুব জটিল হয়ে যায়।এমনকি রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।এই জ্বরের লক্ষণ সমূহ হলো-
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • শরীরের হাত,পা বা অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যাইয়।নারীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও ধীর গতিতে হয়।
  • প্রসাব কমে যাওয়া।
  • রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়,এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর হলে যা যা করবেন-
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিপূর্ণভাবে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • প্রচুর পরিমানে তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে,ডাবের পানি,লেবুর শরবত,ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন খেতে হবে একটু পর পর।
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী যদি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ও স্বভাবিক ওজনের হয় তাহলে দিনে আটটি করে প্যারাসিটামল খাওয়ানো যাবে।কিন্তু রোগীর যদি হার্ট,কিডনি,লিভারজনিত সমস্যা থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • রোগী কে মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
  • বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব

বাংলাদেশে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ডেঙ্গু জ্বরের আর্বিভাব ঘটে এবং সেই থেকে এখনো অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর ও অনেকটা মহামারির মতোই রুপ ধারণ করে থাকে।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা না হয় বা চিকিৎসা দেওয়া না হয় তাহলে জীবন ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড় থেকে হয়।এজন্য এডিস মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এডিস মশা পচা পানি,ঝোপঝার, জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করে। এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রয়োজনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন নয়। এজন্য যেকোন রোগে আক্রান্ত হয়।রাস্তা ঘাটে দেখা যায়,ভাঙ্গা হাড়ি,বোতল বা যেকোনো যায়গায় পানি জমে থাকে, এসব জায়গায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে থাকে। এমনকি বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝারেও এডিস মশা বংশবিস্তার করে থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিত এসব জায়গা পরিষ্কার, পরিছন্ন রাখা। যাতে এডিস মশার বংসবিস্তার রোধ করা যায়। বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে এডিস মশার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। কারণ শহরে ঘন বসতি ও বদ্ধ জলাশয় বেশি থাকায় এখানে এডিস মশার বংসবিস্তার বেশি হয়।

ডেঙ্গু জ্বর সমন্ধে ভূল ধারণা

ডেঙ্গু জ্বর সমন্ধে অনেকেই ভূল ধারণায় আক্রান্ত। এ  কারণে ডেঙ্গু নিয়ে অনেকেরই অনেক ভীতি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে ডেঙ্গু জ্বর হলো ছোঁয়াচে রোগ। কোনো সুস্থ মানুষ যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসে সেও  ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন ডেঙ্গু রোগীকে আলাদা রাখতে হয়। অনেকের ধারণা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণূ বাতাসে ছড়ায়।আবার অনেকেই মনে করেন,ডেঙ্গু মানেই মৃত্যু।

প্রকৃত সত্য হলো-ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে নয়,কাজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সাথে এক বিছানায় ঘুমালেও কোন সমস্যা হবে না। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা রাখার প্রয়োজন নেই। বরং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পাশে থেকে তার সেবা করা টা জরুরি। আবার কেউ কেউ মনে করে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণূ বাতাসে ছড়ায়। এটাও ভুল ধারণা।ডেঙ্গু জ্বর মুলত এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু মানেই মৃত্যু, অনেকে এটাও মনে করেন। কিন্তু এটাও ভুল ধারণা,ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসা বা সেবা পেলে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। অসুস্থ মানুষের সবচেয়ে বর ঔষধ হলো মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা। তাই অসুস্থ মানুষের পাশে থেকে রোগী কে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখা টা জরুরি। একমাত্র মানসিক শক্তিই পারে যেকোনো রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে। ঠিক তেমনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকেও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেওয়া যাবে না। তার পাশে থেকে ভালোভাবে সেবা করলে তারাতারি সুস্থ করে তুলা সম্ভব।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, এডিস মশা খুব মারাত্মক মশা। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। তাই এডিস মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির চারপাশ সব সময় পরিস্কার রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাড়ির আশে পাশে জমে থাকা পানি পরস্কার করতে হবে। কন কারনে যাতে এভাবে পানি জমে না থাকে। তারপরেও যদি মশা কামড়ানোর পরে জ্বর আসে, তাহলে খুব দ্রুত নিকস্থ স্বাস্থকেন্দ্রে দেখা করে পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। .

যদি ডেঙ্গু জ্বর হয়েই থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোন দুঃচিন্তা করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর হলে নিয়ম-কানুন মেনে চললে খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যায়।তাই চিন্তার কিছুই নাই। ডেঙ্গু জ্বর হলে মনে জোর রেখে বেশি বেশি রেস্ট নিতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে লেবুর রস, শরবত, ফল ইত্যাদি। এডিস মশাও ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে একটা কবিতে দেওয়া হল-

বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়,
এডিস মশার বাসস্থান।
জমে থাকা পানিতে,
বংশবিস্তার করে দ্রুত গতিতে।
এডিস মশার কামড়ে ,
ডেঙ্গু হবে অকালে............।
ডেঙ্গু হলে রক্ষা নাই,
এই কথার আর ভিক্তি নাই.........।
ডেঙ্গু থেকে বাচতে হলে,
পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে...............।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url