রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।রোজা থাকার মাধ্যমে যেমন গুনাহ ঝড়ে যাবে, তেমনই শারিরিক ভাবে ও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা হয়। রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নিয়ামত। রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতার পাশাপাশি আখিরাতের জন্য আমলনামায় পূণ্য জমা হয়।

প্রতিবছর আমরা রোজা রাখার উপকারিতা পেয়ে থাকি। রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা কি কি পেয়ে থাকি তা আলোচনা করব।।  

সূচিপত্রঃ রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা 

রোজায় শারিরিক উপকারিতা

রোজা কে সামনে রেখে চলছে,রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতার প্রস্তুতি।অনেকেই ভাবে যে অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখলে হয়তো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু এটা একদম ভূল ধারণা।কেননা রোজায় মানুষের শারিরিক ও মানসিক উপকারিতার উন্নতি ঘটে।অনেকেই মনে করেন যে,রোজা রাখলে হয়তো প্রেসার কমে যাবে বা গ্যাসটিকের সমস্যা বেড়ে যাবে এসব চিন্তা বেশি হয়।কিন্তু রোজায় সাময়িক দুর্বলতা ছাড়া কোন  ধরনের ক্ষতি হয় না বরং রোজায় আমাদের শরীর অনেকটাই ফিট রাখে।সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না বরং উপকারিই বেশি।

রোজা রাখলে সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে আমাদের শরীরের ফ্যাট ও চর্বি কমে যাবে এবং শরীর টা ও বিষ্মুক্ত হয়ে যাবে।রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা ইফতারে ও সেহরিতে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে থাকি এজন্য ওজন কমাতে সাহায্য করে।আমরা অনেকেই অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুরি নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকি,রোজা আমাদের সেই চিন্তা দূর করে দিতে পারে।রোজা থাকার ফলে অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুরি কমে যাবে।রোজা থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিকস থেকে অনেক টা আরাম পাওয়া যায়।দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের  কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়।অনেকেই আছেন যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান কিন্তু বেশি খাবার খাওয়ার বদ অভ্যাস থাকার জন্য ওজন কমাতে পারছেন না,এই রমজানেই পারবেন এই ধরণের বদ  অভ্যাস গুলো  বাদ দিতে।

রোজা রাখার কারণে হজম শক্তিজনিত নানা সমস্যা দূর হয়।রোজা রাখলে দীর্ঘসময় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের এসিড খুব ধীর গতিতে নিঃসরিত হয়।আমরা জানি নেশা কখনো ভালো কিছু দেয় না,   অনেকেই অনেক ধরণের নেশা করে,রোজা রাখলে এই নেশাদ্রব্য থেকে দূরে থাকা যায় এ ছাড়া দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখলে  অনেক ধরনের  বদ অভ্যাস বাদ দিয়ে আমরা সঠিক পথে চলার শক্তি পাই। এজন্য বলা হয়েছে শুধুমাত্র এই রহমতের মাসে রোজায় শারিরিক ওমানসিক উপকারিতা পেয়ে থাকি।

রমজানে বেশিরভাগ মানুষ ইফতারে খেজুর খায় আর খেজুর আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে।একটা খেজুরে অনেক পুষ্ঠি থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার।আমরা অনেক সময় ইফতারে এতো বেশি খেয়ে থাকি যে সেহরিতে খেতেই চাই না কিন্তু এটা আমাদের শরীরের ওপরে অনেক ক্ষতির প্রভাব ফেলে।তাই সঠিক নিয়মে এবং পুষ্ঠিকর খাবার দিয়ে ইফতারি বা সেহরি করা।

ইফতারিতে বেশিভাগ ফলমূল রাখার চেষ্টা করতে হবে।আমরা বেশিরভাগ সময় ইফতারে ভাজাপোড়া বেশি পছন্দ করে থাকি ।যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইফতারে ভাজাপোড়া না খেয়ে আমরা ফলমূল খেতে পারি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার হবে।পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের শরীরের জন্য এক ধরনের ব্যায়াম।রোজা রাখার পাশাপাশি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের শারিরিক উপকার ফলাতে পারে।রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতার'র মধ্যে শারিরিক বিষয়গুলো মোটামুটি ভাবে  ওপরে আলোচনা করা হয়েছে।

রোজায় মানসিক উপকারিতা

রমজান মাস হলো  মুসলিমদের জন্য রহমতের মাস।এই মাসে আল্লাহ পাকের অশেস রহমতে মানুষের মনের পরিবর্তন করে দেন।হাদিস শরীফে বর্নিত আছেন--রমজান মাসে শয়তান কে বন্ধি করে রাখা হয়।এই জন্য মানুষ অন্যায় থেকে বিরত থাকেন এবং সব সময় নৈতিক কাজ/কর্মে নিয়োজিত থাকেন। রমজান মাস হলো পূর্ণ্যময় মাস।রমজান মাসে একে অপরের উপকারে মানুষ এগিয়ে আসে।ধনী,গরীবের মধ্যে মানসিক ভাবে একটা বন্ধন গড়ে উঠে।

বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় যে, অনেকেই গরীব,দুঃখীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করে মানবিক কাজে অংশগ্রহণ হয়।রোজা যেহেতু একটি ধর্মীয় ইবাদত তাই নিয়মিত রোজা রাখার ফলে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করা যায়।এ সময় স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় ফলে ব্রেনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। রমজান মাসে আমরা সবাই খারাপ অভ্যাসগুলো বাদ দিয়ে ভালো অভ্যাসগুলো দিয়ে জীবন যাপন শুরু করতে পারি।রমজান মাস হলো পবিত্র মাস ।

এই মাস হলো গুনাহ ঝড়ার মাস।এই মাসে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে হবে।সর্বশেষে বলা যায় যে, রমজান মানেই হলো আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত।রমজান মাসে শারিরিক ও মানসিকভাবে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়।রমজান আমাদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল সুখ,শান্তি।রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা পেয়ে থাকি,একটা মানুষের যদি শরীর ও মন ঠিক থাকে তাহলে পৃথিবীতে সেই প্রকৃত সুখী মানুষ।রমজানে রোজা রাখলে আল্লাহ পাক রোজাদারের মনে মহর বসিয়ে দেয়,এ জন্য রমজান মাসে মানুষ অন্যায় থেকে দূরে থাকে। 

পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটির ও বেশি মুসলিম রোজা রাখি।রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা হয় এর কারণ ,আল্লাহ পাক নিজে বলেছেন "রোজা আমার নিজের জন্য,তাই রোজার প্রতিদান ও আমি নিজেই দেবো।এজন্যই বলা হয়েছে রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা কোনো তুলনা নাই।রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না, আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত হলো রোজা।আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে রোজা সম্পর্কে বলেছেন,জান্নাতে "রাইয়ান" নামে একটি দরজা রয়েছে যে দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররা জান্নাতে প্রবেশ করবে।

এসব মাসয়াওলা শোনার পরে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়।আল্লাহপাক আরও বলেছেন,রোজায় নফল ইবাদতের সওয়াব, ফরজ ইবাদতের সমান করে দেওয়া হবে।এবং রমজান মাসে আল্লাহ পাক বেশি বেশি করে দান করতে বলেছেন।এ জন্য মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয় এবং একজন আরেকজনের প্রতি দয়ালু হয়। রোজায় সবাই একসাথে নামাজ আদায় করে,একসাথে ইফতারি করে এতে করে একজন আরেকজনের প্রতি সহনশীল হয়। রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা 'র গুরুত্ব অপরিসীম।

রোজায় মানসিক দিক বিবেচনায় রয়েছে ধর্মের প্রতি আনুগত্যতা,নমনীয়তা,সচেতনতাসহ সংযমী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত   করতে পারা যায়।রোজা আমাদের মন কে পবিত্র করে দেয়।দীর্ঘ এগারো মাস অপেক্ষা করার পর রমজান মাস আসে আর আমরা রমজান মাসে রোজা রাখি।হাদিসে বর্ণিত আছে রমজান মাসে শয়তান কে শিকল বন্দি করে রাখা হয়,ফলে মানুষ নিজে থেকে একটু চেষ্টা করলেই শয়তানের ধোকা থেকে বাচতে পারে।

রোজায় মানুষের মনের পরিবর্তন ঘটে মানুষ অনেক দান,খয়রাত করে।গরীব,দুঃখীদের পাশে দারায়।এগুলো সব কিছুই হয় আল্লাহর রহমতের কারণে।রোজাদার ব্যাক্তির মনের ভেতরের সমস্ত খারাপ মনোভাব দূর করে দেন আল্লাহ পাক।রোজা রেখে মানুষ একে অপরের সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করে না,এতে ঝগড়া,বিবাদ সৃষ্টি হয় না।একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসে।রোজা রাখলে মানুষ নৈতিক কাজ,কর্ম বেশি করে এবং পাপের দিকে ধাবিত হয় না সহজে।

রোজায় শারিরিক ও মানসিক উপকারিতা’র শেষ কথা

সর্বশেষ বলা যায় যে,রোজায় শারিরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই উপকার পাওয়া যায়।রমজান বা রোজা মুসলিমদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে অসংখ্য রহমত।দীর্ঘ এগারো মাস পাপ করার পর রমজানের রোজার মাধ্যমে সেই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা আল্লাহ পাক করে রাখছেন।যদি খাটি মুসলিম হয় তাহলে রমজান এর পরও সে আল্লাহর পথেই থাকবে,কারণ হেদায়েতের মালিক কেবলমাত্র আল্লাহ পাক।

কাজেই আল্লাহর পথে থাকতে হবে,আল্লাহকে মন থেকে ডাকতে হবে।তাহলেই রোজায় শারিরিক ও মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে।শুধু রোজায় নয় আল্লাহ কে  মন থেকে ডাকলে তিনি কোনো সময়ই ফিরিয়ে দেন না।আল্লাহ পাক তার বান্দার ডাক শোনার জন্যই বসে আছেন।কাজেই মন থেকে আল্লাহ কে ডাকতে হবে,তাহলেই ইহকাল,পরকালে শান্তিতে থাকতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url