শহরের জীবন যাপন
"শহর" শব্দটা শুনলেই কেমন যেনো একটা স্মার্ট, ফ্যাশন, বড় বড় গাড়ী, বড় বড় বিল্ডিং
আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। শহরের জীবন যাপন টা সত্যিই অনেক স্মার্ট জীবন যাপন। শহরের
জীবন যাপন মানেই অনেক ব্যস্ততা সময় কম,কাজ বেশি। শহর টা না,অনেক শখের হয় অনেকের
কাছে ঠিক যেনো আকাশের চাঁদের মতো ধরাই যায় না,অনেকই যারা বিশেষ করে গ্রামে বসবাস
করে,তাদের কাছে শহর হলো স্বপ্নের মতো।তারা ইচ্ছে করলেই শহরে আসতে পারে না তাই
তাদের কাছে শহর টা হলো স্বপ্নের মতোই।
প্রত্যেকটা জিনিষের দুইটা দিক থাকে,সুবিধা ও অসুবিধা। আজকে আমরা আলোচনা
করব শহরের জীবন যাপন কেমন এবং শহরের জীবন যাপন এর সুবিধা ও অসুবিধা
নিয়ে।
সূচিপত্রঃশহরের জীবন যাপন
- ভূমিকা
- শহরের জীবন যাপন এর সুবিধা সমূহ
- শহরের জীবন যাপন এর অসুবিধা সমূহ
- শহরের জীবন যাপন এর শেষ মন্তব্য
শহরের জীবন যাপন এর সুবিধা সমূহ
শহরের জীপন যাপন এ অনেক সুবিধা,কারণ আপনি যদি জীবনে ভালো কিছু করতে চান তাহলে
আপনাকে শহরে আসতেই হবে,যেমনঃপড়াশোনা,ব্যবসা,চিকিৎসা,কর্মসংস্থান সব কিছুই
শহরে।প্রথমে পড়াশোনার কথাই বলি,গ্রামে আমরা খুব বেশি হলে এস এস সি পর্যন্ত
পড়াশোনা টা করতে পারি।কিন্তু তারপর যদি উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করতে চান তাহলে আপনাকে
অবশ্যই শহরমুখী হতেই হবে।কারণ,বড় বড় ভার্সিটি,কলেজ সব কিছুই তো শহরেই।তাই আপনি
যদি ভালো করে পড়াশোনা করে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করতে চান তাহলে শহরই হলো আপনার জন্য
বেস্ট অপশন।
আপনি যদি জীবনে কিছু একটা হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আগে শিক্ষিত হতে হবে
,জীবনে যাই কিছু করেন না কেনো শিক্ষা প্রয়োজন পড়বেই।আর উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে
হলে অবশ্যই শহরমুখী হতে হবে।তেমনই ব্যবসার ক্ষেত্রে বলতে গেলে বলা যায় যে,আপনি
যদি কোন ব্যবসা করতে চান তাহলে শহরে আসতে হবেই।আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই ব্যবসা
করেন না কেনো ব্যবসার জিনিষপত্র কিনতে আপনাকে কিন্তু শহরেই আসতে হবে।শহরের জীবন
যাপন যেমনই হোক না কেনো,আপনি যদি আপনার জীবনে উন্নতি আনতে চান তাহলে শহরেই আসতে
হবে।তেমনই চিকিৎসা নিয়ে বলতে গেলেও বলা যায় যে শহরে ছাড়া আপনি ভালো ডাক্তার বা
ক্লিনিক গ্রামে পাবেন না।
আপনি যদি অসুস্থ হোন তাহলে ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য বা ভালো চিকিৎসা করার জন্য
আপনাকে শহরে আসতেই হবে।শহরের জীপন যাপন অনেকটাই আধুনিক।শহরে অনেক উন্নতমানের
চিকিৎসা দেওয়া হয়। আপনি যদি গ্রামে বসবাস করেন আর যদি হঠাৎ করেই আপনার
পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে শহরে নিয়ে আসতে আসতে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ
হয়ে যাবে,আবার অনেক সময় দেখা যায় যে গ্রামের রাস্তা,ঘাট গুলোর অনেক বাজে অবস্থা
হয়ে থাকে তখন অনেক সময় দেখা যায় যে রোগী নিয়ে শহরে বা ডাক্তারের কাছে পৌছাই হয় না
হয়তো রাস্তার মধ্যেই কোনো এক্সিডেন্ট ঘটে যায়।
আর যদি আপনার বসবাস যদি শহরে হয় তাহলে তো কোনো কথাই নাই,শহরে না আছে কোনো গাড়ির
সমস্যা, না আছে কোনো রাস্তা ঘাটের সমস্যা।অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথেই ভালো ডাক্তার
বা ভালো ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া যায়।আবার যদি কর্মসংস্থানের কথা বলা হয় তাহলে বলতে
হবে যতো বড় বড় কল,কারখানা,অফিস,আদালত সব কিছুই শহরে।তাই ভালো কোনো কাজ করতে হলেও
আপনাকে শহরেই আসতে হবে।জীবনে ভালোভাবে বাঁচতে হলে পরিবার,পরিজন নিয়ে সুখে থাকতে
হলে আপনার প্রয়োজন ভালো একটা কর্মের।ভালো একটা কাজ,ভালো উপার্জন না থাকলে আপনি
সুখে জীবন কাটাতে পারবেন না।ভালো একটা কর্মের জন্য হলেও আপনাকে শহরে আসতে হবেই।
শহরের জীবন যাপন অনেক বৈচিত্রময় এখানে সব মানুষই শুধু কাজকে ভালোবাসে সব সময় কাজ
নিয়েই ব্যস্ত থাকে।জীবন কে কিভাবে রঙ্গিনভাবে সাজাতে হয় সেটা একমাত্র শহরে বসবাস
করলেই বুঝবেন,জীবন যে এতো রঙ্গিন শহরে না আসলে বুঝবেন না।জীবনে চলার পথে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,ব্যবসা-বাণিজ্য,চিকিৎসাক্ষেত্র,কর্মসংস্থান এসবের একটাও ছাড়া
আপনি চলতে পারবেন না।জীবনে বাঁচতে হলে এসবের প্রত্যেকটার প্রয়োজন অপরিসীম।কাজেই
আপনি যেখানেই থাকেন না কেনো আপনাকে সুস্থ,স্বাভাবিক ভাবে বাচতে হলে অবশ্যই এই
প্রয়োজনীয় জিনিষগুলোর ব্যবস্থা আপনার হাতের নিকটেই থাকতে হবে।আর এ জন্য অবশ্যই
আপনাকে শহরে বসবাস করতেই হবে।
শহরের জীবন যাপন অনেক উন্নত জীবন যাপন।শহরে মানুষ আসে জীবন জীবিকার উন্নয়ন ঘটানোর
জন্য।ভালো কিছু করার জন্য।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।লেখাপড়া শিখে গ্রামে বসে
থেকে তো আর জীবনের মান উন্নয়ন করা যাবে না।অবশ্যই তার জন্য শহরে আসতে হবে।শহরে
টাকা ইনকাম করার অনেক উপায় আছে,কারণ বড় বড় অফিস,আদালত, কলকারখানা সব কিছুই
শহরে।তাই শহরের জীবন যাপন উন্নত মানের জীবন যাপন।
শহরের জীবন যাপন এর অসুবিধা সমূহ
সব কিছুরই দুইটা দিক থাকবেই তেমনই শহরের জীবন যাপন এর ও সুবিধার পাশাপাশি কিছু
অসুবিধাও আছে।শহরের জীবন যাপন মানে হলো ব্যস্ত শহর গাড়ি,জ্যামজট,গাড়ির হর্ণ,শব্দ
দূষণ এ যেনো এক কলকারখানার শহর।এখানে সবাই ব্যস্ত কেউ কারো দিকে তাকনোর সময়
নাই।এখানে নাই সবুজ,শ্যামল মাঠ,পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ,সবুজ
গাছপালা,ধানক্ষেত,গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া আকাঁবাকাঁ নদীটাও নাই।গ্রামে
যেমন প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়,শহরে কিন্তু তা পারা যায় না।
শহরের বাতাসে মিশে আছে কলকারখানার ধোয়া,কেমন যেনো একটা ভারি হয়ে থাকে শহরের
পরিবেশ টা।গ্রামের মানুষগুলো হলো সহজ,শরল,ঠিক যেনো গ্রামের পরিবেশের মতোই।এখানে
এক জনের বিপদে সবাই এগিয়ে আসে।সবাই এক সাথে মিলেমিশে চলে।আর শহরের জীবন টা বন্দি
জীবন সেই সকালে অফিসে যাও,কাজ করো সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রাতে খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে
পড়ো,এভাবেই প্রত্যেকটা দিন শুরু হয় শহরের মানুষের।কিছুই করার নাই কারণ এটাই শহরের
জীবন যাপন।এরকমই হয় শহরের জীবন যাপন। শহরের মানুষের জীবন ঘড়ির কাটার সাথে তাল
মিলিয়ে চলে।
আর গ্রামের মানুষ মুক্ত জীবন যাপন করেন,তাদের থাকে না কোনো চাকরী হারানোর
ভয়।গ্রামের মানুষ চলে তাদের নিয়মে।গ্রামের মানুষ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আযানের
শব্দে আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে তাদের ঘুম ভাঙ্গে।সকালের শীতল করা বাতাস যেনো
অন্য রকম একটা ভালো লাগা।তারপর শুরু হয় তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম।পুরুষেরা চলে যায়
মাঠে আর মেয়েরা সামলাই ঘরের কাজকর্ম।গ্রামের জীবন যাপন হলো প্রশান্তিময় জীবন
যাপন।প্রকৃতির যে একটা সুন্দর রুপ আছে এটা কেবল মাত্র গ্রামেই বোঝা যায়।শহরে
প্রকৃতি বলে কিছুই থাকে না,থাকে শুধু কোলাহল।
শহরের জীবন যাপন এ যেমন সুবিধা আছে,তেমনই অসুবিধাও আছে।শহরে আপনি যে কোনো খাবার
বা সব্জি,ফলমূল যাই খান না কেনো সব কিছুইতেই ভেজাল রয়েছে।কোনো কিছুই ফ্রেস পাওয়া
যায় না।সব কিছুতেই ফরমালিন দিয়ে সতেজ রাখে।যেগুলো খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।আর
গ্রামে সেরকম নয়।গ্রামে একদম তরতাজা সবজি ক্ষেত থেকে উঠায় নিয়ে এসে খায় গ্রামের
মানুষ রা।নদীর তাজা মাছ,ক্ষেতে তাজা সবজি সে এক অন্যরকম ভালো লাগা।গ্রাম মানেই
সতেজতায় ভরপুর।
শহরে এসকল সুবিধা পাওয়া যায় না।আপনি যদি শহরে কোনো একটা ভালো অফিসে চাকরি করেন
তাহলে আপনার নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।রাত,দিন পরিশ্রম করতে হবে,অফিসের
নিয়মের বাহিরে যাওয়া চলবে না।কোনো নিয়ম না মানলে আপনার চাকরি থাকবে না বা অনেক
কথা শোনাবে।আর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ তাদের নিজেদের জমিতে চাষ করেন,তারা তাদের
ইচ্ছেমতো কাজ করে,যদি খারাপ লাগে তাহলে কিছুক্ষন পরেও যেতে পারে।এসকল সুবিধা
শহরের চাকুরিজীবিরা পান না।
শহরের জীবন যাপন এর শেষ মন্তব্য
বাংলায় কবি রবীন্দ্রনাথ এর একটি কবিতা রয়েছে,
“ নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;যাহা কিছু সুখ সকলি
ওপারে।”
যারা গ্রামে বসবাস করে তারা মনে করে যে শহরেই হয়তো বেশি সুখ,শান্তি।আবার যারা
শহরে বসবাস করে তারা মনে করে গ্রামেই শান্তি।আসলে সব কিছুরই সুবিধা,অসুবিধা
আছে।যে যে পরিবেশে সস্তি অনুভব করে।শহরে যেমন অনেক সুবিধা আছে,তেমনই অসুবিধাও
আছে।আবার গ্রামে যেরকম সুবিধা আছে,ঠিক তেমনই অসুবিধাও আছে।
কোনো মানুষই কখনো সব দিক দিয়ে সুখী হতে পারে না।জীবনে সমস্যা থাকবেই এবং তার
সমাধান ও আছে।যে যেখানেই বসবাস করুক সুবিধা,অসুবিধা,ভালো,খারাপ সব কিছু মিলিয়েই
জীবন।জীবনে শুধু সুখ,শান্তি আর ভালো কিছু থাকবে এরকম জীবন হয় না।ভালো,খারাপ সব
কিছুই থাকবে।যেমন শহরের জীবনে অসুবিধা থাকবেই যেহেতু সেখানে সুবিধা আছে।আবার
গ্রামের জীবনেও অসুবিধা থাকবেই,যেহেতু সেখানে সুবিধা আছে,কারণ ভালো কখনোই অনুভব
করা যেতো না যদি খারাপ টা না থাকতো।তাই পরিশেষে বলা যায় যে,অনেকটা সুবিধা,কিছুটা
অসুবিধা এই নিয়েই শহরের জীবন যাপন।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url