স্বৈরাচার পতন দিবস - স্বৈরাচার পতন দিবস আজ

 

প্রত্যেক জাতির স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। বাঙালিরা প্রতিবার অধিকারের জন্য সবসময় লড়াই করে আসছে। এটা যেন তাদের সত্তা্র সাথে মিশে আছে। বাঙালি প্রাচীনকাল থেকেই অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে। লড়াই, সংঘাত এবং সাহসিকতার দিক দিয়ে বাঙালি ভৌগলিক দিকের কাছে রিনি।

কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই বাংলাকে প্রায়ই প্রকৃতি দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। এবং এ কারণেই বাংলার মানুষকে এই দুর্যোগ প্রবাহ করে তুলেছে সংগ্রামী। যার কারণে বাঙালি সংগ্রামে প্রতিবাদে কখনোই পিছিয়ে থাকে না। নিজের অধিকারের লড়াই সাহসিকতার সাথে আদায় করে নেয়। তেমনি একটি অধিকারের লড়াই হচ্ছে স্বৈরাচার পতন দিবস। 

সূচিপত্রঃস্বৈরাচার পতন দিবস - স্বৈরাচার পতন দিবস আজ

স্বৈরাচার পতন দিবস কি ?

 স্বৈরাচার পতন দিবস হচ্ছে স্বৈরাচারী প্রতিরোধ দিবস বাংলাদেশের এই দিবসটি ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি আমাদের প্রত্যেক বাঙালির জীবনে আরেকটি অধিকারের লড়াই হিসেবে পরিচিত। কেননা ১৯৮২ সালের তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ১৯৮৩ সালের ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বাংলাদেশের সচিবালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করার কর্মসূচী গ্রহন করে।

আরো পড়ুনঃ ঘর্ষণ বল কাকে বলে - ঘর্ষণ এর প্রকারভেদ - ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা

প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালাই এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে তখন থেকে দিন টিকে স্বৈরাচারী পতন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

স্বৈরাচার পতন দিবস এর পটভূমি

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। এবং বাংলাদেশের সংবিধান রহিত করে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করে। একই সাথে তিনি নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করেন। 

সামরিক আইনে জারিকৃত সব বিধান ও আদেশ কে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করেন। একই বছর এরশাদের শিক্ষা মন্ত্রী ডক্টর মজিদ খান একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে আরবীয় দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা বা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা । এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এবং তারা ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি ছিলঃ
  1. মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল,
  2. সব ছাত্র রাজবন্দী নিঃশর্ত মুক্তি দান,
  3. সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন। এবং বাংলাদেশের সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, ও গুলিবর্ষণ করে। যার ফলে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চন, দিপালী সহ বেশকিছু শিক্ষার্থী নিহত হন। এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত ও গ্রেফতারের শিকার হন। আন্দোলনের মুখে পরবর্তী শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয় ।

স্বৈরাচার পতন দিবস আজ

স্বৈরাচারের পতন দিবস আজ। এই দিনে গণআন্দোলনের মুখে  ১৯৯০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করেন। একই দিনে তিনি অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরমধ্যে অবসান হয় এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনের। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরসাদ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন দুইজনসহ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
বিভিন্ন দল ও সংগঠন দিনটিকে স্বৈরাচার পতন দিবস ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে। এরশাদের দল জাতীয় পার্টি পালন করে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে। এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার। ৩ বছর আগে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে পিঠে 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক', স্বৈরাচার নিপাত যাক। স্লোগান ভিডিও এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে ছিলেন নূর হোসেন। সেদিন জীবন দিতে হয় তাকে।

স্বৈরাচার পতন দিবস এর স্মৃতিচারণ

স্বৈরাচার পতন দিবস এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শহীদ নূর হোসেনের বড় ভাই আলী হোসেন বলেন, সেদিনের কথা মনে করলে আমার কাছে মনে হয় দেশ ভারমুক্ত হয়েছে। দেশে যে একটা কালো মেঘ ছিল সেটা চলে গেছে। ঐদিন ভাই হারানোর দুঃখের মাঝেও একদিক দিয়ে আমার মনে একটু স্বস্তি ছিল। আমি ঢাকার রাস্তায় হেঁটে বেরিয়েছি। যেদিন স্বৈরাচারের পতন হয় সেদিন আমার পরিবার দুঃখের মধ্যে এক ধরনের প্রাপ্তি অনুভব করেছে। আলী হোসেন বলেন, নূর হোসেনের মৃত্যুর পর এরশাদ সরকারের আমলে ভাইয়ের লাশ খুঁজে বেড়িয়েছি। বাবাকে নিয়ে আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। এক মাস পর্যন্ত কোথাও ভাইয়ের লাশ পেলাম না। পরে খবর পাই জুরাইন কবরস্থানের কবর খোদঅদের কাছ থেকে। জানতে পারি যে সেখানে আমার ভাইকে দাফন করা হয়েছে।

স্বৈরাচার পতন দিবস আজকের যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই, এদেশে যেন সেরকম আর কোন স্বৈরাচার না আসে। সবাই যেন সুখ-দুঃখ একসঙ্গে থাকতে পারে। আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি। আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়।

আলী হোসেন আরো বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শুধু আমার ভাই একাই তো জীবন দেয়নি আরো বহু মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্তির এই সফলতা এসেছে। নূর হোসেন, বসুনিয়া বাবুল অনেক যুবক সেসময় প্রাণ দিয়েছে। এইসব ঘটনার বিচার আমরা আজও চাই। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ নূর হোসেনের বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জানিয়ে আলী হোসেন বলেন, এরশাদ জেলখানা থেকে বেরিয়ে প্রথমে আমাদের বাসায় আসেন। তিনি বলেছিলেন আপনার ছেলে মারা গেছে আমি সে জন্য অনুতপ্ত এবং ক্ষমা চাই। আমি আপনার ছেলে হয়ে সারা জীবন বাঁচতে চাই।

২০১৯ সালের২৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। শহীদ নূর হোসেনের মাসহ পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে থাকেন মিরপুরের মাজার রোডে। এর আগে তারা রাজধানীর নবাবপুরের বনগ্রামে থাকতেন। নূর হোসেনের বাবা মারা গেছেন ২০০৫ সালে।

হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসন আমল

হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর দেশ পরিচালনা কে অনেকেই সামরিক একনায়কতন্ত্রের সাথে তুলনা করে। তিনি জাতীয় পার্টির নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশকিছু উপদলে বিভক্ত হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর - ৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করেন তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থন এর অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

শেষ কথাঃ স্বৈরাচার পতন দিবস - স্বৈরাচার পতন দিবস আজ

স্বৈরাচার পতন দিবস হচ্ছে বাঙালি জাতির আরেকটি অধিকার এর লড়াই যে লড়াই বাঙালিরা। আদিম যুগ থেকে আসছে। কারণ বাঙালি প্রত্যেক সময় তার অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে এবং স্বৈরাচার পতন দিবস তার একটি অধিকারের লড়াই এর উদাহরণ। এই বঙ্গদেশে অধিকারের লড়াই আসছে সেই আদিম যুগ থেকে কারণ এদেশে যুগ যুগ ধরে অবিচার অনাচার ও অত্যাচার হয়ে আসছে বাঙালির উপরে তাই তারা হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী তার একটি উদাহরণ স্বৈরাচার পতন দিবস। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচার পতন দিবস সম্পর্কে জানতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url