বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম

আমরা আজকে আলোচনা করব বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম গুলো নিয়ে। আমােদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একটি সংখ্যাকে ছোট ছোট আকারে ভাগ করে থাকি এবং ভাগ করার মাধ্যেমে সংখ্যাটির অবস্থান জানতে পারি। আসলে এই সংখ্যা ভাগ করার নিয়ম গুলোই হচ্ছে বিভাজ্যতা। বিভাজ্যতার না করলে আমরা কোনো সংখ্যার অবস্থান বুঝতে পারব না । এমনকি এই সংখ্যা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে বা কি বুঝা যায় তা নির্ণয় তরা সম্ভব নয়। তেই আমাদের বিভাজ্যতার প্রয়োজন। আমাদের এই লিখা পোস্টটি ভালো ভাবে পড়লে বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম গুলো সব জানা যাবে এবং কোন সংখ্যা কত দিয়ে ভাগ করা যাবে তা দ্রুত বুঝা যাবে। 

সূচীপত্র: বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম

বিভাজ্যতা কি?

বিভাজ্যতা : কোনো একটি সংখ্যাকে যদি অন্য যে কোনো একটি সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয় এবং ভাগ করার পরে সংখ্যাটি নিঃশেষে বিভাজ্য হয় তাহলে প্রথম সংখ্যাটি কে দ্বিতীয় সংখ্যার বিভাজ্য বলে। আর এই ভাগ করার নিয়মকেই বলা হয় বিভাজ্যতা।

বিভাজ্যতার নিয়ম

কোনো একটি সংখ্যাকে কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যাবে বা কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ হবে তা বিভাজ্যতা। বিভাজ্য করার জন্য অনেক নিয়ম বয়েছে। আমরা যদি সংখ্যা ভিত্তিক নিয়ম গুলো মনে রাখি তাহলে আমরা সহজেই বলতে পারব কোন সংখ্যাকে কত দ্বারা বিভাজ্য হবে। নিম্নের এই বিভাজ্যতার নিয়ম গুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে আমারা সহজেই মনে রাখতে পারব এবং যে কোনো প্রশ্নের সমাধান দিতে পারব।

১ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

পৃথিবীর সকল পূর্ণ সংখ্যা ১ দ্বারা বিভাজ্য। 

২ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

সকল জোড় সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ কোনো সংখ্যার শেষে যদি ২,৪,৬,৮ থাকে তাহলে সেই সংখ্যাটি ২ দ্বারা বিভাজ্য। 

আরো পড়ুন: গণিত নিয়ে ভয়- গণিতের ভয় দূর করার উপায় 

৩ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

নিয়ম -১ : কোনো সংখ্যা ৩ দ্বারা ভাগ হবে কিনা জানার জন্য ওই অংঙ্কগুলোর যোগফল যদি ৩ দ্বারা ভাগ হয় তাহলে সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ১২৩ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য কারণ ১+২+৩ = ৬ যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য।

যোগফল যদি খুব বড় অংঙ্কের হয় তাহলে এই যোগফল সূত্র আবার ফেলে দেখতে হবে তা ৩ দিয়ে ভাগ হবে কিনা  এই ভাবে বার বার করতে হবে। তাহলেই বুঝা যাবে সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। 

নিয়ম-২ : যদি কোনো সংখ্যা বড় হয় বা কোনো সংখ্যায় ২, ৫, ৮ এবং ১, ৪, ৭ সংখ্যা থাকে তাহলে এই সংখ্যার পরিমাণের বিয়োগফল যদি ৩ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য । যেমন : ২৮৫০৪১৭ এখানে ২, ৫, ৮ এর পরিমাণ ৩ টি এবং ১, ৪,৭ এর পরিমাণ ৩টি । তাহলে ৩ - ৩ = ০ । অর্থাৎ ০ যেহেতু ৩ দ্বারা বিভাজ্য তাই সংখ্যাটি ৩ দ্বার বিভাজ্য।

৪ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

কোনো সংখ্যার শেষে দুই অংঙ্ক নিয়ে যে সংখ্যা হয় তা যদি ৪ দ্বারা ভাগ হয় তাহলে সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য । আবার কোনো সংখ্যার শেষে ০০ থাকলে সেই সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ১০০,২০০ ইত্যাদি সংখ্যা যা ৪ দ্বার বিভাজ্য আবার ১৫২৪ সংখ্যার শেষে ২৪ সংখ্যাটি ৪ দ্বার বিভাজ্য তাই সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য । 

৪ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য

কোনো সংখ্যার দশক স্থানীয় অংঙ্ক জোড় হলে একক স্থানীয় অংঙ্ক ০, ৪, ৮ হবে।

কোনো সংখ্যার দশক স্থানীয় অংঙ্ক বিজোড় হলে একক স্থানীয় অংঙ্ক ২,৬ হবে। 

কোনো সংখ্যার দশক স্থানীয় অংঙ্কের দ্বিগুণের সাথে একক স্থানীয় অংঙ্ক যোগ করলে তা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে। 

৫ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

কোনো সংখ্যার শেষে যদি ০  এবং ৫ থাকে তাহলে সংখ্যাটি ৫ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন : ২১৫,১০৫.৭১০ ইত্যাদি যা  ৫ দ্বারা বিভাজ্য। 

৬ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

যে সকল সংখ্যা গুলো ২ এবং ৩ দ্বারা বিভাজ্য সে সকল সংখ্যা ৬ দ্বারাই বিভাজ্য। আবার বলা যায়, যে সব জোড় সংখ্যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য সেই সংখ্যা গুলো ৬ দ্বারা বিভাজ্য । 

আরো পড়ুন: অঙ্ক কাকে বলে-অঙ্ক কত প্রকার ও কী কী?

৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

৭ দ্বারা বিভজ্যতার বেশ কিছু মজার সূত্র রয়েছে । কিছু সূত্র ছোট সংখ্যার ক্ষেত্রে আবার কিছু সূত্র বড় অংঙ্কের ক্ষেত্রে। নিম্নে আমরা বিভাজ্যতার নিয়ম গুলো দেখি।

নিয়ম-১ : কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংঙ্কের সাথে ২ গুণ করে বাকি সংখ্যা থেকে বিয়োগ করে বিয়োগফল কে যদি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ৫৩২ এর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ৫৩ - (২×২=৪) = ৫৩ - ৪ = ৪৯ যা ৭দ্বারা বিভাজ্য । অতএব সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য । 

বড় সংখ্যার ক্ষেত্রে এই নিয়মটি বার বার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। যেমন: 

২৫৮৭২ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে,

২৫৮৭ - (২×২=৪) = ২৫৮৭ -  ৪ = ২৫৮৩

২৫৮ - (৩×২=৬) = ২৫৮ - ৬ = ২৫২

২৫ - (২×২=৪) = ২৫ - ৪ = ২১ যা ৭ দ্বারা বিভাজন্য । অতএব ২৫৮৭২ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য।

নিয়ম-২:  কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় সংখ্যাকে ৫ দ্বারা গুল করে, গুণফলকে বাকি সংখ্যার সাথে যোগ করলে যোগফল যদি ৭ দ্বারা ভাগ করা যায়। তাহলে সংখ্যাটি  ৭ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ২৯৪ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, 

২৯ + (৪×৫=২০) = ২৯ +২০ =৪৯ যা ৭ দ্বারা বিভাজ্য। 

নিয়ম -৩ : কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় সংখ্যাকে ৯ দ্বারা গুল করে, গুণফলকে বাকি সংখ্যার সাথে বিয়োগ করলে বিয়োগফল যদি ৭ দ্বারা ভাগ করা যায়। তাহলে সংখ্যাটি  ৭ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ৮৫৪ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, 

৮৫ - (৪×৯=৩৬) = ৮৫ - ৩৬ = ৪৯ যা ৭ দ্বারা বিভাজ্য। 

নিময়-৪: কোনো সংখ্যা যদি খুব বড় হয় তখন আমরা সহজে বুঝতে পারি না এই সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য কিনা তাই আমরা এই পদ্ধতির মাধ্যেমে বের করব। বড় সংখ্যাটিকে ডান দিকে থেকে তিনটি অংঙ্ক করে বিভক্ত করব এবং প্রর্যায়ক্রমে যোগ ও বিয়োগ করতে থাকব।এই যোগ বিয়োগের ফলাফল ৭ দ্বারা বিভাজ্য হলে সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন, ৫০৮১২৭৪৩৮ এই সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখতে পাই, 

ডান দিক থেকে ১ম তিন অংঙ্কের সংখ্যা = (+) ৪৩৮

ডান দিক থেকে ২য় তিন অংঙ্কের সংখ্যা = (-) ১২৭

ডান দিক থেকে ৩য় তিন অংঙ্কের সংখ্যা = (+)৫০৮

তাহলে যোগ ও বিয়োগ করলে দেখা যায়, ৪৩৮ - ১২৭ + ৫০৮ = ৮১৯ যা ৭ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব ৫০৮১২৭৪৩৮ সংখ্যাটি ৭ দ্বার বিভাজ্য। 

 ৮ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম 

কোনো সংখ্যাকে ৮ দ্বারা বিভজ্য করতে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। নিম্নে নিয়ম গুলো দেওয়া হল:

নিয়ম-১ : কোনো সংখ্যার শেষের তিন অংঙ্ক দিয়ে যে সংখ্যা হয় তা যদি ৮ দ্বারা ভাগ করা যায় তাহলে সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন : ২৮৪৮ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংখ্যাটির শেষ অংঙ্কের সংখ্যা ৮৪৮ যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য। 

নিময়-২: কোনো সংখ্যার শেষে যদি তিনটি শূন্য থাকে তাহলে সেই সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভজ্য হবে। যেমন: ১০০০, ২০০০ ইত্যাদি। 

নিয়ম-৩: কোনো সংখ্যার শতক স্থানীয় অংঙ্ক যদি জোড় হয় এবং একক ও দশক স্থানীয় সংখ্যা মিলে যে সংখ্যা হয় সেই সংখ্যাটি যদি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে পুরো সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন: ২৮৪৮ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই সংখ্যাটির শতক স্থানীয় অংঙ্ক ৮ যা একটি জোড় সংখ্যা এবং একক ও দশক স্থানীয় অংঙ্ক মিলে সংখ্যা হয় ৪৮ যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য।

নিয়ম-৪:  কোনো সংখ্যার শতক স্থানীয় অংঙ্ক যদি বিজোড় হয় এবং একক ও দশক স্থানীয় সংখ্যা মিলে যে সংখ্যা হয় তার সাথে ৪ যোগ করলে যে সংখ্যা হবে সেই সংখ্যাটি যদি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে পুরো সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন: ৫০৪ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই সংখ্যাটির শতক স্থানীয় অংঙ্ক ৫ যা একটি বিজোড় সংখ্যা এবং একক ও দশক স্থানীয় অংঙ্ক মিলে সংখ্যা হয় ০৪। এখন ০৪ + ৪ যোগ করলে ৮ হয় যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য।

৯ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম

কোনো সংখ্যার অংঙ্ক গুলো যোগ করলে যোগফল যদি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে সংখ্যাটি  ৯ দ্বারা  বিভাজ্য।যেমন: ২৬১৭২ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২+৬+১+৭+২=১৮ যা ৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। তাহলে সংখ্যাটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য। 

তবে সংখ্যাটি যদি বড় সংখ্যার হয় তাহলে এই পক্রিয়া কয়েক বার করতে হবে। প্রথমে যোগ করার পরে যদি দেখা যায় সংখ্যাটি বড় হচ্ছে তাহলে আবার যোগফলের সংখ্যাটি পুনরায় যোগ করতে হবে এবং ভাগ করে দেখতে হবে। যদি দেখা যায় শেষ যোগফল ৯ দ্বারা বিভাজ্য তাহলে পুরো সংখ্যাটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য। 

১০ দ্বারা বিভাজ্যার নিয়ম

কোনো সংখ্যার শেষে যদি ০ থাকে তাহলে সংখ্যাটি ১০ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ১০, ৩০ ইত্যাদি।

বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম এর শেষ কথা

উপরক্ত আলোচনা বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম নিয়ে। আমরা যদি এই বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম গুলো মনে রাখি তাহলে একটি সংখ্যা যত বড়ই হোক না কেন আমরা সহজেই উত্তর দিতে পারব এই সংখ্যাটি কোন সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হবে। এছাড়া অনেক একাডেমিক েএবং চাকরির পরিক্ষা বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম এর মাধ্যেমে এই সকল প্রশ্নের সমাধান করা অনেক সহজ হবে। আপনার পরিচিত ছোট বড় ভাই বোনদের মাঝে বিভাজ্যতা কি? বিভাজ্যতার নিয়ম েগুলো শেয়ার করবেন যাতে উনারা উপকৃত হয় ।  

­



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url