পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে - কি খেলে পায়খানা হবে

 

পায়খানা হচ্ছে না বা পায়খানা বন্ধ হয়ে আছে সকল কিছুই কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি জটিল ও অনেক সময় ধরে মানুষকে ভোগায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মানুষের প্রত্যাহিক জীবনে বেশ কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হয়। পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে বা কি খেলে পায়খানা হবে শেষ পর্যন্ত অনেকেই জানেন না।

কোষ্ঠকাঠিন্য লজ্জার বিষয় নয়। আজকালকার যুগে এই রোগটির বেশিরভাগ মানুষই হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ টিম অনেক কারণে হয়ে থাকে তার মধ্যে বেশকিছু ঔষধ আছে যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একজন মানুষের অনেক ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য আমাদের পাকস্থলীর মধ্যেই মল আটকে থাকে এবং কোন কাজেই আমাদের শান্তি অনুভূত হয় না। পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে বা কি খেলে পায়খানা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সূচিপত্রঃ পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে - কি খেলে পায়খানা হবে 

পায়খানা বন্ধ হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য পায়খানা বন্ধ হওয়া দুটো একই জিনিস। সাধারণত ১-২ দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশনের বেগকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। ডাক্তারদের মতে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনি তার এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও মল পরিষ্কার হয় না। মল নরম করতে অনেক সময় রোগী জোলাপ ব্যবহার করে। রোগীরা যত বেশি জোলাপ ব্যবহার করে তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হলো Actilac খুব জনপ্রিয়। ডাক্তাররা বলেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তার সারাই করার পরিবর্তে কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেভাবে চলাই শ্রেয়।

পায়খানা হওয়ার ঘরোয়া উপায়

পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। পায়খানা বন্ধ হলে অনেক ধরনের কৌশল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো পায়খানা হওয়ার ঘরোয়া উপায়। বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকা বা উপায় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলোঃ
  1. লেবু জলঃ লেবুর রসের থাকে ভিটামিন সি যা নিজে একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট। তাই আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ গুলির বাইরে বের করতে লেবুর রসের জুড়ি মেলা ভার। তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলের লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে পেট পরিষ্কার হবে। 
  2. ইসুবগুল পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ইসুবগুল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  3. সকালে তুলসী গাছের পাতা চিবিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে সবচেয়ে বাড়বে হজমশক্তিও।
  4. গবেষণা বলছে যে, অস্ত্রে থাকা জল মল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর এই অ্যালোভেরা যুগ হিসেবে খেলে অস্ত্রের জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হয় তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যালোভেরার জুস যোগ করুন।
  5. 2 চা চামচ মৌরি ও জিরা গুঁড়ো হালকা করে কড়াইয়ে নেড়ে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। আর এটাই তিন-চার ঘন্টা অন্তর অন্তর খান। হজমের সমস্যা কমবে।
  6. সবার বাড়িতেই কিছু না থাক জোয়ান অবশ্যই পাওয়া যাবে। গ্যাসের সমস্যা থাকলে রোজ রাতে জোয়ান খেয়ে জল খেয়ে নিন। গ্যাসের সমস্যা মিটবে।

পায়খানা বন্ধ হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিক্রিয়া

কোষ্ঠকাঠিন্য পায়খানা বন্ধ হওয়া থেকে শরীরে অনেক রোগ হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সাধারণত যেসব রোগ হয় সেগুলো হলো রক্তস্বল্পতা, অবসাদ, অনিদ্রা, চোখে ব্যথা, ক্রমান্বয়ে অলস্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং মনোযোগ কমে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়া, মাথা ঘোরা, কোমর ব্যথা ইত্যাদি। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা যত তীব্র হয় রোগী তত বেশি দুর্বল ও হীনমন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চর্ম রোগ হতে পারে। যেমনঃ-চুলকানি, মুখে ঘা, মেস্তা ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও ক্ষুধামান্দ্য, মুখে দুর্গন্ধ, পেটে গ্যাস ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।

কোষ্ঠকাঠিন্য আপাতদৃষ্টিতে জটিল রোগ না হলেও প্রতিকার না হলে এটি জটিল রূপ নিতে পারে। প্রসাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে সচরাচর যে দুটি সমস্যা হয় তা হল পাইলস ও এনালফিসার। এছাড়া আরও যা হতে পারে তা হলো মানুষের মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিনের-পর-দিন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মালাধার দেহের বাইরে চলে আসতে পারে। যাকে বলা হয় রেক্টাল প্রলেপস। বা হতে পারে এমন যে খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে যেতে পারে বা খাদ্যনালীতে আলসার বা ফুটো তৈরি হতে পারে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য মানুষের মনে প্রচণ্ড চাপ ও অশান্তির সৃষ্টি করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের উৎস

বিভিন্ন কারণে মানুষের দেহে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। ডাক্তারদের মতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সচারাচর উৎস হল আঁশযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া। পানি কম খাওয়া, দুশ্চিন্তার ভোগা, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, মস্তিষ্কের টিউমার ও রক্তক্ষরণ, অস্ত্রনালীতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। এছাড়া ঋতু পরিবর্তন কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সম্ভাবনা বেশি। একইসাথে চর্বিজাতীয় আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য আশঙ্কা বেড়ে যায়। যারা পানি পানে কৃপণ তারাও এই সমস্যায় সহজে আক্রান্ত হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে প্রতিকার

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই লাভের উদ্দেশ্যে অনেকে মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার করে যেমন ল্যাক্সেটিভ। এছাড়াও মলদ্বারের ভেতরে দেওয়ার ওষুধ আছে। ওইসব ঔষধের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগের অভ্যাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল কারণ অপসারণের উপর জোর দেয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ইসুবগুলের ভুষি নামের ইসুবগুল পাওয়া যায় এটি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। আমাদের দেশে গ্রামেগঞ্জে দীর্ঘকাল যাবত এই পদ্ধতিটি চালু রয়েছে। এছাড়াও মিষ্টি পাকা বরই চটকে খোষা বা বিজ ফেলে বা ছেকে অল্প পানি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়। 

তাছাড়াও বেলের শরবত উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শ্বাস প্রতিবারে একগ্লাস পানিতে শরবত তৈরি করে দিনে দুইবার সেবন করতে হয়। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের শরবত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাছাড়াও বুচকি দানাও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী। ২ গ্রাম পাতা চূর্ণ করে রাতে ঘুমানোর সময় গরম পানি অথবা দুধসহ সেবন করতে হবে। এতে খারাপ লাগে দই খাওয়া যেতে পারে।

শেষ কথাঃ পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে - কি খেলে পায়খানা হবে 

পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে সেই সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা খুবই কম। পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে অনেক ধরনের তথ্য রয়েছে এবং উপায় রয়েছে। কি খেলে পায়খানা হবে কি কি করলে পায়খানা হবে সে সম্পর্কে জানতে চাই কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা না হওয়া মানব জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের বড়রা আমাদেরকে অনেক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের জানতে হবে আসলেই কিভাবে পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে।

পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা আমাদের ডাইজেস্ট সমস্যার একটি উদাহরণ মাত্র পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্যই আমাদের আজকের এই নিবেদন। পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে তার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে যেমন ঘরোয়া টোটকা ইত্যাদি। তাছাড়াও পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের বড়দের কাছ থেকেও কিছু কিছু পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা আগেকার দিনে আজকালকার যুগের মত অতটা ঔষধ পাওয়া যেত না। আবার পাওয়া গেলেও তা ছিল দুর্লভ। তাই তারা জানত পায়খানা বন্ধ হলে কি করতে হবে বা কি না করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url