ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস।ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ।ঈদ মানে শুধু খুশি আর আনন্দই নয়,ঈদ মানে বিপুল পরিমাণে সওয়াবও পাওয়া যায়।ঈদের দিন বিশেষ নামাজ পড়া হয়।যার মাধ্যমে বিপুল সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।সামনে ঈদুল ফিতর সমগ্র মুসলিম জাতিকে আনন্দের জোয়ারে ভাসাতে আসছে।ঈদ কে ঘিরে মুসলিম জাতির কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে।তার মধ্যে বিশেষ হলো ঈদের দিন ঈদ গাহ মাঠে নামাজ আদায় করা।
আজকের এই আর্টিকেলে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা কর হবে। কেউ যদি
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন।তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি
মনযোগ সহকারে পড়তে হবে।তাহলে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজের নিয়ম
ইসলাম মানেই সুন্দর,সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন।ইসলাম মানে শান্তি,কলহ নয়।ইসলামের
প্রত্যেকটা কাজে রয়েছে সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন।তেমনই ঈদের নামাজের নিয়ম কানুনও
রয়েছে।ইসলাম ধর্মে বছরে দুইটা ঈদ পালিত হয়।মুসলিমদের জন্য ঈদ হলো সবচেয়ে বড়
উৎসব।বছরে দুইটা ঈদ,কখন এই ঈদ পালন করা হবে তারও একটা সুন্দর নিয়ম ইসলামের বিধানে
আছে।কোন ঈদ আগে হবে,কোন ঈদ পরে সব কিছুরই একটা সুন্দর নিয়ম রয়েছে।তেমনই ঈদুল
ফিতরের নামাজের নিয়ম আছে,আবার ঈদুল আযহার ও নামাজের নিয়ম আছে।নিচে দুই ঈদের
নামাজের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঈদুল ফিতর নামাজের করণীয়
ঈদুল ফিতর কে রোজার ঈদ ও বলা হয়।কারণ ঈদুল ফিতর হয় শাওয়াল মাসের প্রথম দিন।আর
শাওয়াল মাসের আগের মাস টা হলো রমজান মাস।এই এক মাস পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম জাতী
রোজা পালন করেন ও বেশি বেশি করে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন।তারপর রোজার শেষে
শুরু হয় ঈদের আমেজ।রমজান মাস রহমতের মাস এ মাসে বান্দাগন আল্লাহ কে বেশি বেশি
স্মরণ করেন।রমজান মাসের যেমন অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে।তেমনই ঈদুল ফিতর নামাজের
করণীয় রয়েছে।ঈদে যেমন আনন্দ আছে, ঠিক তেমনই সওয়াব পাওয়ার রাস্তাও আছে। ঈদুল ফিতর
নামাজের করণীয় নিম্নে দেওয়া হলো,
- ঈদের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের সালাত আদায় করতে হবে।
- অতপর,গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
- স্বার্থ্যমত নতুন ও পরিষ্কার,পরিছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে।
- খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার ক্ষেতে হবে।
- চোখে সুরমা ব্যবহার করতে হবে।
- সকাল সকাল ঈদ্গাহ মাঠে যাওয়া।
- ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে ফিতরা প্রদান করা।
- যে রাস্তা দিয়ে ঈদ্গাহ মাঠে যাওয়া হয়,ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতে হয়।
- ঈদের নামাজ ঈদ্গাহ মাঠেই আদায় করতে হবে।
- ঈদ্গাহ মাঠে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে তাকবীর পড়তে পড়তে যাইতে হয়।
ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত
প্রত্যেকটা কাজের শুরুতে নিয়তটা খুব জরুরি। কোন কাজ করার আগে নিয়তটা খুব জরুরি।
ঠিক তেমনই নামাজেরও নিয়ত রয়েছে। একেক নামাজের একেক রকম নিয়ত করতে হয়।ফরয নামাজের
এক রকম নিয়ত, ওয়াজিব নামাজের এক রকম নিয়ত,সুন্নাত নামাজের এক রকম নিয়ত, নফল
নামাজের আবার আরেক রকম নিয়ত। ঠিক তেমনই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত রয়েছে।
ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত আরবীতে
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ
مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا
الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আর উসাল্লিয়া নিল্লাহি তাআলা রাকাআকাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ
সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান
ইলা ঝিহাতিত কাবাতিশ শরিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃআমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই
ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি-'আল্লাহু আকবর'।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
প্রথম রাকাতে ইমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা 'আল্লাহু আকবর' বলে উভয় হাত
বাধা।তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া।এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।প্রথম ও দ্বিতীয়
তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।তৃতীয় তাকবীরে উভয় হাত তাকবীরে তাহরীমার মতো
বেধে নেওয়া।এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ
করা।দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।প্রথম ও দ্বিতীয়
তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।তৃতীয় তাকবিরে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো
বেধে নেওয়া।এরপর রুকুর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাওয়া।সেজদা আদায় করে বৈঠকে
বসে;তাশাহহুদ,দরুদ শরীফ,দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
সালাম ফেরানোর পরে তাকবির পড়া-'আল্লাহু আকবর ,আল্লাহু আকবর,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াল্লাহু আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ '
ঈদের নামাজের দোয়া
অবশ্যই আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া চাওয়ার উত্তম স্থান হলো নামাজ।মুসলিম জাতীর জন্য
ঈদের নামাজ টা খুব গুরুত্বপূর্ণ নামাজ।ঈদের নামাজ সবার জন্যই ওয়াজিব।ঈদের নামাজ
সবাইকেই আদায় করতে হয়।ঈদ মানে অন এক আনন্দ আর উল্লাস।এতো আনন্দ আর উল্লাসের
মধ্যেও আল্লাহ পাক তার বান্দাদের জন্য সওয়াব রেখেছেন।এতো আনন্দের মধ্যেও যাতে তার
বান্দারা তার নিকট হাত তুলতে পারেন,সেই ব্যবস্থা আল্লাহ পাক করে রেখেছেন।ঈদের
নামাজের নির্দ্দিষ্ট কোন দোয়া নাই।যার মনে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ পাকের নিকত হাত
তুলে সব কিছু চাওয়া।সকল কিছুর মালিক এক আল্লাহ পাক।তিনি একমাত্র দোয়া কবুলের
মালিক।তিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা।
ঈদের নামাজ কয় রাকাত
আল্লাহ পাক কত সুন্দর নিয়ম-কানুন করে দিছেন তার প্রিয় আশরাফুল মাখলুকাতের
জন্য।দিনে কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে,প্রতি ওয়াক্তে কত রাকাত করে নামাজ পড়তে
হবে।সুন্নাত নামাজ,ফরজ নামাজ,নফল নামাজ এই নামাজ গুলোর মধ্যে কোন নামাজ টা আগে
পড়তে হবে,কোন নামাজের কেমন ফজিলত।এতো সুন্দর নিয়ম-কানুন অন্য কোন ধর্মে নাই।ইসলাম
ধর্ম শান্তির ধর্ম এই ধর্মে সব কিছুরই একটা সুশৃঙ্খল নিয়ম রয়েছে।ঠিক তেমনই ঈদের
নামাজ ও কয় রাকাত পড়তে হবে,তা ঠিক করে দেওয়া আছে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম কানুন থেকে আমরা জানতে পারি যে,ঈদের নামাজ হলো দুই
রাকাত।ছয় তাকবীর বিশিষ্ট এই দুই রাকাত নামাজ ঈদের দিন সকাল বেলা আল্লাহর নামে
আদায় করতে হয়।এই নামাজের অফুরন্ত ফযীলত রয়েছে।ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে সবাই
একসাথে মিলিত হতে পারে।ধনী গরীবের মধ্যে ভেদাভেদ ধুর হয়ে যায়।ঈদের নামাজ শেষে একে
ওপরের সাথে কুলাকুলি করে।এতে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি পাওয়া যায়।
ঈদের নামাজ কি ফরয
ঈদের নামাজ নিয়ে অনেকের অনেক রকম মতভেদ রয়েছে।হানাফী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ
ওয়াজিব,মালিকি ও শায়েফী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং
হাম্ববলী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ ঈদের নামাজ ফরজ।কোন কোন পন্ডিতের মতে ঈদের
নামাজ ফরজে আইন।আবার কোন কোন পন্ডিতের মতে ঈদের নামাজ ফরজে কাফেয়া।কারো কারো মতে
ঈদের নামাজ নফল।তবে ঈদের নামাজ মুসলিম সমাজে ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই উৎযাপন করা হয়ে
থাকে।
ঈদের নামাজ জামায়াতের সাথে পালন করা হয়।ঈদের নামাজ খোলা জায়গায় বা ঈদ্গাহ মাঠে
আদায় করতে হয়।তবে যদি এরকম স্থানের অভাব হয়,তাহলে মসজিদে আদায় করা যায়।যোহরের
নামাজের আগে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।ঈদুল ফিতরের নামাজ দেরি করে এবং ঈদুল আযহার
নামাজ একটু তারাতারি আদায় করতে হয়।ঈদুল ফিতরে ফিতরা প্রদান করতে হয়,এই জন্য একটু
সময় পেলে ভালো হয়।আর ঈদুল আযহার দিন তারাতারি নামাজ শেষ করে আল্লাহর নামে পশু
কুরবানি করতে হয়।এই জন্যই তারাতারি নামাজ আদায় করতে হয়।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
ঈদ মানে আনন্দ,ঈদ মানে খুশি।ঈদুল ফিতর কে আমরা রোজার ঈদ ও বলে থাকি।কারণ এক মাস
রোজা রাখার পরে আমরা ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারি। প্রত্যেক নামাজেরই
নিয়ম-কানুন রয়েছে। তেমনি ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম-কানুন মেনেই নামাজ আদায়
করতে হয়। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুশৃঙ্খল ভাবে নামাজ আদায় করতে হবে।
আপনি যদি ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এই আটিকেল পড়ার পড়ে আপনার আশে পাশে
আত্বীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ারের মাধ্যমে এই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জানোর
ব্যাস্থা করে দিন।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url