রোকেয়া দিবস কবে - বেগম রোকেয়া দিবস কবে

 


প্রাচিন কালথেকে বাঙালি মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে দূরে ছিল। ১৮ শতকের মাঝের দিকে বাঙালি হিন্দু মেয়েরা শিক্ষার আলো দেখলেও মুসলমান মেয়েরা থেকে যায় সেই অন্ধকারে। সেই সময় বাঙালি মুসলমান পরিবারের মেয়েদের রক্ষণশীলতার নামে শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়ে ছিল।

বেগম রোকেয়া যার পুরো নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। বেগম রোকেয়া বাঙালি মুসলমান মেয়েদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে । তিনি প্রথম মুসলমান নারি যে বাঙালি নারিদের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। বেগম রোকিয়ার এই মহান কাজের জন্য তাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে। এবং তার জন্ম দিনটিকে অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সূচিপত্রঃ রোকেয়া দিবস কবে - বেগম রোকেয়া দিবস কবে 

বেগম রোকেয়ার জীবনী 

বেগম রোকেয়া ১৮৮০সালে ৯ ডিসেম্বের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার আন্তগত পাইরাবন্দর গ্রামে। তার পিতা জহীরউদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের একজন শিক্ষি তবুও রকেয়া দমে যাননিত জমিদার ছিলেন।তার মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানি । রোকেয়ার দুই বোন করিমুন্নেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যাই। 

বেগম রোকেয়ার পিতা আবু আলী হায়দার সাবের আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি, এবং ইংরেজি ভাষাই পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু তিনি মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। রোকেয়ার বড় দুই ভাই মোহাম্মাদ ইব্রাহীম আবুল আসাদ সাবের ও খলিলুর রহমান আবু  যায়গাম সাবের ছিলেন বিদ্যানুরাগী। কলকাতা সেন্ট জেভিয়ারস কলেজে অধ্যায় করে তারা আদুনিকমনস্ক হয়ে ওঠেন। রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা ও ছিলেন বিদ্যা উৎসাহী ও সাহিত্য অনুরাগী। বেগম রোকেয়ার শিক্ষালাভ, সাহিত্য চর্চা, এবং সামগ্রিক মূল্যবোধ গঠনে বড় দু ভাই ও বোন করিমুন্নেসা যথেষ্ট অবদান ছিল।
তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা লাভের কোনো সুযোগ ছিল না। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করার সময় মেমশিক্ষকের কাছে একটি তিনি কিছুদিন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজ ও আত্মীয়স্বজনদের সমালোচনার জন্য তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবুও রোকেয়া দমে যাননি। বড় ভাই বোনদের সাহায্যে তিনি বাংলা, আরবি , ফারসি , ইংরেজি ও উর্দু ভাষা আয়ত্ত করেন।

বেগম রোকেয়া দিবস কবে পালিত হয়

বেগম রোকেয়া দিবস বাংলাদেশের সরকারি ভাবে পালিত একটি জাতীয় দিবস। বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার অবদানকে স্মরণ করে তার জন্ম ও মৃত্যু দিন, ৯ ডিসেম্বর, রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় নারীদের বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।

বেগম রকেয়া সাহিত্যিক জীবন

সাহিত্যিক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯০২সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'নভপ্রভা' পত্রিকায় ছাপা হয় ' পিপাসা' বিভিন্ন সময়ে তাঁর রচনার নানা পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে। ১৯০৫ সালে প্রথম ইংরেজি রচনা " sultana's Derime " বা সুলতানার স্বপ্ন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় ছাপা হয়। সবাই তাঁর রচনার পছন্দ করে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

১৮৯৮ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুরের নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তাছাড়াও সমাজ সচেতন, কুসংস্কার মুক্ত এবং প্রগতির দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন। উদার ও মুক্ত মনের অধিকারী স্বামীর উৎসাহী ও সহযোগিতায় রোকেতা দেশি-বিদেশি লেখকদের রচনা সঙ্গে নিবিড় ভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পায় এবং ক্রমশ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে। তার সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত ঘটে স্বামীর অনুপ্রেরণায়।
তবে রোকেয়র বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯০৯ সালের ৩ মে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান।ইতিপূর্বে তাদের দুইটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন এবং অকালে মারা যায়। ১৯০২ সালে পিপাসা নামের একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্য জগতে তাঁর অবদান রাখা শুরু করে। এরপর একে একে লিখে ফেলেন মতিচুরের প্রবন্ধ গল্প এবং সুলতানা স্বপ্নের মতো নারীবাদী বিজ্ঞান কল্পকাহিনী।

বেগম রোকেয়া দিবস কবে

৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাই এই ৯ ডিসেম্বরের বেগুম রকেয়া দিবস উদযাপন করা হয়।

বেগম রোকেয়ার স্বীকৃতি সমূহ

  • বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ২০০৯ সালে 'নারী জাগরণের অগ্রদূত' হিসেবে তার নাম কে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করেন। উল্লেখ্য, নারীর নামে বাংলাদেশের প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি।
  • বেগুম রকেয়া নামে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬০ এর দশকে ছাত্রী নিবাস  'রোকেয়া হল' খোলা হয় আগের নাম ছিল উইমেন্স হল। তবে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৮ সালে চামেলি হাউস নামের প্রথমে হলটি  চালু হয়েছিল। .
  • মহীয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদান কে স্মরণীয় করে রাখতে খুলনা প্রকাশনী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য আবাসিক হল রোকেয়া হল নামকরণ করা হয়। 
  • প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা হয় এবং নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট নারীদেরকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।
  • ১৯৮০ সালে বেগম রোকেয়ার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দুটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে।

শেষ কথাঃ রোকেয়া দিবস কবে - বেগম রোকেয়া দিবস কবে 

বেগম রোকেয়া দিবস কবে রকেয়া দিবস কবে সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। আজ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে বেগম রোকেয়ার জীবনী, সাহিত্যকর্ম ও স্বীকৃতি সমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে জানানোর চেষ্টা করেছি। বেগম রোকেয়া দিবস কবে সেই সম্পর্কে যার জন্য আপনার এই পোস্টটি পড়তে পারেন। আশা করি এর মাধ্যমে আপনারা বেগম রোকেয়া দিবস কবে সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে পারবেন। বেগম রোকেয়া দিবস কবে-রোকেয়া দিবস কবে সেই সম্পর্কে এই পোস্টের মাধ্যমে জানুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url