বল - বল কাকে বলে - বলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 

আমরা বল বলতে ধাক্কা বুঝে থাকি। ধাক্কার মাধ্যেমে আমরা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। কারণ বস্তুর জড়তার ধর্মের জন্য স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। একটি স্থির বস্তুকে গতিশীল করার প্রয়োজনে ধাক্কা দিতে হয় এবং সে গতিশীল নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করে বস্তুটির ভর ও আপেক্ষিক অবস্থা ও ধাক্কার উপর।

আবার কোনো গতিশীল বস্তকে স্থির করতে চেইলে গতির বিপরীত দিক থেকে ধাক্কা দিতে হয়।তবে বিপরীত দিক থেকে ধাক্কা দিলেও বস্তুটি স্থির নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করে বস্তুটির ভর ও আপেক্ষিক অবস্থা ও ধাক্কার উপর। অতএব আমরা দেখ পাই, ধাক্কার জন্য স্থিরতা ও গতিশীলতার পরিবর্তন ঘটে বা ঘটাতে চাই । বস্তু নিজে নিজে তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না । এই ধাক্কাকেই আমরা বল বলি। 

বলের অধ্যায়ের সূচিপত্র

    বলের সংজ্ঞা | বল কাকে বলে

    বলের সংজ্ঞা ঃ  যা কোনো স্থির বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে বস্তুটিকে গতিশীল করে বা করতে চাই এবং গতিশীল বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে বস্তুটিকে স্থির করে বা করতে চায় বা গতিশীল বস্তুর অভিমুখে পরিবর্তন করে তাকে বলা বলা হয় ।

    বলের বৈশিষ্ট্য 

    • বল দ্বারা গতিশীল বস্তুকে স্থির বা স্থির বস্তুকে গতিশীল ঘটাতে পারে।
    • বল দুটি বস্তুর ক্রিয়া ছাড়া সৃষ্টি হয় না। 
    • বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর আকারের পরিবর্তন হতে পারে। 
    • বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর দিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
    • বল সব সময় জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া সম্পাদন করে।
    • বলের মাত্রা ও দিক দিুটাই আছে। 

    বলের প্রকারভেদ

    বল সাধারণত দুই প্রকার

    • মৌলিক বল 
    • যৌগিক বল

    মৌলিক বলঃ  যে সকল বল মূল বা অকৃত্রিম বা অন্য কোনো বল হতে এদের উৎপত্তি হয় না বরং অন্য সকল বল এই বলের প্রকাশ তাকে মৌলিক বল বলে। 

    যৌগিক বলঃ মৌলিক বল ব্যাতীত সকল বলকে বলা হয় যৌগিক বল। অর্থাৎ যে সকল বল উৎপত্তিতে মৌলিক বলের প্রয়োজন হয় সে সকল বলকে যৌগিক বল বলে। 

    মৌলিক বল চার প্রকার 

    • মহাকর্ষ বল (Gravitational force)
    • তড়িৎ চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)
    • সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force)
    • দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear  force)

    বলের অধ্যায় থেকে টপিক ভিত্তিক কিছূ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা জ্ঞানকে বিকাশিত করবে।

    বল

    • কোনো বস্তুর গতি বা স্থিতি অবস্থার পরিবর্তন ঘটে -- বলের বাহ্যিক কারণে।
    • কোনো বল ও বলের ক্রিয়াকালের গুণফলকে বলা হয় -- বলের ঘাত।
    • অতি অল্প সময় ধরে প্রচণ্ড মানের কোনো বল বস্তর উপর ক্রিয়াশীল থাকলে সে বল কে বলা হয় -- ঘাত বল।
    • যে সকল বল অন্য কোনো বল থেকে উৎপন্ন হয় না, বরং অন্যান্য বল এসব বলের কোনো না কোনো রূপের প্রকাশ তা হলো-- মৌলিক বল।
    • পরস্পরের সাপেক্ষে স্থির বা গতিশীল দুটি তড়িৎ চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল অস্পর্শ. বলই হচ্ছে-- তড়িৎ চৌম্বক বল। 
    • চুম্বকের দুই মেরু অথবা একটি চুম্বক এবং একটি  গতিশীল তড়িৎ চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল অস্পর্শ. বলবে বলা হয় -- তড়িৎ চৌম্বক বল।
    • সবচেয়ে শক্তিশালী যে মৌলিক বল নিউক্রিয়নসমূহকে একত্র করে রাখে তাকে বলা হয় -- সবল নিউক্লিয় বল ।
    • নিউক্লিয়াসে বিটাক্ষয়জনিত কারণে উদ্ভত যে স্বল্প পাল্লার এবং স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ মৌলিক কণাগুলোর মধ্যে ক্রিয়া করে তাকে বলা হয়-- দুর্বল নিউক্লিয় বল ।
    • কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়ারত একাধিক বলের লব্ধি যদি শূন্য না হয় বা কোনো নির্দিষ্ট দিকে বস্তটির ত্বরণ থাকে তাহলে সে সকল বলকে- - অসাম্য বল ।
    • যে সব বলের কারণে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয় সে সকল বলকে-- সাম্যবল বলে।
    • কোনো বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকে বলা হয় -- ভরবেগ ।
    • ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রটি হলো-- “যখন কোনো ব্যবস্থার উপর প্রযুক্ত নিট বাহ্যিক বল শূন্য হয়, তখন ব্যবস্থাটির মোট ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে” ।
    • যে পরিমাণ বল 1kg  ভরের বস্তুর উপর ক্রিয়া করে 1ms^-2 ত্বরণ সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় -- ১ নিউটন বল। 
    • কোনো বস্তু যদি যে অবস্থায় আছে চিরকাল সে অবস্থা থাকতে চাই বা  সে অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে বলা হয় --  জড়তা ।
    • কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে বলা হয় -- মাধ্যাকর্ষণ বল ।
    • মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে বলা হয়  -- মহাকর্ষ বল ।
    • কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল না থাকলে তাকে বলা হয় -- ওজনহীনতা।
    • কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল থাকলেও তা প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়ার অভাবে  অনুভূত না হলে তাকে বরা হয় -- ওজনহীনতা।
    • দুটি বস্তু পরস্পর যদি স্থির অবস্থায় থেকে একটি বস্তুর অপর একটি  বস্তুর উপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করে বা চলতে থাকে তখন বস্তুদ্বয়ের সংস্পর্শ তলে গতির বিরুদ্ধে যে বাধা সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় -- ঘর্ষণ । 
    • যখন কোনো বস্তু তরল বা বায়বীয় পদার্থের ভেতর দিয়ে যায় তখন এর গতির বিপরীতে যে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় -- প্রবাহী ঘর্ষণ।
    • একাধিক বস্তু যদি একে অন্যের সাপেক্ষে স্থির থাকা অবস্থায় যে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় --স্থিতি ঘর্ষণ ।

    নিউটনের গতির সূত্র সমূহ 

    প্রথম সুত্রঃ বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সুষম দ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে ।

     দ্বিতীয় সূত্রঃ কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।

    তৃতীয় সূত্রঃ প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

    জড়তা এবং বলের ধারণা (নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে) ঃ

    • স্থির বস্তু স্থির থাকতে চাওয়া ও গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই হচ্ছে -- জড়তা।
    • জড়তা দুই প্রকার -- স্থিতি জড়তা ও গতি জড়তা ।
    • বস্তুর ভর হচ্ছে --জড়তার পরিমাপ।
    • ভর কম হলে জড়তাও কম, ভর বেশি হলে জড়তাও -- বেশি হবে।
    • যা প্রয়োগে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় তাকে বলা হয়--বল। 
    • বল দুই ধরনের হয়ে থাকে -- স্পর্শ বল ও অস্পর্শ বল।
    • দুটি বস্তুর মধ্যে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তা হলো -- অস্পর্শ বল।
    • মহাকর্ষ, তাড়িত বল, চৌম্বক বল --অস্পর্শ বল।

    বস্তুর গতির উপর বলের প্রভাব (নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র) ঃ

    • বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে সৃষ্টি হয় -- ত্বরণ।
    • নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র -- বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল ও ত্বরণের সর্ম্পক।
    • নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র -- F = ma ।
    • নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় -- মহাকর্ষ বলের কারণে সূর্য কে ঘিরে ঘুরতে থাকা গ্রহদের গতিতত্ত্ব।  
    • বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের --সমানুপাতিক।
    •  এক কেজি ভরের কোনো বস্তুর উপর যে পরিমান বল ক্রিয়া করে এক মিটার পার সেকেন্ড ইকোয়ার ত্বরণ সৃস্টি হয় তা হলো -- এক নিউটন। 
    • বলের মাত্রা -- MLT^-2 ।
    • বলের ঘাত হলো- ভরবেগের পরিবর্তন।
    • বলের মানকে ভর দ্বারা ভাগ করলে পাওয়া যায় -- ত্বরণ।

    নিউটনের তৃতীয় সূত্র 

    • নিউটনের তৃতীয় সূত্র -- প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
    • নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কারণে -- নৌকা থেকে লাফ দিলে নৌকা পিছনের দিকে ছুটে খায়।
    • নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কারণে -- রকেট ও জেট বিমান চালানো সম্ভব হয়। 
    • একটি ভরকে পৃথিবী যেমন আকর্ষণ করে, ভরটিও পৃথিবীকে সেই একই বলে -- আকর্ষণ করে।
    • হাঁটার সময় পা দিয়ে যখন মাটিকে ধাক্কা দেওয়া হয় তখন মাটি ও মানুষটিকে -- পাল্টা ধাক্কা দেয়। 
    • মাটির দেয়া সমান এবং বিপরীত বলের কারণে আমাদের হাঁটার সময় সৃষ্টি হয়--ত্বরণ।
    • শক্ত মাটিতে হাঁটা সোজা কিন্ত ঝুরঝুরে বালুর উপর হাটা -- কঠিন কাজ।
    • মসৃণ পৃষ্ঠতলে বিপরীত বল না পাওয়ায় সেখানে হাঁটা -- প্রায় অসম্ভব।
    • যতক্ষন ক্রিয়াবল থাকবে, ততক্ষন থাকবে -- প্রতিক্রিয়া বল। 

    ভরবেগ

    • ভর ও বেগের গুণফলকে বলা হয় -- ভরবেগ।
    • গতিশীল বস্তুর ভরবেগের দিক বেগের দিক -- একই দিক হয়।
    • আলোর কণা বা ফোটনের কোনো ভর না থাকলে ও এর আছে -- ভরবেগ।
    • ঋণাত্মক ভরবেগ দ্বারা বুঝায় বস্তর বেগের বিপরীতে পরিবর্তন হযেছে --ভরবেগ।
    • সমভরের দুটি গতিশীল বস্তুর মধ্যে যার বেগ বেশি হবে তার --ভরবেগও বেশি হবে।
    • ভরবেগ একটি -- ভেষ্টর রাশি।
    • বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের --সমানুপাতিক।
    • ভরবেগের একক -- kgms^-1 ।
    • ভরবেগের মাত্রা -- MLT^-1।

    মহাকর্ষ বল

    • মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তর মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষন বলের মান, তাদের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
    • ভরবিশিষ্ট যে কোনো দুটি বস্তর মধ্যকার আকর্ষণ বল মহাকর্ষ বল।
    • মহাকতীয়ি ধ্রুবক  G এর মান --  6.67 * 10^-11 NM^2kg^-2 ।
    • G এর মাত্রা -- M^-1L^3T^-2
    • পৃথিবীর ব্যাসার্ধ -- 6400 km (প্রায়)।
    • পৃথিবীর ভর -- 5.98 * 10^24 kg 
    • পৃথিবী ও অপর একটি বস্তর মধ্যে ক্রিয়াশীল মাধ্যকর্ষণ বলের জন্য যে ত্বরণ হয় তাকে বলা হয় --অভিকর্ষজ ত্বরণ ।

    ঘর্ষণ বল

    • দুটি তলের অনিয়মিত প্রকৃতিক ফল হলো-- ঘর্ষণ।
    • ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে বস্তর গতির- বিপরীতে ।
    • বস্তুর ওজন বৃদ্ধি পেলে ঘর্ষণ বল- বৃদ্ধি পাবে।
    • তলদ্বয়ের খাঁজগুলো আটকে যাওয়ার ফলে উদ্ভব ঘটে--ঘর্ষণের ।
    • ঘর্ষণ বল-- ৪ প্রকার।
    • দুটি তলের একটি অপরটির সংস্পর্শে থেকে গতিশীল না হলে এদের মধ্যে উদ্ভব ঘটে -- স্থিতি ঘর্ষণের।।
    • একটি তল অপর একটি তলের উপর দিয়ে পিছলিয়ে বা হুড়কিয়ে চললে উদ্ভব ঘটে -- গতীয় ঘর্ষণের।
    • যখন কোনো গোলাকার বস্তু একটি তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, তখন উত্তব ঘটে -- আবর্ত ঘর্ষণের।
    • বল বিয়ারিং-এর মধ্যে ক্রিয়া করে_ আবর্ত ঘর্ষণ।
    • পরবাহীর মধ্য দিয়ে গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে -- প্রবাহী ঘর্ষণ।

    রেমিডিয়াল কোর্স এর ভিডিও 

    ক্লাস -০১

    ক্লাস -০২

    ক্লাস -০৩

    ক্লাস -০৪

    ক্লাস -০৫

    ক্লাস- ০৬

    শেষ কথা ঃ বল - বল কাকে বলে - বলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

    উপরক্ত সকল আলোচনা বল অধ্যায় থেকে । এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । যা আমাদের জ্ঞানের বিকাশিত করবে এবং অনেক পরিক্ষাকে সহজ করে তুলবে। বিশেষ করে যারা আরন্স এর শিক্ষার্থী কিন্তু   ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই । তাদের জন্য রেমিডিয়াল কোর্স সম্পর্ণ করতে হয় । যা এই আলোচনা থেকে রেমিডিয়াল কোর্স  করতে সহায়তা করবে। বল অধ্যায় থেকে সকল আলোচনা রেমিডিয়াল কোর্স নিয়ে।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি সিসি’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url