শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের একটি উদযাপিত বিশেষ দিবস। অন্যান্য দিবসের মতো এই দিবসটি ও জাতীয় জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য সকল দিবসের সাথেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় তা বাংলাদেশের সকলেই জানে বলে আশা করা যায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি বিশেষ দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা চেয়েছিল বাংলাদেশ মেধাশূন্য করার জন্য তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে নিয়ে গিয়ে বিজয় ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ই ডিসেম্বর তাদেরকে হত্যা করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় যা হল ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়।
সূচিপত্রঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয়
১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আলবদর, আল সামস বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ,গবেষক, সাংবাদিক কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রক্কালে থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুরে, রায়বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরের তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের পর নিকটাত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন।
অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন,চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। যা থেকে হত্যার পূর্বে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল সে তথ্য বের হয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকা প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন 'নিউজ উইক' - এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, বুদ্ধিজীবী সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ বুদ্ধিজীবী দের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা হয়।
বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ (১৯৯৪) থেকে জানা যায়, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবীর নিহত হয়েছেন। তবে তালিকার অসম্পূর্ণতার কথা ওই একই গ্রন্থের স্বীকার করা হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারিভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। এরপর বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি গঠন হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এ পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চালানি। কার্বন ফরমান আলী লক্ষ্য ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের কে গভর্নর হাউসে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জাহির রায়হান বলেছিলেন, এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র মনস্ক বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত হেনেছে। তবে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান নিখোঁজ হন। তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ।
কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা টির পূর্বেই করা হয় আর এতে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র সংঘ। এ হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন বি.জে আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্নেল তাজ, কর্নেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ডক্টর মোহর আলী, আলবদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা ঘটনায় রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। যাতে আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান কে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের বোন ফরিদা বানু।
১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে ১৪ই ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তার আগে প্রশ্ন হয়েছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় বা হবে যা স্বীকৃতি হিসেবে ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধ টি স্থাপতি ছিলেন মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয় যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নকশা করেন আল সাফি ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকেট সিরিজ প্রকাশ করেছেই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় যা ১৪ ই ডিসেম্বর। সরকারিভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম চূড়ান্ত তালিকা এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে ৬১ জনের একটি তালিকা করেছেন। নিম্নে তা দেওয়া হলঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)
ড. মুনীর চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)
ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)
ড. আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)
ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস)
ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)
ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)
ড. এ এন এম ফায়জুল মাহি (শিক্ষা)
রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)
সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)
ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিভাগ)
এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)
হুমায়ুন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)
এ মুক্তাদির (ভূবিদ্যা)
সরাফত আলী (গণিত)
এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)
অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)
এম এ সাদেক (শিক্ষা)
এম সাদাত আলী (শিক্ষা)
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)
গিয়াসউদ্দিন আহমেদ (ইতিহাস)
রাশিদুল হাসান (ইংরেজি)
এম মুর্তজা (চিকিৎসক)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ড. হাবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)
ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)
মীর আব্দুল কাইয়ুম (মনোবিজ্ঞান)
চিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)
অধ্যাপক ডা. আলীম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)
অধ্যাপক ডা. সামসুদ্দিন আহমেদ
অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী
ডা. হুমায়ুন কবির
ডা. আজহারুল হক
ডা. সোলাইমান খান
ডা. আয়েশা বাদেরা চৌধুরী
ডা. কসির উদ্দিন তালুকদার
ডা. মনসুর আলী
ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা
ডা. মফিজ উদ্দিন খান
ডা. জাহাঙ্গীর
ডা. নুরুল ইমাম
ডা. এস কে লালা
ডা. হেমচন্দ্র বসাক
ডা. ওবায়দুল হক
ডা. আসাদুল হক
ডা. মোসাব্বের আহমেদ
ডা. আজহারুল হক (সহকারীসার্জন)
ডা. মোহাম্মদ শফি (দন্ত চিকিৎসক)
অন্যান্য
শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক)
নিজাম উদ্দিন আহমেদ (সাংবাদিক)
সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক)
সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)
আ ন ম গোলাম মোস্তফা (সাংবাদিক)
আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার)
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)
রণদা প্রসাদ সাহা (সমাজসেবক ও দানবির)
যোগেশচন্দ্র ঘোষ (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ)
জাহির রাইহান (লেখক ও চলচ্চিত্রকার)
মেহেরুন্নেসা (কবি)
ড. আবুল কালাম আজাদ (গণিতজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ)
নাজমুল হক সরকার (আইনজীবী)
নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর গুরুত্ব
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর গুরুত্ব আমাদের বাঙ্গালীদের জীবনে অনেক রয়েছে । কারণ তারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিজয়ের কিছুদিন আগে পরিকল্পনা করে দেশকে মেধাশূন্য করার। তাদের এই পরিকল্পনায় যোগদান করেন বাংলার কিছু বিশ্বাসঘাতক। যারা তাদের বাহিনী বা তাদের দোসর হয়ে এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালায়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে এ দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর ১৪ ই ডিসেম্বর এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উৎসর্গ করে এই দিবসটি পালিত হয়। এই গুণী ছেলেদের মধ্যে ছিল দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান কেউ ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, গীতিকার সুরকার ইত্যাদি তাদের সকলকে পাকিস্তানিদের রোষের মুখে পড়তে হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা খুবই কম। কারণ এই দিনটি সরকারিভাবে কোনো ছুটি দেওয়া হয় না। কিন্তু বেশ সম্মানের সাথে এই দিনটি প্রতিবছর সারাদেশব্যাপী পালিত হয় কারণ এই দিনটিতে আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। তারা চেয়েছিল এদেশের বুদ্ধিকে এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে হত্যা করে তারা এ দেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। তাই তারা যুদ্ধ শেষ হওয়ার ২ দিন আগে যথা ১৪ ই ডিসেম্বর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় তাই আমাদের সেই সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত তাদের সম্মানের জন্য তাদের আত্মত্যাগের জন্য। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় সে সম্পর্কে এই পোষ্টের মাধ্যমে জানা যাবে এবং আপনারা সঠিকভাবে জানতে পারবেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় তা জানা একান্তই প্রয়োজন কারণ যারা আমাদের দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের সম্পর্কেও জানা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় তা জানা আমাদের একান্ত কর্তব্য এবং একে অপরকে জানানো আমাদের কর্তব্য। তাই আমরা আমাদের কর্তব্য থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় সেই সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করছি।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url