কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম

আমরা অনেকেই অফিস বা পড়াশুনার জন্য দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকি । দীর্ঘ সময় বসে থাকার জন্য আমাদের মেরুদণ্ডের মাংসপেশি সামনের দিকে সংকুচিত হয় এবং পিছনের দিকে প্রসারিত হয়। আমাদের মাংসপেশির এই সংকচন এবং প্রসারনের একমাত্র কারণ হলো আমরা সঠিক ভাবে বসে কাজ করি না। এই কারণে আমাদের দেহ পেশির ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে । তখন মেরুদন্ডের মাঝখানে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে আমাদের কোমরে ধীরে ধীরে ব্যাথা অনুভূত হয়। এবং কোমরের ব্যথা ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়ার কারনে অনেকে ঠিকমতো হাটতে পারে না।

মেয়েদের সাধারণত ভারী জিনিস উঠালে কোমরের ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং পিরিয়ডের সময় কোমরে ব্যথা করে। কম বেশি প্রায় মানুষ কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। তাই নিজেকে কোমর ব্যথা থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তাই আমরা কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম গুলো জেনে ব্যায়াম করলে কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবে। তাছাড়া কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য পেইন কিলার পাওয়া যায়।

সূচীপত্র:কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম

কোমরের ব্যাথা কেন হয়

কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্য অন্যতম কারণ দীর্ঘ সময় ধরে একই ভাবে বসে থেকে কোনো কাজ করি। আমরা অফিস আদালতে বা আমাদের কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা। দীর্ঘ সময় ধরে একই ভাবে বসে কাজ করলে মেরুদন্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত হতে থাকে এবং পিছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হতে থাকে। যার কারণে মেরুদন্ড ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয় এবং মেরুদন্ডের মাঝ বরারব অতিরক্ত চাপ পড়তে থাকে আর এই চাপ থেকে ব্যথার সৃষ্টি হয় ।

এছাড়াও চেয়ারের কাঠামোগত ক্রটির কারণে কোমরে ব্যাথা সৃষ্টি হয় । অনেক সময় ছোট অবস্থায় খেলা করতে বা কোনো কারণে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়ে থাকলে তা বড় হওয়ার সাথে সাথে কেই কোমর ব্যথা বৃদ্ধি পেতে থাকে তার কারণে কোমর ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। যাই হোক আমাদের কোমর ব্যথা হলে কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম করার মাধ্যে দূর করার চেষ্টার করব। 

মেকানিক্যাল ব্যাকপেইনের উপসর্গ

কোমরে ব্যথা খুব কমন একটা সমস্যা । প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জন জীবনে কোনো না কোনো সময়  কমরের ব্যথায় ভুগেন। সব থেকে কমন যে কারণে কোমরে ব্যথাটা হয়ে থাকে তাকে মেকানিক্যাল ব্যাক পেইন বলে।   

  • এই ব্যথাটি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং ঝুকে অথবা ভাড়ী ওজনের জিনিস উঠানোর পর ব্যথাটা হঠাৎ করে শুরু হয়।  
  • ব্যথাটা থাকে কোমরের নিচের অংশে অথবা পায়ের উপরের অংশে এবং ব্যথাটা কখনো পায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্ত যায় না। 
  • ব্যথাটা যখন হয় আপনি যখন কাজ করবেন তার সাথে সাথে ব্যথাটা বাড়ে এবং কিছুক্ষন শুয়ে থাকলে তা কমে যায়। 
  • ব্যথাটা মাঝে মাঝে হয়। 

অফিস-আদালত ,ব্যাংক, হাসপাতাল ইত্যাদিতে দীর্ঘ সময় ধরে বসে সামনের দিকে ঝুকে থেকে কাজ করলে কমরের মেরুদন্ডের ডিস্কে ব্যথা অনুভূত হয় ।

কোমর ব্যথার গাছ 

আজকে আপনারাকে জানাবো আকন্দ পাতার উপকারিতা। আমাদের শরীরের যেকোনো অংশে অর্থাৎ হাত, পা, হাটু, কোমর ইত্যাদি অংশে ব্যথা কোনো রকম ঔষুধ ছাড়া কিভাবে দূর করা যায়। যাদের কোমরে ব্যথা বা শরীরের যেকোনো অংশে ব্যথা ঔষুধ খেয়েও ব্যথা না কমলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।  আমরা ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোমরে ব্যথা দূর করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো।  আকন্দ পাতা আমাদের শরীরের যে কোনো ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। ব্যথা যতোই পুরোনো হোক না কেন  ব্যথা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। চলুন আমরা যেনে নিই কিভাবে এই আকন্দ পাতা ব্যবহার করবো- 

  • প্রথমে আমদের একটা বাটিতে দুই চা চামুচ শরিষার তেল নিয়ে নিতে হবে। 
  • এরপর এর সাথে দুই চা চামুচ হলুদ গুরা যোগ করতে হবে। 
  • এখন এই দুইটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।  এবার এই মিশ্রণটি একপাশে রেখে দেব।
  • এবার ধোঁয়া কয়েকটি আকন্দ পাতায় শরিষার তেল মাখিয়ে নেব।  
  • এরপর খুব অল্প আঁচে চুলায় একটি হাড়ি উল্টো করে বসিয়ে তার উপর তেল মাখানো আকন্দ পাতা গুলো দিয়ে পাতা গুলো সেঁকে নেব। 

এবার চলে আসি মূল চিকিৎসায় । কোমরে ব্যথা থাকলে, প্রথমে তৈরি করা মিশ্রণটি অর্থাৎ হলুদ ও তেল দিয়ে তৈরি করা মিশ্রণটি কোমরে মালিশ করে নিতে হবে । তারপর ঐ আকন্দ পাতাটি মিশ্রণ মালিশ করা স্থানে ভালোভাবে বেধে দিবেন, এবং খেয়াল রাখবেন পাতাটি যেন গরম থাকে। এখন পাতাটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেধে রাখবেন । এবার খেয়াল করবেন আপনার সেই ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। এটি যদি এক -দুই সপ্তাহ ব্যবহার করা যায় তবে ইনশাআল্লাহ্‌ সম্পূর্ণ ব্যথা দূর হয়ে যাবে ।     

কোমর ব্যথার চিকিৎসা 

অনেকেই কোমরে হালকা ব্যথা হলে তেমন গুরুত্ব দেয় না। এই গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে রোগীর  কোমরে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । দীর্ঘ দিন মেডিসিন খেলেও রোগী পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয় না । ফলে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কোমরের মেরুদন্ডের অপারেশন কিংবা সার্জারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই হালকা ব্যথাকে অবহেলা না করে ভালোভাবে চিকিৎসা এবং বিশ্রাম করা প্রয়োজন।  কোমরে গরম পানির ভাপ দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় । আবার তেল দিয়ে মালিশ করলেও ব্যথার উপশম হয়। চিত হয়ে শুইলে এবং কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম করলে কোমরের ব্যথা দূর করা যায়।  

কোমর ব্যথার খাবার 

আমাদের কোমরে পাঁচটি হাড় রয়েছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের কোমরে ব্যাথা হয়ে থাকে । তাই আমাদের কোমরের ব্যথা দূর করার জন্য কিছু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন । যেমনঃ শাক-সবজি, ফল, চিজ, বাদাম, দুধ, ঘি ইত্যাদি খেলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এবং প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরার জুস  খেলে ব্যথার উপশম হতে পারে এবং এর সাথে আমরা কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম গুলো করব। 

কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট 

সাধারণত ব্যথার ট্যাবলেট খাওয়া উচিৎ না। তারপরেও অতিরিক্ত ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত কোমরে ব্যথা থাকলে ডাক্তাররা  Tab.Naprosyn plus ঔষধটি দিয়ে থাকেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই ঔষুধ খাওয়া উচিত। 

মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার  

কারণঃ মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণগুলো হলো-সঠিকভাবে না শুয়া-বসা, ভারী জিনিস তোলা ,হাটা-চলা, আবার রিকশা, অটো , বাস এর ঝাঁকুনিতে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। এবং বয়স্ক মহিলাদের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। 

প্রতিকার ঃ কোমরে ব্যথা দূর করার জন্য গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। এবং সেঁক দেওয়ার পর না কমলে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে। এবং ডাক্তার যে ঔষুধ দিবে তা নিয়মিত খেতে হবে। 

কোমর ব্যথার প্রতিকারের ব্যায়াম 

১। প্রথমে শুয়ে একটা পা বিপরীত পায়ের উপর নিবেন। এর পর দুই হাত, একটা হাত পায়ের ভিতর দিয়ে এবং অন্যটি বাহির দিয়ে চাপ দিয়ে ১০ সেকেন্ড থাকতে কবে। একই ভাবে  বিপরীত পায়েও চাপ দিয়ে ১০ সেকেন্ড থাকা লাগবে।  

 ২।প্রথমে শুয়ে একটা পা সোজা রেখে অন্য পা কে দুই হাত দিয়ে কপালের দিকে নিয়ে আসতে হবে একদম শুয়ে থেকেই। এইভাবে ৫ সেকেন্ড থাকা লাগবে। এবং একই প্রক্রিয়ায় ৪-৫ বার করা লাগবে।আবার একই ভাবে অন্য পা টিকে দুই হাত দিয়ে কপালের দিকে নিয়ে আসতে হবে। 

কোমরের ব্যথা কমানোর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট

কোমর ব্যথা কমানোর জন্য আপনারা  Tab.Starcal-D খেতে পারেন। এই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটটি খেলে কোমর ব্যথা দূর হয়ে যায়। এর উপকারিতা হলো এটি হাড় ক্ষয় রোধ করে অর্থাৎ মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পরবর্তী সময়ে হাড়ের ক্ষয় রোধ করে, এবং মহিলাদের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের অভাব মিটায়, এবং দাঁতের মাড়ি গিঠনে সাহায্য করে। 

শেষ কথা: কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম 

বর্তমানে এই কোমর ব্যথায় অনেকেই ভুগছে। তবে যারা টেবিলে বসে বিভিন্ন অফিস,ব্যাংক,হাসপাতালে কাজ করেন, এবং দীর্ঘ সময় সামনের দিকে ঝুকে ড্রাইভিং করেন ইত্যাদি সাধারণত তাদের কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে । আবার  আমাদের উচিত দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ না করা। তাহলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আজকে আমরা কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম মাধ্যেমে কোমর ব্যাথ্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো জানলাম। আমরা যদি এই কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যায়াম করি তাহলে ইনশাল্লাহ্ আমাদের কোমর ব্যথা কমে যাবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Shanto
    Shanto May 12, 2023 at 1:36 AM

    Thank u for ur good information.

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url