কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনি হলো প্রানীদেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিডনি বা বৃক্ক প্রানীদেহের রেচন
তন্ত্রের প্রধান অংশ।কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত ছেকে বর্জ্য পদার্থ আলাদা করা
এবং মুত্র উৎপাদন করা। মানব দেহের রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার কিডনির মধ্যে দিয়ে
প্রবাহিত হয়। সুস্থ দেহের জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য কিডনি অপরিহার্য। যেহেতু
বেচে থাকার জন্য কিডনি এতোটাই প্রয়োজন। সেহেতু কিডনির যাতে কোনো সমস্যা না হয়
সেইদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আজকাল অনেক মানুষই কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আজকের এই আর্টিকেল টি মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে।আজকের এই আর্টিকেল টি ভালোভাবে পড়লে কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার সহ আর ও অনেক কিছু জানতে পারবেন।
সুচিপত্রঃকিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার
- কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
- কিডনির ব্যথা দূর করার উপায়
- কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
- কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
- কিডনি রোগের ঔষধের নাম
- কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে শেষ কথা
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
মানব দেহের প্রধান অংশ হলো কিডনি। তাই কিডনিজনিত সমস্যা কে প্রাণঘাতক সমস্যা বলা
যায়।কিডনিজনিত সমস্যা সহজে বোঝা যায় না। এটা আস্তে আস্তে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং
এক সময় এসে প্রাণ নাশের কারণ হয়ে দারায়। কিডনিজনিত সমস্যার কারণে অনেক ধরণের
সমস্যার সৃষ্টি হয়।যেমন- প্রসাব কম হওয়া,রাতে ঘন, ঘন প্রসাবের চাপ দেয়, প্রসাবের
সময় ব্যথা অনুভব হওয়া, প্রসাবের সাথে রক্তের কোষগুলিও বের হয়ে আসে, পায়ের গোড়ালি
ও পায়ের পাতা ফুলে যায়, খাবারে অনিহা, বমি, বমি ভাব হয়, চোখের চারপাশ ফুলে যায়,
শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মনযোগ কমে যায়। এই ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে
বুঝতে হবে। কিডনির কোনো সমস্যা হয়েছে। কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার
সম্পর্কে প্রত্যেক টা মানুষের প্রাথমিক ধারণাগুলো জেনে থাকতে হবে।
কিডনির ব্যথা দূর করার উপায়
কিডনিজনিত সমস্যাগুলো একদিনে হয় না। অনেক সময় অনেক ধরণের লক্ষণই দেখা যায়। অনেক
সময় আচমকা কোমড় ব্যথা দেখা যায়। তখন অবশ্যই চিন্তা হয় যে এটা কিসের জন্য,কেনো
কোমড় ব্যথা হচ্ছে। আবার অনেক সময় মনে হয় যে, এটা কিডনির সমস্যার জন্য এমন ব্যথা
হচ্ছে নাকি।আমাদের শরীরে ডান পাশে,বাম পাশে বুকের পাজর এবং কোমড়ের হাড়ের মাঝখানে
কিডনি থাকে।যদি কোমড়ে ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে সন্দেহ হয়ে যে, এটা কিডনির সমস্যা
জন্যই হচ্ছে। তাহলে অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎ্সকের নিকট যেতে হবে।
সেই চিকিৎসক যেভাবে চলতে বলবে ঠিক সেই ভাবেই চলতে হবে।তবে চিকিৎসক না দেখিয়ে
কিডনি সমস্যা কে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের ব্যথার ঔষধ খাওয়া ঠিক হবে না। ব্যথার ঔষধ
না খেয়ে বাসায় এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে চললে অনেকটা আরাম পাওয়া যাবে। যদি
মনে হয় যে কিডনির কোনো সমস্যা হয়েছে, তাহলে ঘরোয়াভাবে এই কাজগুলো করা যেতে
পারে-প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। কারণ পানির পরিমান শরীরে কম হলে কিডনির
সমস্যা হতে পারে।
তাই একজন মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩লিটার পানি পান করা উচিত। অনেক সময় কিডনিতে
পাথর হয়। সেইক্ষেত্রে পাথর যদি ছোট হয়ে থাকে তাহলে আরও বেশি পানি পান করতে হবে।
যাতে পানির সাথে পাথর বের হয়ে আসে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। কিডনিতে ব্যথা হলে
অনেক সময় বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে যায়। অনেক সময় গরম সেঁক দিলে ব্যথা হওয়া স্থানে
অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
কিডনির ব্যথা হলেও গরম সেঁক দেওয়া যাবে। এতে করে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।গরম সেঁক
দিলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ও নার্ভের সেনসেশন কমে। ফলে আরাম অনুভব হয়। তবে গরম
সেঁক দেওয়ার সময় সাবধানের সাথে সেঁক দিতে হবে,যাতে পুড়ে না যায়। চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেতে হবে।ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে
না। চা,কফি বা কলা এধরণের খাবার খাওয়া যাবে না।
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
মানবদেহের জটিল রোগগুলোর মধ্যে কিডনি রোগ টি হলো ভয়াবহ রোগ। কিডনি রোগে আক্রান্ত
রোগীকে খাবারের বিষয়টি মেনে চলতে হয়। এমনও কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো কিডনি রোগীর
জন্য খুবই ক্ষতিকর। আসুন তাহলে কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার এই
আর্টিকেলে জেনে নেই, কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর কোন কোন খাবার খাওয়া জরুরী এবং
কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়।
কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত।
কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন-ভাত, ময়দা, রুটি, চিরা, সুজি, চালের গুড়া, চালের রুটি,
সাগু, সেমাই ইত্যাদি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। বাদাম,কাঠালের বিচি, সিমের বিচি,
অতিরিক্ত পিউরিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাক সবজি, পিচ্ছিল ও গাঢ় লাল রঙের শাক সবজি
এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া খাসির মাংস, গরুর মাংস, মগজ, কলিজা ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে
চলতে হবে।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনির সমস্যা প্রথমে ততোটা বোঝা যায় না। তবে আস্তে আস্তে একটা সময় ক্ষতিকর রুপ
ধারণ করে। কিডনি রোগ হলে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে। কিডনি রোগের লক্ষণগুলো
হলো-প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, খাবারের প্রতি অনিহা হওয়া, মাঝে মাঝে বমি, বমি
ভাব হয়, প্রসাবের সাথে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গা
(হাত,পা,মুখ) ফুলে যাওয়া, মাথা ব্যথা হওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হওয়া
এসবই লক্ষণ।
কিডনি রোগের প্রতিকার-বেশি বেশি পানি পান করতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে,
ধুমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে, খাবারে অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করতে হবে,
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে
হবে,তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শাকসবজি বা
ফলমূল না খাওয়াই ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেতে
হবে।কিডনি রোগটা যদি বেশিদিন হলে না হয় বা শুরুতে বুঝতে পারা যায়,তাহলে এসব নিয়ম
মেনে চললেই তারাতারি সুস্থ হওয়া সম্ভব হবে।
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে। কিডনি রোগের ঘরোয়া উপায়ে
চিকিৎসা করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করলে অনেক সময় ভালো হয়ে
যায়।কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার এবং ঘরোয়াভাবে কিভাবে চিকিৎসা করা
যায় তা জেনে নেই।অনেক সময় আমরা বাহিরে থেকে এসে যখন অনেক পিপাসা পায়, তখন অনেক
দ্রুত পানি পান করে থাকি, এটা শরীরে জন্য ঠিক নয়, এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেলে
কিডনির ওপর প্রেসার পড়ে। এই জন্য আমাদের উচিত মুখভরে একঢোক পানি আস্তে আস্তে পান
করা।
দৈনিক প্রায় ১৫ মিনিট শরীরে রোদ লাগানো প্রয়োজন। সূর্যের আলো সরাসরি শরীরে লাগালে
ভিটামিন ডি তৈরি করে। ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এতে
কিডনি ভালো থাকে এবং অনেক ধরণের রোগ থেকে বাচা যায়। সবজি বা ফলমূল খেতে হবে অনেক
পরিমাণ। ফলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো-তরমুজ, জাম, করমচা, শসা, গাজর, বিট এইসব
ফলমূল খেতে পারে। যখন ইচ্ছে তখনই ফলের রস খেতে পারবে, তবে ভরা পেটে খাওয়া যাবে
না। ৫০ ভাগ ফলের রসের সাথে ৫০ ভাগ পানি মিশিয়ে খেতে হবে।প্রতিদিন ব্যায়াম করতে
হবে। যাতে শরীর ভালো থাকে,সুস্থ থাকে।
কিডনি রোগের ঔষধের নাম
রোগ কখনো ভালো হতে পারে না। যে রোগীই হোক না কেনো সেটা কষ্টেরই হয়। তাই আমাদের
উচিত যাতে কোনো রকম রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধতে না পারে সেইদিকে খেয়াল রাখতে
হবে। কিডনি রোগ টা হলো মারাত্বক রোগ। এই রোগে মানুষ মারাও যেতে পারে। তাই এসব রোগ
হতে পারে এই ধরণের কাজকর্ম থেকে নিজেকে সব সময় সাবধান রাখতে হবে। কিডনি রোগের
কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কিডনি রোগের ঔষধগুলো চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।কিডনি রোগের ঔষধগুলো
হলো-লোসারট্যান,এমলোডিপেইন,রেমিপ্রিল, আয়রন ইত্যাদি।
কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে শেষ কথা
কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে ওপরে অনেক কিছু বলা হয়েছে। মানুষের জীবনে
সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। একজন মানুষ কে সুস্থ থাকতে হলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে
হবে। তাহলে আর অসুস্থতায় ভুগতে হবে না। কিডনি রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার
সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যদিও এই রোগ যাতে না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে
হবে,তারপরও যদি হয়েই যায় তাহলে প্রাথমিক বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।তাহলে আর বর কোনো
আকার ধারণ করবে না।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url