কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায় থেকে আমরা কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি সর্ম্পকে জেনে নিই। কাজ বলতে আমরা কোনো কিছূ করাকে বুঝে থাকি কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কাজ বলতে কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বন্তুটির সরণ ঘটে তাহলে তাকে কাজ ধরা হয়। কোনো ব্যাক্তি যদি সারাদিন একখন্ড পাথরের উপর বল প্রয়োগ করে আর পাথরটির কোনো অবস্থার পরিবর্তন না হয় তাহলে তাকে কাজ বলা যাবে না। অর্থাৎ বল প্রয়োগে যদি বস্তুর সরণ না ঘটে তবে তার দ্বারা কোনো কাজ হয় নি।
ক্ষমতা বলতে আমরা জানি পাওয়ার অর্থাৎ এখানে কার কত পাওয়ার সেটাকে বুঝানো হয় । কোনো ব্যক্তি বা উৎস একক সময়ে যে কাজ করতে পারে তাকে ক্ষমতা বলে। একক সময়ের মোট কাজই হচ্ছে ক্ষমতা। মোট কাজকে সময় দ্বারা ভাগ করলে ক্ষমতা পাওয়া যায়।
শক্তি বলতে কোনো ব্যাক্তি বা বস্তু কাজ করার সমার্থকে বুঝানো হয় । একটি বস্তু এই শক্তি আপেক্ষিক বা পারিপার্শ্বিক অবস্থানের সাপেক্ষে অর্জন করতে পারে। বিশেষ অবস্থায় বস্তু মোট যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে তা দ্বারাই শক্তি পরিমাপ করা যায়। যে বস্তুর কাজ করার সামর্থ্য যত বেশি তার শক্তিও তত বেশি। অতএব আমরা বলতে পারি কাজ শক্তির েমাপকাঠি। আমরা শক্তির নয়টি রূপ দেখতেপাই । যেমন- যান্ত্রিক শক্তি, শব্দ শক্তি, তাপ শক্তি, চৌম্বক শক্তি, আলোক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, সৌর শক্তি, বিদুৎ শক্তি, পারমাণবিক শক্তি। এসব আমরা কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি হতে আলোচনা করলাম।
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায়ের সূচিপত্র
- কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকার সংজ্ঞা
- শক্তির বিভিন্ন রূপ, গতিশক্তি ও বিভব শক্তি
- শক্তির বিভিন্ন উৎস
- শক্তির নিত্যতা এবৎ রূপান্তর
- ক্ষমতা, কার্মদক্ষতা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে শক্তির ব্যবহার
- কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি কোর্সের ভিডিও
- কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্রসমূহ
- শেষ কথাঃ কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকার সংজ্ঞা
- কাজের সংজ্ঞাঃ কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগে যদি বস্তুর সরণ ঘটে তা হল বল এবং বলের দিকের সরণেল উপাংশের গুণফল হলো কাজ। কাজকে W দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
- কাজঃ কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং বলের দিকে বস্তুর অতিক্রান্ত দূরত্বের গুণফল দ্বারা কাজ পরিমাপ করা হয়।
- শূন্য কাজ ঃ বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তুর সরণ না ঘটে বা বলের উলম্ব অভিমুখে সরে যায় তবে তাকে বলের দ্বারা শূন্য কাজ বুঝায়।
- বলের দ্বারা কাজঃ বল প্রয়োগের ফলে বন্ত যদি বলের দিকে সরে যায়, তাহলে সেই কাজকে বলের দ্বারা কাজ বলে। উদাহরণ ঃ কোনো গতিশীল ফুটবলে উপর যদি আমরা বল প্রয়োগ করি তাহলে ফুটবলটি বলের দিকেই সরে যাবে। এক্ষেত্রে বলে দ্বারা কাজ বুঝানো হলো।
- বলের বিরুদ্ধে কাজঃ যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তু বলের বিপরীত দিকে সরে যায়, তাহলে সেই কাজকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বলে। উদাহরণঃ আমরা যদি কোনো বস্তুকে মাটি হতে উপরে উঠায় তাহলে অর্ভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে বস্তুকে সরানো হলো অতএব বলের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে।
- বিভব শক্তি বা স্থিতিশক্তিঃ কোনো বস্তুকে স্বাভাবিক অবস্থা বা অবস্থান থেকে পরিবর্তন করে অন্য কোনো অবস্থা বা অবস্থানে আনলে বস্তু কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে, তাকে ঐ বস্তুর বিভব শক্তি বা স্থিতিশক্তি বলে।
- গতিশক্তি কাকে বলেঃ কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য যে কাজ করার সমার্থ লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে।
- যান্ত্রিক শক্তিঃ কোনো বস্তুর অবস্থান বা গতির কারণে তার মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে, তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে ।
- অভিকর্ষজ বিভব শক্তিঃ অভিকর্ষ বলের বিপরীতে কোনো বস্তুকে স্বাভাবিক অবস্থান হতে উপরে তোলা হলে বস্তু কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে, তাকে অভির্ষজ বিভব শক্তি বলে।
- নিউক্লিয় শক্তিঃ উচ্চ গতিসম্পন্ন নিউট্রন কণিকা কোনো নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে নিউক্লিয়াসটি ভাঙলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় বা দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে একত্রে যুক্ত করতে যে পরিমাণ শক্তি ব্যয় হয় তাকে নিউক্লিয় শক্তি বলে ।
- কিলোওয়াট-ঘন্টাঃ কিলোওয়াট-ঘন্টা কাজ বা শক্তির একটি একক। এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো যন্ত্র এক ঘন্টা ধরে কাজ করলে যে শক্তি ব্যয় হয়, তাই এক কিলোওয়াট ঘণ্টা।
- কর্মদক্ষতাঃ কোনো যন্ত্রের লভ্য কার্ষকর শক্তি ও মোট প্রদত্ত শক্তির অনুপাতকে এ যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলে।
- শক্তির নিত্যতা সূত্রঃ শক্তি অবিনশ্বর, এর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। এটি কেবল একরূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। এ মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
- ক্ষমতা ঃ কোনো ব্যক্তি বা উৎস একক সময়ে যে পরিমাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে তাকে ঐ ব্যাক্তি বা উৎসের ক্ষমতা বলে। অর্থাৎ একক সময়ে মোট কাজকে ক্ষমতা বলা হয়।
- অশ্ব ক্ষমতা ঃ প্রতি সেকেন্ডে 746 ওয়াট কাজ করার ক্ষমতাকে এক অশ্বক্ষমতা বলে।
উপরক্ত সকল সংজ্ঞা কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায় হতে। আমরা যাতে কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি এর সকল সংজ্ঞা মনে রাখতে পারি বা পড়া করার করার জন্য সকল সংজ্ঞাগুলো একত্রে দেওয়া হলো। কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি অধ্যায়ের এই সব সংজ্ঞা বিভিন্ন পরিক্ষায় আসার সম্ভাবনা।
কাজ ও শক্তি
- কাজ = বল ও বলের দিকে অতিক্রান্ত দূরত্ব।
- কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বস্তুটির বলের দিকে ও সরণ হয় তবে তাকে বলে -- কৃতকাজ ।
- বল প্রয়োগে বলের দিকে বস্তুর সরণের উপাংশ না থাকলে কৃতকাজের পরিমান -- শূন্য।
- বলের দিকে সরণ হলে কাজ হয় -- ধণাত্মক ।
- বলের বিপরীতে সরণ হলে কাজ হয় -- ঋণাত্মক ।
- দুটি ভেক্টর রাশির বল এবং সরণ এর স্কেলার গুণফল হচ্ছে -- কাজ।
- কাজের মাত্রা -- ML^2T^-2
- কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে।
- বল প্রয়োগের ফলে বস্ত যদি বলের দিকে সরে যায় তাহলে তা হলো -- বলের দ্বারা কাজ।
- বল প্রয়োগের ফলে বস্তু যদি বলের বিপরীত দিকে সরে যায় তবে তাকে বলে -- বলের বিরুদ্ধে কাজ।
- কোনো বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তটির বলের দিকে এক মিটার সরণ হয়, তবে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এক জুল বলে।
- কাজের একক জুল।
- কাজের একক নিউটন মিটার এর অপর নাম -- জুল।
- কাজ ও শক্তির মাত্রা এবং একক -- একই ।
- যে সমস্ত শক্তি নতুনভাবে সৃষ্টি করা যায় না তাদেরকে বলা হয় -- অনবায়নযোগ্য শক্তি ।
- সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে বলে -- সৌরশক্তি।
শক্তির বিভিন্ন রূপ, গতিশক্তি ও বিভব শক্তি
- পানির বিভবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাকে বলা হয়-- জলবিদ্যুৎ।
- ভূ-অভ্যন্তরের গভীরে অত্যধিক তাপের গলিত শিলাখশুই -- ম্যাগমা।
- বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালাতে প্রয়োজন-- বিদ্যুৎশক্তি।
- শক্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপ -- যান্ত্রিক শক্তি।
- যান্ত্রিক শক্তি -- ২ প্রকার।
- বিভব শক্তি ও গতিশক্তিকে একত্রে বলা হয় -- যান্ত্রিক শক্তি।
- কোনো বস্তুর অবস্থানের জন্য জমা কৃত শক্তিই -- বিভব শক্তি।
- বস্তুকে সচল রাখে -- গতিশক্তি।
- বস্তুর গতির কারণে বস্তুতে যে শক্তি সৃষ্টি হয় তা হলো -- গতিশক্তি।
- গতিবেগ পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ হলে গতিশক্তি হয় -- চার গুন।
শক্তির বিভিন্ন উৎস
- একটি দেশ কত টা উন্নত তা বুঝা যায় ঐ দেশের মাথাপিছু বিদুৎ ব্যবহারের দ্বারা।
- শক্তির উৎস মূলত -- ২ প্রকার ।
- প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান -- মিথেন।
- নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদনে ব্যবহত জ্বালানি -- ইউরেনিয়াম।
- পৃথিবীর সব মানুষের ব্যবহৃত শক্তির মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ -- ২০%।
- সূর্য থেকে আসা আলো ভূপৃষ্ঠের প্রতি বর্গ কিমি এলাকায় তাপশক্তি উৎপাদন করে -- হাজার মেগাওয়াট ।
- বায়ু বিদুৎতের টারবাইন খুব প্রচলিত -- ইউরোপে ।
- বায়োফুয়েল ব্যাপকহারে ব্যবহত হচ্ছে -- ব্রাজিলে।
- কার্বন ডাইঅক্সইড এবং সালফাল ডাইঅক্সইড হলো -- গ্রিনহাউজ গ্যাস।
- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপ ধরে রাখতে পারে -- কার্বন ডাইঅক্সইড।
শক্তির নিত্যতা এবৎ রূপান্তর
- দৈনন্দিন জীবনে আমরা চারপাশে যে শক্তি দেখি তা -- অবিনশ্বর ।
- শক্তির কোনো ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই এটি হলো শক্তির -- নিত্যতা সূত্র।
- সবচেয়ে সহজে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তর করা যায় -- বিদ্যুৎশক্তিকে।
- এলইডি তে বিদ্যুৎশক্তি রূপান্তরিত হয়-- যান্ত্রিক শক্তিতে।
- ইঞ্জিনে রাসায়নিক শক্তি রাপাস্তরিত হয় --যান্ত্রিক শক্তিতে ।
- দুটি ভিন্ন ধাতব পদার্থের সংযোগস্থলে তাপ প্রয়োগ করলে তাপশক্তি রূপান্তরিত হয় -- তড়িৎ শক্তিতে ।
- সরাসরি আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি কর হয় -- সোলার সেলে।
- ফটোগাফিক প্লেটের ওপর আলোক ক্রিয়ার ফলে আলোকশক্তি রূপান্তরিত হয় -- রাসায়নিক শক্তিতে ।
- ভর শক্তি রূপান্তরের সমীকরণটি হলো -- E=mc^2
- টরবাইনের সাহায্যে তাগশল্তিকে রূপান্তর করা হয় -- গতিশক্তিতে।
ক্ষমতা, কার্মদক্ষতা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে শক্তির ব্যবহার
- কাজ করার হারই হচ্ছে -- ক্ষমতা।
- ক্ষমতা একটি --ক্ষেলার রাশি ।
- ক্ষমতার মাত্রা-- [ML^2T^-3]
- ক্ষমতার একক -- ওয়াট।
- এক অশ্বক্ষমতা -- ৭৪৬ ওয়াট।
- ওয়াট ঘণ্টা সমান -- 3600 জুল।
- কৃতকাজের অনুপাত এবং প্রদত্ত শক্তির অনুপাতই হলো -- কর্মদক্ষতা ।
- কর্মদক্ষতার একক-- নেই।
- এক মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে না -- হাসপাতালে ।
অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url