ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

আমরা আজ ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করব। এই ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার মধ্যে অন্তরভুক্ত। আমর বেসিক ইলেকট্রিসিটি বইয়ের মধ্যে এই ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি সর্ম্পকে জানতে পারব। আমরা এই ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি অধ্যায়ের মধ্যে ইলেকটিসিটি  বা বিদৃৎ কী? এবং কিভাবে কাজ করে এবং বিদুৎ এর উৎপত্তি এবং কাজ ইত্যাদি বিশেষ ভাবে আলোচনা করা রয়েছে। আমরা এই ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি যা বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং পরিক্ষায় আসে এবং এই প্রশ্ন গুলোর মাধ্যেমে ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি ভালো একটা ধারণা লাভ করা যায় । তাহলে চলুন আমরা ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি কিছু প্রশ্ন ও উত্তর জেনে নিই। 

সূচীপত্র : ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

অধ্যায় এক ঃ  ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি (Electricity and It's Nature) 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ।।ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১। পরমাণুর স্থায়ী মূল কণিকা গুলো কি কি?  

২। বিদ্যুৎ কি?

৩। বিভব পার্থক্য বলতে কি বুঝায়?

৪। কুলম্ব কি?

৫। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে কি কি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়?

৬। অ্যাটম বা পরমাণু বলতে কি বুঝায়?

৭। পরমাণুর ইলেকট্রন ও প্রোটন কোন চার্জ বহন করে?

৮। বৈদ্যুতিক চার্জ কাকে বলে ? এর একক লেখ।

৯। পরমাণুর ইলেকট্রন ও প্রোটন কি ধরনের চার্জ বহন করে?

১০। পারমাণবিক সংখ্যা কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।।ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১। কোন পরিবাহীর মাঝ বাপি দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কি কি প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়?

২। বৈদ্যুতিক চার্জ কারেন্ট ও ভোল্টেজ এর প্রতীক সহ লেখ।

৩। কপার পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

৪। অ্যালুমিনিয়াম পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

৫। জার্মেনিয়াম এর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

রচনামূলক প্রশ্ন।।ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১।  তামার অ্যাটমের  গঠণপ্রণালী বর্ণনা করো।

২। কারেন্ট ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স বলতে কি বুঝায় এদের প্রতীক ও ব্যবহারিক একক ও পরিমাপক যন্ত্রের নাম লেখ।                                                              

ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি এর উত্তর সমূহ  

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।। ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১। পরমাণুর স্থায়ী মূল কণিকা গুলো কি কি?

উত্তরঃ পরমাণুর মৌলিক কণিকাগুলো হলো ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে।

২। বিদ্যুৎ কি?

উত্তরঃ বিদ্যুৎ এমন এক অদৃশ্য বল বা শক্তি, যা আলো, তাপ, শব্দ, গতি উৎপন্ন করে এবং অসংখ্য বাস্তব কাজ সমাধা করে।

৩। বিভব পার্থক্য বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ দুইটি  চার্জিত বস্তুর বিভবের মধ্যে যে পার্থক্য, তাকে বিভব পার্থক্য বলে।

৪। কুলম্ব কি?

উত্তরঃ যদি কোনো পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদ দিয়ে এক সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয়, তাবে উক্ত সময়ের জন্য যে পরিমান চার্জ প্রবাহিত হয়, তাকে এক কুলম্ব বলে।

                ১ কুলম্ব = ৬২৮ × ১০১৬  ইলেকট্রনের চার্জ।

৫। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে কি কি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়?

উত্তরঃ বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহীতে প্রতিক্রিয়া নিম্নরূপ:

  1. তাপীয় ফল
  2. চৌম্বকীয় ফল
  3. রাসায়নিক ফল
  4. শরীরবৃত্তীয় ফল

৬। অ্যাটম বা পরমাণু বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ অ্যাটম বা পরমাণু , কোন মৌলিক পদার্থের এমন একটি ক্ষুদ্রতম অংশ, যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং যার স্বাধীন বা বাস্তব কোনো অবস্থান নেই।

৭। পরমাণুর ইলেকট্রন ও প্রোটন কোন চার্জ বহন করে?

উত্তরঃ পরমাণুর প্রোটন পজিটিভ চার্জ ও ইলেকট্রন নেগেটিভ চার্জ বহন করে  ।

৮। বৈদ্যুতিক চার্জ কাকে বলে ? এর একক লেখ।

উত্তরঃ কোনো  বৈদ্যুতিক বর্তনীর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ কারেন্ট বা ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়, তাকে বৈদ্যতিক চার্জ বলে। ইহার একক কুলম্ব । ইহাকে  Q  দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৯। পরমাণুর ইলেকট্রন ও প্রোটন কি ধরনের চার্জ বহন করে?

উত্তরঃ  ইলেকট্রনের চার্জ  ঋণাত্মক (- ve) 

                প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক  (+ve) 

১০। পারমাণবিক সংখ্যা কাকে বলে?

উত্তরঃ কোন পদার্থের পরমাণুর ইলেকট্রনের মোট সংখ্যাকে  পারমাণবিক সংখ্যা বলে ।

 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।। ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১। কোন পরিবাহীর মাঝ বাপি দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কি কি প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়?

উত্তরঃ বিদ্যুৎ প্রোবাহের ফলে কী প্রতিক্রীয়া দেখা যায় ,নিম্নে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরন দেয়া হলোঃ

  1. তাপীয় ফল ঃ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন পরিবাহীটি উত্তপ্ত হয়। ফলে বৈদ্যুতিক শক্তির অপচয় ঘটে । এটা এভাবে বলা যায় যে , বৈদ্যুতিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।এটাই বিদ্যুতের তাপীয় ফল।
  2. চুম্বকীয় ফল ঃ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুত প্রবাহিত হলে পরিবাহীর চারদিকে চৌম্বক-ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় ,অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শক্তি চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । উদাহরণ ঃ এ তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক ঘন্টা , জেনারেটর, মোটর ,ইত্যাদি চালানো হয়।
  3. রাসায়নিক ফল ঃ যদি কোন যৌগিক পদার্থের দ্রবণে বিদ্যুত প্রবাহিত করানো হয় ,তবে উক্ত দ্রবণটি বিশ্লিষ্ট হয়, এ বিশ্লেষণকে  বৈদ্যুতিক বিশ্লেষণ বা Electrolysis বলে। অম্লমিশ্রিত পানিতে  বিদ্যুৎ প্রবাহিত করালে উক্ত পানি হাইড্রজেন এবং অক্সিজেন বিশ্লিষ্ট হয় । অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

২। বৈদ্যুতিক চার্জ কারেন্ট ও ভোল্টেজ এর প্রতীক সহ লেখ।

উত্তরঃ বৈদ্যুতিক চার্জের প্রতীক Q এবং একক কুলম্ব, কারেন্টের প্রতীক I  এবং একক অ্যাম্পিয়ার এবং ভোল্টেরজের প্রতীক V এবং একক ভোল্ট।

৩। কপার পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

উত্তরঃ নিম্নে কপার পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখানো হলোঃ


৪। অ্যালুমিনিয়াম পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

উত্তরঃ অ্যালুমিনিয়াম পরমাণুর গঠনেসব বহিঃস্থ স্তরে তিনটি ইলেকট্রন থাকে । নিম্নে অ্যালুমিনিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস দেখানো হলোঃ 

চিত্র ঃ 

৫। জার্মেনিয়াম এর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখাও।

 উত্তরঃ  জার্মেনিয়াম ইলেকট্রন বা পারমাণবিক সংখ্যা 32 এবং ওজন =72.61

     ইলেকট্রন বিন্যাস ঃ

১ম কক্ষপথে = 2×12=2

২য় কক্ষপথে =2×22=8

৩য় কক্ষপথে=2×32=18

৪র্থ বা সর্বশেষ কক্ষপথে=32-(2+8+18)= 4

চিত্র ঃ 

রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ।।ইলেকট্রিসিটি এবং এর প্রকৃতি

১। 'তামার' অ্যাটমের গঠনপ্রণালি বর্ণনা কর।

উত্তরঃ তামার পারমাণবিক ওজন এবং সংখ্যা যথাক্রমে ৬৪ এবং ২৯।

পারমাণবিক সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা = ইলেকট্রন সংখ্যা

তাহলে তামার প্রোটন সংখ্যা =২৯,

এবং ইলেকট্রন সংখ্যা = ২৯

চিত্রঃ               

আবার,

পারমাণবিক ওজন = প্রোটন সংখ্যা +নিউট্রন সংখ্যা ।

তাহলে তামার নিউট্রন সংখ্যা = 64-29=35।

সুতরাং, তামার অ্যাটমের নিউক্লিয়াস 29 টি প্রোটন এবং 35 টি নিউট্রোন দ্বারা গঠিত ।

এখন 29 টি ইলেকট্রন বিভিন্ন কক্ষপথে বিতরন করলে কোন কক্ষপথে কতটা ইলেকট্রন অবস্থান করে , তার হিসাব নিম্নরূপে নির্ণয় করতে হয় ঃ

১ম কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা    =2n2 = 2×12=2

২য় কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা   =2n2 = 2×22=8

৩য় কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা    ==2n2 = 2×32=18

যেহেতু ইলেকট্রনের মোট সংখ্যা = 29,

সেহেতু ৪র্থ বা সর্বশেষ কক্ষপথে  ইলেকট্রন সংখ্যা 

                         =29-(2+8+18)

                        =29-28=1

২. কারেন্ট, ভোল্টেজ ও রেজিস্ট্যান্স বলতে কী বুঝায়? এদের প্রতীক ও ব্যবহারিক একক ও পরিমাপক যন্ত্রের নাম লেখ।

উত্তর ঃ কারেন্ট (Current) ঃ

পদার্থের অ্যাটমের মুক্ত ইলেকট্রনগুলো বা ঋণাত্মক বিদ্যুৎ কণিকা বা চার্জসমূহ প্রতিনিয়তই অনিয়মিতভাবে ঘোরাফেরা করে। যদি কোন শক্তির সাহায্যে (যথাঃ আলো,চাপ,তাপ,আবেশ)এদেরকে উত্তেজিত করে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে প্রবাহিত করানো যায়,তবে পদার্থের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহের  সৃষ্টি হয় । সুতরাং

পদার্থের (পরিবাহি) মধ্যেকার মুক্ত ইলেকট্রনসমূহ একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকেই কারেন্ট বলে। কারেন্টের প্রতীক I.

ভোল্টেজ (Voltage) ঃ 

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় , বৈদ্যুতিক চাপকেই ভোল্টেজ বলে ।

অন্যভাবে বলা যায় যে, পরিবাহীর পরমাণুগুলোর ঋণাত্মক কণিকা বা ইলেকট্রনসমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন,সে বল বা চাপকে বিদ্যুচ্চালক বল বা ভোল্টেজ বলে। এর প্রতীক V.

 বিদ্যুৎ বিভব (Electric Potential) ঃ

যখন কোন বস্তুকে চার্জ করা করা হয় , তখন কিছু কাজ সম্পাদিত হয় । এ সম্পাদিত কার্য উক্ত বস্তুতে স্থিতিশক্তি(Potential Energy)  হিসেবে সঞ্চিত থাকে । আকর্ষণ বা বিকর্ষণের মাধ্যমে কার্যসম্পাদন করার সামর্থ্য উক্ত চার্জিত বস্তুর থাকে।

চার্জিত বস্তুর সামর্থ্যকে বিদ্যুৎ বিভব বা Electric Potential বলে ।

একটি চার্জিত বস্তুর কাজ করার সামর্থ্য যত বেশি হবে, এর বিদ্যুৎ বিভব তত বেশি হবে।

বিভব পার্থক্য (Potential difference) ঃ

বিদ্যুচ্চালক বল , কাজ হিসেবে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক বিদ্যুৎকে আলাদা করে ,এদের মধ্যে বৈদ্যুতিক স্থিতিশক্তির উন্মেষ ঘটে । সে কারণে এদের মধ্যে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয় এবং এ শেষাবধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুচ্চালক বল।

অন্যভাবে বলা যায় ,  দুইটি চার্জিত বস্তুর বিভবের মধ্যে যে পার্থক্য , তাকেই বিভব পার্থক্য বলে।

বিভব পার্থক্য ছাড়া বিদ্যুৎ এক স্থান হতে অন্য স্থানে প্রবাহিত হতে পারে না। উচ্চ বিভব হতে নিম্ন বিভবের দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।

রেজিস্ট্যান্স (Resistance) ঃ 

পরিবাহীর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় পরিবাহী পদার্থের যে বৈশিষ্ট্য বা ধর্মের কারণে এটা বাধাগ্রস্থ হয় , উক্ত বৈশিষ্ট্য বা ধর্মকেই রেজিস্ট্যান্স বা রধ বলে।

এর প্রতীক R  বা  r .

অন্যভাবে বলা যায় যে, যখন কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে ভোল্টেজের কারণে কারেন্ট তথা ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়, তখন অসংখ্য ইলেকট্রন একসাথে ছুটাছুটি আরম্ভ করে।তন্মধ্যে অনেকগুলো পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ,ফলে অন্যান্য ইলেকট্রনের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কারেন্ট প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে ।পরিবাহী পদার্থের এ বাধাকে  রোধ বা রেজিস্ট্যান্স বলে।

ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের রোধও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url